• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

বাড়তি সময় ছাড়াই কব্জি দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিলেন মোবারক

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২১  

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউপির ধর্মপুর গ্রামের দিনমজুর এমদাদুল হকের প্রতিবন্ধী সন্তান অদম্য মেধাবী মোবারক আলী দুই হাতের কব্জির সাহায্যে পরীক্ষার খাতায় লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। 

সে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ৯ নম্বর কক্ষে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে গণিত বিষয়ের পরীক্ষা দেয়। 
 
মোবারক আলী শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তাকে খাতায় লিখতে বাড়তি সময় প্রয়োজন হয়নি। স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতো নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষার খাতায় লিখে পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর সম্পন্ন করে আগে ভাগেই পরীক্ষার কক্ষ ত্যাগ করে সবাইকে অবাক করেছেন।

অদম্য মেধাবী মোবারক আলীর জন্ম থেকেই দুই হাতের আঙুল ও হাতের তালু না থাকলেও দু’হাতের কব্জির সাহায্যে সে লেখাপড়া চালিয়ে পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়। 

এবার মোবারক আলী কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয থেকে মেধাবী ছাত্র হিসেবে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ৯ নম্বর কক্ষে সে কব্জির সাহায্যে পরীক্ষায় খাতায় অনাবরত লিখে সবাই তাক লাগিয়ে দেয়।

ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব গোলাম কিবরিয়া সরকার লাকু বলেন, মোবারক আলী অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই প্রতিটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে বাড়তি সময় দেয়া হলেও সে পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময়েই পরীক্ষার খাতায় লেখা সম্পন্ন করে। তার হাতের লেখা খুব সুন্দর। তার এই অদম্য প্রচেষ্টা আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। মেধাবী মোবারকের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হোক। আমি তার জীবনের উন্নতি কামনা করছি।

মোবারক আলীর শিক্ষা গুরু ও কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়দুল হক বলেন, আমার শিক্ষার্থী মোবারক আলী একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে অদম্য মেধার অধিকারী। সে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় বেশ পারদর্শী। ভালো ক্রিকেটার

সে অসহায় পরিবারের সন্তান হওয়ায় আমরা বিদ্যালয় থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। আশা করছি সে এবার এসএসসিতে ভালো ফলাফল করবে। মোবারক আলীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশ-বিদেশের স্ব-হৃদয়বান মুনুষের সহযোগিতা কামনা করছি।

উুলবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা আব্দুর হাই রকেট বলেন, মোবারক আলীর মতো প্রতিবন্ধী অদম্য মেধাবীরা শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণা। মোবারক আলীর উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করছি। তাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার জন্য তার কাগজপত্র জমা নিয়েছি।

জানা গেছে, মোবারক আলী ১ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। জন্ম থেকে সে প্রতিবন্ধী হওয়ায় নিজের সব কাজগুলো সে দুই হাতের কব্জির সাহায্যে নিজেই করতে পারে। তবে তার মা মরিয়ম বেগম মোবারককে সাহায্য করে যাচ্ছেন। 

ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও মরিয়ম বেগম কোনো বিরক্তবোধ না করে ছেলে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন তাকে মানুষ করার। এজন্য তিনি মোবারককে স্কুল মুখি ও কর্মক্ষম করতে দুই হাতের কব্জির মাঝখানে কলমসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ধরিয়ে দিয়ে ও খাতায় লেখার কৌশল শিখান। 

মায়ের কাছে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজে পায় মোবারক। এভাবে নিজের প্রতিবন্ধতাকে হার মানিয়ে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকা নিয়ে উত্তীর্ণ হয়।
 
এবার চলতি এসএসসি পরীক্ষায় দুটি হাতের আঙ্গুল না থাকলেও সুস্থ স্বাভাবিক শিক্ষার্থীর মতোই দুই হাতের কব্জি দিয়ে কলম আঁকড়ে ধরে পরীক্ষার খাতায় প্রশ্নের উত্তর লেখে পরীক্ষা সম্পন্ন করেন মোবারক আলী। 

তার দুটো হাত অচল হলেও নিজের অদম্যতা ও ইচ্ছাশক্তিতে বলিয়ান জীবন যুদ্ধের লড়াকু সৈনিক মোবারক আলী জন্মের পর থেকে এভাবেই সে বড় হয়ে উঠছে। সে জীবনের সকল গণ্ডি পেরিয়ে উন্নত জীবনের দ্বার প্রান্তে যেতে চায়।

মোবারক আলীর মা মরিয়ম বেগম বলেন, প্রতিবন্ধী মোবারক আলী আমার ৩ সন্তানের মধ্যে বড়। তার অদম্য শক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি আমরা। তাকে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ায় হতাশায় পড়ে আছি।

তিনি আরো বলেন, মোবারক আলীকে সহযোগিতা করতে দেশ ও বিদেশের স্ব-হৃদয় মানুষরা এগিয়ে এলে মোবারক আলীর অদম্য মেধার মূল্যায়ন হতো। আমাদের মতো অসহায় পরিবারটির মাঝে হাসি ফুটতো।  

মোবারক আলী বলেন, দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার দুই হাত নেই। কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভবিষ্যতে নিজেকে শিক্ষাগত পেশায় নিয়োজিত করতে চাই।

এজন্য সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাই। দেশ-বিদেশের স্ব-হৃদয়বান মানুষের সহযোগিতা পেলে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমার জীবন পরিবর্তন, অসহায় বাবা-মায়ের মুখে হাসি ও দেশ জাতির সেবা করতে পারবো। 

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –