• বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ২৫ ১৪৩১

  • || ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটির ঘটনা নিয়ে যা জানালো আইএসপিআর

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৪ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। চলমান সংঘর্ষ দ্রুত নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)। এছাড়া সংঘর্ষে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়ে এসব জেলার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় আইএসপিআর।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খাগড়াছড়ি সদরে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল জনগণের গণপিটুনিতে মো. মামুন নামে একজন যুবক নিহত হন। পরবর্তীতে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন বিকেলে দীঘিনালা কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।

মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় ইউপিডিএফের (মূল) সন্ত্রাসী হামলা করে ও ২০-৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৬ জন আহত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় আগুন নেভায়।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতিকে আরো উত্তেজনাকর করে তোলে। দ্রুত খাগড়াছড়ি জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জরুরি সভা হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৯ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা ও পানছড়িসহ সব উপজেলায় যৌথভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে টহল দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন কমিউনিটি লিডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সব পক্ষকে সহিংস কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিতে বলা হয়।

১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহল দল একজন মুমূর্ষ রোগীকে স্থানান্তরের সময় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছালে অবস্থানরত উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি করে। এক সময় ইউপিডিএফের (মূল) সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর টহল দলের সদস্যদের ওপর গুলি চালায় এবং আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলির ঘটনায় ৩ জন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয় বলে জানা গেছে।

একই ঘটনার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনসাধারণ কয়েকজন যুবকের মোটরসাইকেল থামিয়ে তাদের উপর হামলা ও লাঠিপেটা করে। সেই সঙ্গে উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসের অফিস ভাঙচুর করে।

শুক্রবার সকালে সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন-এর ব্যানারে স্থানীয় জনসাধারণ রাঙ্গামাটি জিমনেশিয়াম এলাকায় সমবেত হয়। এ সময় ৮০০-১০০০ জন উত্তেজিত একটি মিছিল বের করে বনরূপা এলাকার দিকে অগ্রসর হয় এবং বনরূপা বাজার মসজিদ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সিএনজি-অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং বেশকিছু দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে উভয় পক্ষের বেশকিছু লোকজন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাঙামাটি জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে। অনতিবিলম্বে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। যথাযথ তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –