• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রংপুরে পদ্মা সেতুর ‘প্রতীকী’ অবকাঠামো প্রদর্শন

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২২  

সকাল থেকেই হাজারো মানুষের ভিড়ে মুখরিত রংপুর টাউন হল চত্বর। তখন ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ৮টার কাছাকাছি। নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শত শত শিক্ষার্থীর জমায়েত চত্বরজুড়ে। বাদ যায়নি সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুরাগীসহ সচেতন মহলের পদচারণা। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে সেখানে।

ঘড়ির কাঁটা ৯টা ছুঁয়ে যেতেই রোভার স্কাউটের কয়েকজন শিক্ষার্থী হাতে হাত রেখে ঐক্যের বন্ধনে সৃষ্টি বিস্ময়কর স্থাপনা ‘পদ্মা সেতু’ নিয়ে হাজির হন। তখন সবার নজর পড়ে পদ্মা সেতুর ‘প্রতীকী’ অবকাঠামোর দিকে। যেন মুহূর্তের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতিতে উদ্বেলিত হয় মন। বাংলাদেশের সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার বহিঃপ্রকাশের পদ্মা উৎসবে আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই। ছোট-বড় সবার মধ্যেই ছিল অন্যরকম আবেগ।

রংপুর টাউন হল চত্বর থেকে ৯টা দশ মিনিটে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। বিভিন্ন রঙের টি শার্ট, ঘোড়ার গাড়ি, ঢাক-ঢোল আর সানাইয়ের সুরে শোভাযাত্রার উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে নগরজুড়ে। শোভাযাত্রার সামনে ছিল ‌প্রতীকী পদ্মা সেতুর অবকাঠামো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রদর্শন করা হয় ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। শোভাযাত্রা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জিলা স্কুল মাঠে গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঞা, বাংলাদেশ ‍পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য, রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, রংপুর জেলার পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মেহেদুল করিম, রংপুর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানম প্রমুখ।

এদিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করার পর জিলা স্কুল মাঠের বটতলায় ভিড় জমে প্রতীকী পদ্মা সেতু ঘিরে। কেউ সেলফি তুলে আবার কেউ ঘুরে ঘুরে সেতুর অবকাঠামো দেখেন। এ সময় পদ্মা সেতুর ‌প্রতীকী ছুঁয়েই অনেকের উদ্বেলিত মন আর চোখে-মুখে ছিল অন্যরকম তৃপ্তির প্রকাশ। ইতিহাসের আরেকটি বিজয়ের সাক্ষী হবার দিনে মানুষের মাঝেও দেখা গেছে আনন্দ উচ্ছ্বাস।

বড় পর্দায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে জিলা স্কুল মাঠে এসেছিলেন নগরীর সেনপাড়া সিটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম মুরশেদ। অনুষ্ঠান শেষে বটতলার অন্যদের মতো সেও ঘুরে ঘুরে পদ্মা সেতুর অবকাঠামো দেখে এবং ছবি তোলে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে এসএসসি পরীক্ষার্থী ফাহিম মুরশেদ বলে, আজকে প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যদের বক্তব্য শুনে খুবই ভালো লেগেছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হলো। সেতুটা আমাদের এখান থেকে অনেক দূরে, কিন্তু আবেগটা সেতুর সঙ্গে মিশে আছে। এ জন্য প্রতীকী সেতুটি ঘুরে ঘুরে দেখে কয়েকটা ছবি তুলে রাখলাম।

রফিকুল ইসলাম নামে এক সংবাদকর্মী তার পাঁচ বছরের কন্যাশিশু সিদরাতুল মুনতাহাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। পাঁচ বছর বয়সী মুনতাহা প্রাক-প্রাথমিকের শিশুশিক্ষার্থী। বাবার কোলে থেকে ছোট্ট এই শিশুটি পদ্মা সেতুর প্রতীকী অবকাঠামো দেখেন। দ্বিতলা সেতুটি মুনতাহার ভালো লাগে, এ কারণে বার বার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেন।

মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার মেয়ে জানে আজকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সেতু দেখার জন্য জেদ করে। স্কুলের মাঠে বড় পর্দায় সবকিছু ভালো দেখা যাবে, এ কারণে আমিও মেয়ের ইচ্ছে পূরণে তাকে সঙ্গে এনেছি। পুরো অনুষ্ঠান উপভোগ করে বেশ ভালো লাগছে। তবে আমার মেয়ে সেতুর প্রতীকী অবকাঠামো দেখেই উদ্বেলিত, বার বার ও ছুঁয়ে দেখেছে।

ফাহিম-মুনতাহার মতো শত শত শিশু-কিশোররাও উল্লসিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের মাঝে দেখা গেছে আনন্দ উচ্ছ্বাস। দক্ষিণের পদ্মা সেতু ঘিরে এখন তিস্তা বেষ্টিত উত্তরের মানুষও স্বপ্ন দেখেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হবে, এমনটাই চাওয়া রংপুর অঞ্চলের মানুষের।

সংস্কৃতিকর্মী রেজাউল করিম জীবন বলেন, দেশের টাকায় পদ্মা সেতু হয়েছে, এটাতো আমাদের গর্বের ও অহংকারের প্রতীক। আমি ভীষণ আনন্দিত। এই সেতু নির্মাণে সামর্থ্য অনুযায়ী আমি নিজেও সহযোগিতা করেছি। দেশের জনগণের ঐক্যবদ্ধ হবার অর্জন এটি। 

এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে রংপুরে সকাল থেকে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন আনন্দ মিছিল ও র‌্যালি করেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে বের করা হয় আনন্দ শোভাযাত্রাও। করা হয় মিষ্টি বিতরণ। একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে পদ্মা বিজয়ের আনন্দ ভাগাভাগিও করেন অনেকেই।

সকালে জেলা প্রশাসনের শোভাযাত্রা ছাড়াও দুপুরে র‌্যালি করেছে সিটি করপোরেশন, জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, পিবিআই, কমিউনিটি পুলিশিং, জেলা ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একই মাঠে আতশবাজি ফুটিয়ে আনন্দ-উল্লাস আর রংপুর অঞ্চলের খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় স্মরণীয় করে রাখায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনটি। রংপুর নগরের মতো জেলার প্রতিটি উপজেলা শহরেও উদ্বোধন উপলক্ষে শোভাযাত্রা করা হয়েছে।

এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আমেজে সারা দেশের মতো রংপুরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে তোরণ স্থাপন, পোস্টারিং, ফেস্টুন সাটানো হয়। মোড়ে মোড়ে দৃষ্টিনন্দন পদ্মা সেতুসহ প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত ব্যানার দেখা গেছে। এ ছাড়া নগরজুড়ে ভাওয়াইয়ার সুরে মন মাতানো পদ্মা সেতুর গান বাজানো হয়েছে। 
#ঢাকাপোস্ট।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –