• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

এসআই বাবা আর ক্যাপ্টেন চিকিৎসক মেয়ের ছবি ভাইরাল 

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ আগস্ট ২০২১  

দুজনের সম্পর্ক বাবা-মেয়ে। ভিন্নতা পেশাগত পরিচয়ে। বাবা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই)। আর মেয়ে চিকিৎসক। এখানেই শেষ নয়। কারণ পুলিশে কর্মরত শত শত বাবার চিকিৎসক মেয়ে রয়েছে। কিন্তু এই বাবার মেয়ের নামের আগে জুড়ে আছে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পদবি। বাবা হিসেবে নিজের চেয়ে মেয়েকে উচ্চ পদে দেখতে পাওয়া গর্বের। আর বাবা-মেয়ে যখন একে অপরের সঙ্গে অভিবাদন (সালাম) বিনিময় করেন তখন ক্যামেরায় বন্দি ছবিটা তো ভাইরাল হওয়ারই কথা।

বলছিলাম সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া বাবা-মেয়ের কথা। যেখানে পদমর্যাদার চেয়ে রক্তের বন্ধন হৃদয় ছুঁয়েছে সবার। ফেসবুকে ভেসে বেড়ানো ছবিতে হাজারো মানুষের ভালোবাসা, শুভ কামনা আর অভিনন্দন বার্তায় সিক্ত হচ্ছেন সেনাবাহিনীতে সদ্য চাকরিপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ডা. শাহনাজ পারভীন। তার গর্বিত বাবা এসআই আব্দুস সালামও প্রশংসায় ভাসছেন। 

এসআই আব্দুস সালাম রংপুরের গঙ্গাচড়া মডেল থানায় কর্মরত। তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চন্দ্রখানায়। বর্তমানে চাকরির সুবাদে তিনি পরিবার নিয়ে রংপুরে রয়েছেন। 

সোমবার (০২ আগস্ট) দুপুরে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় গিয়ে দেখা হয় এসআই আব্দুস সালামের সঙ্গে। সেখানে সঙ্গে আলাপচারিতায় চিকিৎসক মেয়ের সাফল্যের গল্প শোনান তিনি। এ সময় তার অশ্রুসিক্ত নয়নে ছিল অন্যরকম উচ্ছ্বাস। মেয়ের সাফল্যে নিজে গর্বিত হলেও এর কৃতিত্ব তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের বলে দাবি আব্দুস সালামের।

জানা গেছে, আব্দুস সালাম তিন সন্তানের জনক। তার তিন সন্তানই মেয়ে। তবে ছেলে সন্তানের অভাববোধ নেই পরিবারে। বড় মেয়ে শাহনাজ পারভীন রংপুর মেডিকেল কলেজের ৪৩তম ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। সেশন ২০১৩-২০১৪। ইন্টার্ন শেষ করে সম্প্রতি ক্যাপ্টেন পদে চাকরি পেয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। মেজো মেয়ে উম্মে সালমা একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি পড়ছেন তৃতীয় বর্ষে। সবার ছোট স্মৃতিমনি মীম এসএসসি পরীক্ষার্থী।

নিভৃত গ্রামের স্কুল থেকে উঠে আসা শাহনাজ পারভীন ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন। ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন সেখানকার ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজে। ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়ও কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। পরে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৩-১৪ সেশনে রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান শাহনাজ পারভীন। 

তিনি আরও বলেন, আমার সন্তানদের আমি সব সময় সাহস দিয়ে আসছি। ওদেরকে মনোবল বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করি। কোনো কাজ ও বিষয়কে কঠিন করে ভাবতে দেইনি। সকল পরিস্থিতিতে ধৈর্য, চেষ্টা ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। মা-বাবাই সন্তানের ভালো চায় সেটা সন্তান নিজে বাবা-মা হলে না বুঝতে পারবে না। কিন্তু মা-বাবার স্বপ্ন ও চেষ্টাটা তারা যদি উপলব্ধি করতে পারে, তাহলে প্রত্যেক মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ সম্ভব। আমি আমার বড় মেয়ের মতো বাকি দুই মেয়েকেও চিকিৎসক বানাতে চাই। তবে সব কিছুর কৃতিত্ব শাহনাজের মায়ের। সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকাও রয়েছে। 

পুলিশে চাকরির কারণে অনেক জেলায় ঘুরেছেন আব্দুস সালাম। কখনো পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে। আবার কখনো একা। সন্তানদের প্রতি দায়িত্ববোধ কাজ করলেও তাদের জন্য আলাদা সময় হয়নি তার। এই কষ্টটা এখনো তাঁকে তাড়া করে। তিন সন্তানকে দেখভাল ও পড়ালেখায় মনোযোগী করতে তাদের মা মনোয়ারা বেগমের ভূমিকা ছিল মুখ্য। স্বল্প শিক্ষিত হলেও মনোয়ারা সন্তানদের আদর্শবান মানুষ গড়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। এ কারণে সংসার সামলানোর যুদ্ধে সন্তানদেরও সমান তালে সামাল দিচ্ছেন।  

আব্দুস সালাম ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরির সুবাদে রাঙামাটি, খুলনা মেট্রো, ঢাকা মেট্রো, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও রংপুরে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে আড়াই বছর ধরে তিনি রংপুরে রয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি নিজে বেশি দূর পড়ালেখা করতে পারিনি। কিন্তু সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করতে চাই। সব মা-বাবাকে অনুরোধ করব ছেলে-মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেবেন না। সন্তানদের আশীর্বাদ ও উপহার দিতে চাইলে তাদের পড়ালেখার সুযোগ করে দিন।

এদিকে সহকর্মীর সন্তানের সেনাবাহিনীতে উচ্চ পদে চাকরিপ্রাপ্তির সংবাদে আনন্দিত পুলিশ সদস্যরাও। এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সবাই আনন্দিত। সন্তানকে নিজের চেয়ে উচ্চ পদে চাকরিতে দেখতে পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করা খুবই কষ্টের। এমন অর্জন সব বাবার জন্যই গর্বের। আমাদের সকলের উচিত সন্তানের প্রতি সময়োপযোগী আচরণ করা। বন্ধু সুলভ আচরণ বেশি প্রয়োজন। যেটা এসআই আব্দুস সালামের পরিবারে রয়েছে।

ফেসবুকে বাবা ও মেয়ের ছবি ভাইরাল প্রসঙ্গে রংপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, বাবা এসআই আর মেয়ে ক্যাপ্টেন। এটা বাবার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। সন্তানের কাছে ধৈর্য, কষ্ট, সহিষ্ণু ও নৈতিক আদর্শের প্রতীক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারলেই কেবল এ ধরণের অসাধারণ মুহূর্তের উদ্ভব হয়। বাবা-মেয়েকে আন্তরিক অভিনন্দন। 

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –