• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

কুড়িগ্রামে ধানের মুড়ি ফসল কৃষিতে নতুন বিপ্লব

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ জুলাই ২০২১  

কুড়িগ্রামে বোরো ধান কাটার পর কাটা গাছের গোড়া থেকে আবারো উৎপাদন হচ্ছে ধান। একই জমির ধান গাছ থেকে দু’বার ধান উৎপাদন হওয়ায় এখানকার কৃষকের ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত রৌমারী উপজেলায় মুড়ি ফসল নামের এই ধান উৎপাদনে কৃষকের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এ ধান চাষে কৃষকের খরচ কম ও লাভ বেশি। চলতি খরিফ-১ মৌসুমে আউশ ধানের পাশাপাশি বর্তমানে মাঠে কিছু কিছু জায়গায় বোরো ধানের কাটা মুড়ি থেকে ধান উৎপাদন হচ্ছে।

জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদী ও হলহলিয়া নদীসহ মোট ৫টি শাখা নদী দ্বারা বেষ্টিত রৌমারী উপজেলা। কৃষি প্রধান এ উপজেলায় মোট আয়তন ১৯ হাজার ৭০০ হেক্টর। আবাদযোগ্য জমি ১৬৬ হেক্টর। নিট আবাদি জমির পরিমাণ ১৫ হাজার ৫৫৫ হেক্টর। বর্তমানে রৌমারী একটি খাদ্য উদ্বৃত্ত উপজেলা।

এ উপজেলায় প্রধান প্রধান ফসলের মধ্যে ধান, পাট, গম, সরিষা, চিনা, কাউন, চিনাবাদাম, ভুট্টা ইত্যাদি হলেও ধানের প্রায় সিংহভাগ উৎপাদিত হয় রবি ও খরিপ-২ মৌসুমে। নদী বেষ্টিত হওয়ায় জুন-আগস্ট মাস পর্যন্ত কয়েক দফায় বন্যার সম্মুখীন হতে হয় এখানকার কৃষকদের। 

ফলে বোরো ধান কর্তনের পর খরিপ-১ মৌসুমে শুধু উঁচু জমিতে আউশ ধান ও অল্প সবজি চাষ হলেও বাকি সব জমিই ১০ থেকে ১২ হাজার হেক্টর পতিত থাকে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে এ উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বোরা ধান চাষ হয়েছে। 

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ির উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক মুড়ি ফসল চাষ সম্প্রসারণের নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত তথ্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের প্রদান করেন। তার প্রাপ্ত নির্দেশনা ও তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রযুক্তিতে কাজে লাগিয়ে বন্যার আগে অল্প খরচে অতিরিক্ত একটি ফসল উৎপাদনের জন্য  রৌমারী উপজেলার ১৮ টি ব্লকে ২ হেক্টর করে মোট ৩৬ হেক্টর জমিতে মুড়ি ফসল চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

প্রত্যেক কৃষকের সঙ্গে পরামশের্র পাশাপাশি উঠান বৈঠক, মাঠ দিবস ও প্রশিক্ষণে এ বিষয়ে আলোচনা করে অন্যান্য কৃষকদের অবহিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের মুড়ি ফসল চাষে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত পরামর্শ প্রদান করছেন। এর ফলশ্রুতিতে চলতি খরিফ-১ মৌসুমে অত্র উপজেলায় প্রাথমিকভাবে ২৫ হেক্টর জমিতে অর্জন সম্ভব হলেও বিভিন্ন কারণে শেষ পর্যন্ত ১২ হেক্টর জমিতে মুড়ি ফসল দণ্ডায়মান ছিল। উপজেলার কৃষি অফিসার ৩টি মুড়ি ফসল জমিতে নমুনা শস্য কর্তন করেন। 

যেখানে তিনি বিঘা প্রতি গড়ে ৭ মণ ধানে ফলন পেয়েছেন। যে বন্যা প্রবণ এ উপজেলায় খরিফ-১ মৌসুমে পতিত জমির সুষ্ঠু ব্যবহার করতে হলে মুড়ি ফসলের বিকল্প নেই।

স্থানীয় কৃষক রুহুল আমিন জানান, বোরো ধান কাটার পর ফেলে রাখা ওই জমির কাটা ধানের গাছ থেকে কুশি বের হয়। আগে আমরা ওই ধানের কুশি গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতাম। এখন ওই ধান গাছ থেকে তিনি নতুন ধান উৎপাদন করছেন।

স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে তার ৪০ শতাংশ জমিতে ব্রি ধান-২৮ কর্তনের সময় ধান গাছের মুড়ি রেখে দেন। পরে সেচ দিয়ে ১০ কেজি ইউরিয়া, ৫ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করে ৫৫ দিন পর ৭ মণ ধান পেয়েছেন। এতে তার খরচ হয়েছে মাত্র ১ হাজার টাকা। 

সবাই মুড়ি ফসল চাষ করলে সেচ নেয়া সুবিধা হবে। পাখি, গরু, ছাগলের উপদ্রব কমবে এবং ভালো পরিচর্যা করলে অল্প দিনেই বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ মণ ধান উৎপাদন সম্ভব। কৃষি বিভাগের পরামর্শ পেয়ে অতিরিক্ত ফসল পেয়ে তিনি খুশি। সেই সঙ্গে সরকারের কাছে সারের প্রণোদনা ও কৃষকদের প্রশিক্ষিত করার দাবি জানান তিনি।
কৃষক শফিকুল হক জানান, বোরো চাষ করে ধান ভালো হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও ধান কাটার পর একই ধানের গাছ থেকে নতুন ধান উৎপাদনের সুযোগ পাওয়ায় বোরো ধান চাষে তিনি লাভবান হচ্ছেন। আগামী বছর কয়েক একর জমিতে মুড়ি ফসল চাষ করবেন।

শৌলমারী ইউনিয়নের বোয়ালমারী ব্লকে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, তার ব্লকে প্রথমে ৫ হেক্টর জমিতে ২০ জন কৃষক মুড়ি ফসল রাখলেও শেষ পর্যন্ত ৩ হেক্টর জমির ফসল কর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন। বন্যার আগেই মাত্র ৫৫-৬০ দিনের অতিরিক্ত ৬০ হতে ৭০ মণ ধান উৎপাদন করতে সক্ষম হন কৃষকরা।

একই ইউনিয়নের বড়াইকান্দি ব্লকে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাবুল আকতার জানান, তার ব্লকে প্রায় ২ হেক্টর মুড়ি ফসল জমি হতে ৪৫/৫০ মণ ধান পাওয়া যায়। আগামী বছর মুড়ি ফসলের জমি আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদী।

এ ব্যাপারে রৌমারী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন জানান, কৃষি বিজ্ঞানে ধান কর্তনের পর (ধানের গোড়া) থেকে সামান্য যত্নে সহজ উপায়ে আবারো ধান উৎপাদন করা সম্ভব। এতে কৃষকের খরচ অনেক কম হবে ও লাভ হবে কয়েকগুণ বেশি। আগামীতে রৌমারী উপজেলায় ব্যাপক হারে মুড়ি ফসল উৎপাদন করবেন কৃষকরা এমন প্রত্যাশা করেন তিনি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার হাত বাড়াবেন বলেও জানান তিনি।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –