• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

কৃষকের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার 

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২২  

দেশের পল্লী অঞ্চলে বসবাসরত দারিদ্র্যপীড়িত ২০০টি উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘রূপকল্প ২০৪১ : দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র সঞ্চয় সংযোজন’ শীর্ষক প্রকল্প নিচ্ছে সরকার। আজ পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় একনেকে জন্য সুপারিশ করা হলে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পাবে। প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ)। 

বর্তমানে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম দেশের ৩৬টি জেলার ১৭৩টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি আরও ২৭টি নতুন উপজেলায় সম্প্রসারণসহ ২০০টি উপজেলায় বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অবস্থান ও বরাদ্দ প্রকল্পটি ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অননুমোদিত বরাদ্দবিহীন নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। 

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আওতায় ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনে সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন দেশের ৩৬টি জেলার ১৭৩টি উপজেলায় সুফলভোগী সদস্যদের ‘জামানতবিহীন ঋণ সহায়তা প্রদানের জন্য ১৫৩ কোটি টাকা আবর্তক ঋণ তহবিল ব্যবহার করছে, যা উৎপাদনশীল বা আয়বর্ধক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অত্যন্ত অপ্রতুল।

এরই ধারাবাহিকতায় পল্লী অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের একটি সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আর্থিক সহায়তাদান, উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য দূরীকরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নতুন ২৭টি উপজেলা অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশের ২০০টি উপজেলায় এসএফডিএফের কার্যক্রম সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপকল্প ২০৪১ : দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র সঞ্চয় যোজন’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। 

প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের পল্লী অঞ্চলে বসবাসরত দারিদ্র্যপীড়িত ২০০টি উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন। প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রকল্পভুক্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক পরিবারের সুফলভোগীদের ২০২৪ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ৪০০০ টাকা বৃদ্ধি করা। প্রকল্প মেয়াদে সংগঠিত ৫০ হাজার ১০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ৩০ হাজার জনের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি। জুন ২০২৪ সালের মধ্যে সুফলভোগীদের নিজস্ব সঞ্চয় ও প্রকল্পের অর্জিত সার্ভিস চার্জের ১ শতাংশ সঞ্চয় যোজনের মাধ্যমে মাথাপিছু সঞ্চয় ২৫০০ টাকা বৃদ্ধি।

প্রকল্প মেয়াদে ২০ হাজার জন সুফলভোগীর আয়বর্ধক কার্যক্রম পরিচালনা ও সচেতনতায় দক্ষতা বৃদ্ধি। জুন ২০২৪ সালের মধ্যে ১০ হাজার সুফলভোগীর সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নেতৃত্বদানের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রকল্প মেয়াদে সুফলভোগীদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম যেমন, ছেলেমেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য-পুষ্টি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, পরিবার কল্যাণ, যৌতুক প্রথা ও বাল্য বিবাহ রোধ, নারী নেতৃত্ব বিকাশ, নারীর ক্ষমতায়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ, শিশু অধিকার সংরক্ষণ, ক্ষুদ্র ঋণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণের যথাযথ ব্যবহার, আধুনিক পদ্ধতিতে ভুসি চাষাবাদ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, মাতৃত্ব, শিশু স্বাস্থ্য ইত্যাদি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধকরণ ও উৎসাহ দান। 

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমগুলো হলো- গ্রাম পর্যায়ে ২০০৪টি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক উন্নয়ন কেন্দ্র গঠন। ১০ হাজার জন সুফলভোগীকে প্রশিক্ষণ প্রদান ও ব্যয় ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা (জুন ২০২২ এর মধ্যে ২৫ শতাংশ, জুন ২০২৩-এর মধ্যে ৭০ শতাংশ এবং জুন ২০২৪-এর মধ্যে ১০০ শতাংশ) ২৭৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ক্ষুদ্র ঋণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ বিতরণ ইত্যাদি। 
প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় কিছু জায়গায় অসামঞ্জস্য মনে হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের, যা নিয়ে আজ পিইসি সভায় আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। অসামঞ্জস্যগুলো হলো- প্রস্তাবিত প্রকল্পের লজিক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অংশে সুফলভোগী প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা ১০ হাজার জন উল্লেখ করা হলেও প্রশিক্ষণ খাতে ২০ হাজার জনের প্রশিক্ষণ ব্যয় উল্লেখ করা হয়েছে। 

প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৫০ কোটি টাকা উল্লেখ করা হলেও লজিক্যাল ফ্রেমওয়ার্কসহ একাধিক অনুচ্ছেদে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ২৭৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে অসামঞ্জস্য লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়া প্রাক্কলিত ব্যয়ের বিস্তারিত বিবরণীতে ক্ষুদ্র ঋণ ৮৬ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং বিশেষ উৎসাহ প্রদান তহবিল ১০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে, যা প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৭৮ শতাংশ; কিন্তু প্রকল্প প্রস্তাবে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ কর্তৃক সর্বশেষ জারিকৃত সরকারি পর্যায়ে পরিচালিত ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির আওতায় আবর্তক ঋণ তহবিল ব্যবহারের সমন্বিত নীতিমালা অনুসরণে প্রস্তাবিত প্রকল্পের আবর্তক ঋণ তহবিল পরিচালন নীতিমালা/সুফলভোগী নির্বাচন নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের ডিপিপিতে ১১ শতাংশ সরল সুদে সেবামূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অধিক বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। এ ছাড়া সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সেবামূল্য সিঙ্গেল ডিজিটে আনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। 

প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মতিউর রহমান বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রান্তিক কৃষকরা উপকৃত হবে। তাদের মাথাপিছু আয় বাড়বে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আয়বর্ধক কার্যক্রম পরিচালনা, সচেতনতায় দক্ষতা বৃদ্ধি নেতৃত্বদানের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –