• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

উলিপুরে খুপরির নড়বড়ে চালার মতো লাল বানুর জীবন

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২০ আগস্ট ২০২২  

উলিপুরে খুপরির নড়বড়ে চালার মতো লাল বানুর জীবন                      
তিন নাতিনরে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। নদীভাঙনে সব শেষ হয়ে গেছে। ভাঙা ঘরে কোনোরকম রাত কাটাই। মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে বাচ্চাগুলোর জীবন বাঁচে। যেদিন কোনো সহযোগিতা পাই না, সেদিন উপোস থাকতে হয় আমাদের। দুই বছর হলো ওদের বাবা মারা গেছে। মা থেকেও নেই। দেড় বছর ধরে তার কোনো খোঁজ নেই। দুনিয়ায় আমি ছাড়া ওদের দেখার কেউ নেই, বাবা।

কথাগুলো বলেছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বতুয়াতলী মুসার চর গ্রামের বাসিন্দা লালবানু বেওয়া (৫৫)

ব্রহ্মপুত্র নদীর মাঝে ৪৭টি পরিবার নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি চর। চারদিকে নদী আর ভাঙনের হুমকিতে থাকা এই চরের নাম মুসার চর। এখানকার মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস মাছ ধরা। তাদের সবাই প্রায় দিনমজুর। কেউ গরু-ছাগল পালন করে সংসার চালান। এভাবেই চলে মুসার চরের মানুষের জীবন-জীবিকা।

এই চরে চার নাতনিসহ একটি খুপরিতে বাস করেন লালবানু বেওয়া। খুপরির নড়বড়ে চালার মতো লাল বানুর জীবন। সংসারে উপার্জন করার মতো কেউ নেই। জামাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। মেয়ে দেড় বছর ধরে নিরুদ্দেশ। কোথাও ঠাঁই না পেয়ে বৃদ্ধা লালবানুর কাছে থাকে চার নাতনি মেঘনা খাতুন (১২), মোস্তফা (৯), মো. মোস্তাক (৭) ও মো. মজনু (৪)।

লালবানু বেওয়া বলেন, ‘আমি বিধবা। স্বামী-সংসার নাই। অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাই। যেদিন কাজ পাই সেদিন ওদের মুখে ভাত জোটে। কাজ না থাকলে সবাই উপোস থাকি। ভাঙাচোরা ঘরে মাটিতে শুয়ে রাত কাটাই। বৃষ্টি হলে তো সারারাত জেগে থাকা লাগে। তবে দুঃখ একটাই— বাচ্চাগুলোর দিকে তাকানো যায় না। আমি না হয় একদিন না খেয়ে থাকতে পারবো কিন্তু বাচ্চাগুলোর কী হবে? কষ্ট সহ্য করতে না পেরে একটা নাতনিরে অন্যের বাসায় রাখছি। জানি না এদের কপালে কী আছে?’

শিশু মোস্তাক বলে, ‘আমার মা-বাবা নাই। নানির ভাঙা ঘরে থাকি। যে ঘরে রান্না, সেই ঘরে ঘুমাই। কোনোদিন একবেলা ভাত খাই, কোনো দিন খাই না। আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।’

মুসার চরের বাসিন্দা আয়নাল হক বলেন, ‘মা-বাবা হারা বাচ্চাগুলোকে দেখলে খুব খারাপ লাগে। ওদের নানিই ঠিকমতো খেতে পারে না, বাচ্চাগুলোকে কী খাওয়াবে? এখানকার মেম্বার-চেয়ারম্যান যদি একটা ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে হয়তো ওদের দুঃখ ঘুচতো।’

এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বাবলু মিয়া বলেন, ‘লালবানু বেওয়াকে আমি চিনি। উনি মেয়ের ঘরের চারটি সন্তানসহ খুব খারাপ অবস্থায় আছেন। ওদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করবো। তবে কেউ যদি বাচ্চাগুলোর পাশে দাঁড়াতো তাহলে ওদের উপকার হতো।’

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –