• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

৪৮ বছরের পুরোনো ওয়্যারিংয়ে চলছে রমেক হাসপাতাল

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারি ২০২২  

প্রায় ৪৮ বছর আগের ওয়্যারিং দিয়ে চলছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের জন্য স্থাপিত আধুনিক যন্ত্রপাতির লোড নিতে না পারায় সেখানে ঘটছে ছোট বড় অগ্নিকান্ডের ঘটনা। এছাড়াও হাসপাতালে রয়েছে মাত্রা অতিরিক্ত ৩শ’ এয়ার কন্ডিশন। 
বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলীরা বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের কারণে অগ্নিকান্ডের জন্য মাত্রা অতিরিক্ত এয়ার কন্ডিশনের ব্যবহারকেও দূষছেন। এ কারণে প্রায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটসহ ঘটছে অগ্নিসংযোগ। গত এক মাসে দুই দফা অগ্নি-সংযোগের ঘটনা ঘটেছে হাসপালটিতে। 

১৯৭৩ সালে ৫০০ শয্যার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্যক্রম চালু হয়। এ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য পুরো হাসপাতালটি ওয়্যারিং করা হয়। পাশেই বসানো হয় ১ হাজার ২৫০ কেভিএ (কিলোভোল্ট অ্যাম্পিয়ার) বিদ্যুৎ। এরপর আরো একটি ১২৫০ কেভিএ এবং ৫০০ কেভিএ জেনারেটর স্থাপন করা হয়। 

হাসপাতালের এই বিদ্যুতের সংযোগ সংস্কারে মন্ত্রণালয়ে অর্থ চেয়ে পত্র পাঠালেও পর্যাপ্ত অর্থ পাচ্ছে না হাসপাতালটি। ফলে যেকোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।

হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাসপাতালের পরিধি বৃদ্ধি, ভারি যন্ত্রপাতি স্থাপন, এসির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পুরোনো ওয়ারিং করা বিদ্যুতের সংযোগ লোড নিতে পারছে না। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ৫শ’ বেড থেকে ১ হাজার বেডে উন্নীত করা হয় হাসপাতালটি। বিদ্যুতের ব্যবহার বহুগুণে বৃদ্ধি পেলেও সংযোগের ওয়্যারিং আছে সেই আগের মতোই। 

রংপুর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে গত তিন বছরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিদ্যুতের নড়বড়ে সংযোগ থেকেই ছোট-বড় ১০টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে বেশি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে গাইনি ওয়ার্ডে। সর্বশেষ গত শনিবার মধ্যরাতে হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে বিদ্যুতের মেইন ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ডে (এমডিবি) অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। 

এই বোর্ডে অগ্নিসংযোগ কীভাবে ঘটলো তা ঠিক করে বলতে না পারলেও গণপূর্ত বিভাগ ধারণা করছে, সংযোগের উপর বাড়তি লোড পড়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্ত বিভাগের এক প্রকৌশলী জানান, হাসপাতালে তিনশ’র বেশি কক্ষে এসি ব্যবহার করা হচ্ছে। যেটি গণপূর্ত বিভাগের অনুমোদিত নয়। এমনকি এসব এসির ৯০ ভাগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করেনি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির পক্ষ থেকে এসব এসি চিকিৎসকদের উপটৌকন হিসেবে দেওয়া হয়েছে। যা গণপূর্ত বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই নিজস্ব ব্যবস্থপনা কক্ষে লাগানো হয়েছে।

এছাড়াও হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে ভারি যন্ত্রপাতি স্থাপন, এক্স-রে মেশিন বসানো হয়েছে। এসব মেশিন বসাতে হলেও গণপূর্ত থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এরপর তাদের মাধ্যমে এসব স্থাপন করতে হয়। কারণ, কোথায় বিদ্যুতের কী সংযোগ রয়েছে সেটা একমাত্র গণপূর্তের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাই বলতে পারবেন। কিন্তু সেটাও করা হয় না। এ কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং অগ্নিসংযোগ ঘটছে।

রংপুর গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাজিয়া সুলতানা জানান, বিদ্যুতের সংযোগগুলো পুরোনো হওয়ায় ওভার লোড নিতে পারছে না সংযোগগুলো। সে কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকছে। এছাড়াও যেসব এসি এবং ভারি যন্ত্র বসানো হয় তা অনেক সময় আমাদের জানার বাইরে। এসব সংযোগ দেওয়ার জন্য আমাদের জানালে সেটা বলতে পারতাম কোথাও কীভাবে লাগাতে হবে এবং কোনো সংযোগ সেটার লোড নিতে পারবে কিনা।

এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল করিম জানান, সংস্কার প্রয়োজন, প্রতি বছর কিছু কিছু হয় কিন্তু যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু হচ্ছে না। আমি গণপূর্ত বিভাগকে হাসপাতালের যে বৈদ্যুতিক সাপ্লাই সিস্টেম রয়েছে সেগুলোর পুরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটা রিপোর্ট দিতে বলেছি। 

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –