• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হবে গবেষণানির্ভর শিক্ষাঙ্গন:উপাচার্য

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২  

শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) ময়মনসিংহস্থ রংপুর বিভাগীয় সমিতির এক মতবিনিময় সভায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন সদ্য আত্মপ্রকাশ ঘটা কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঐ সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো, ভর্তি কার্যক্রম, একাডেমিক কার্যক্রম ও গবেষণাসহ নানা দিক নিয়ে ড. জাকির আমাদের প্রতিবেদকের মুখোমুখি হন।

প্রতিবেদক: কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আপনি। বিশ্ববিদ্যালয়টির শুরু নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন: বিশ্ববিদ্যালয়টি অনুমোদনের এক মাস পর গত মে মাসে আমি উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েছি। এরপর থেকেই আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি, যেন যত দ্রুত সম্ভব একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা যায়। যেহেতু এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ভিন্ন আঙ্গিকে করা, তাই কুড়িগ্রাম অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যেন এটি কাজে লাগে, সে কথা মাথায় রেখেই এগিয়ে যেতে চাই। 

আগামী বছর (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে যাচ্ছি। অবকাঠামো নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপাতত দুইটি স্থানকে বিবেচনায় নিয়েছি। আশা করি, খুব দ্রুতই একটি জায়গা নির্ধারণ করতে পারব। পাশাপাশি শহরের কোনো একটি জায়গাকে কেন্দ্র করে বা ভাড়া নিয়ে একটি বা দুটি ফ্যাকাল্টির কার্যক্রম শুরু করব। একটি রিসার্চ ওরিয়েন্টেড বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে নতুন ও ভিন্নধর্মী পাঠ্যক্রম তৈরির চেষ্টা করছি। মানসম্পন্ন গবেষণা ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ধারণা ও প্রযুক্তিগুলোকে ভিত্তি ধরে কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে বিষয়সূচি সাজানোর চেষ্টা করছি।

প্রতিবেদক: নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও, এমনকি শিক্ষক স্বল্পতা নিয়েই কার্যক্রম শুরু করে। ফলে আশা নিয়ে ভর্তি হয়ে হতাশ হন শিক্ষার্থীরা। এখানকার অনাগত নবীন শিক্ষার্থীরা এমন ভোগান্তিতে পড়বেন কি না?

অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন: এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন পেলেই আমরা এখানে শিক্ষক নিয়োগের কাজ শুরু করব। যথাসম্ভব সুবিধা ও জনবল নিশ্চিত করে কার্যক্রম শুরু করব যেন শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি না হয়। শিক্ষার্থীরা আমাদের ফার্স্ট প্রায়োরিটি।

প্রতিবেদক: বিশ্ববিদ্যালয়টি কোন স্থানে হবে- এটি নিয়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেয়েছেন। স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন?

অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন: হ্যাঁ, এটি নিয়ে অনেকেই অনেক স্থানের জন্য দাবি, আবেদন করছেন। এটাতে দোষের কিছু দেখি না। সবাই চাচ্ছে তার উপজেলায় বা তার ইউনিয়নে এটি হোক, চাইতেই পারেন। তবে জনসাধারণ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, সাংবাদিক সবার সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। সবার প্রত্যাশা হলো, এটি পুরো কুড়িগ্রামের একটি বিদ্যাপীঠ হবে। তাই আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয়টি যেখানেই হোক সবাই সেটি মেনে নেবেন। তবে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করছি আমরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ দুইটি স্থান বিবেচনায় রেখেছেন। এর মধ্যে এমন কোনো স্থান নির্বাচন করব, যেখানে কার্যক্রম পরিচালনা, যাতায়াতসহ শিক্ষা কার্যক্রমে কোনো ধরনের বিঘ্ন না হয়।

প্রতিবেদক: এমন বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, প্রতিষ্ঠার পরে তিন-চার বছর পেরলেও এখনো শিক্ষক সংখ্যা খুব কম, যার অধিকাংশই আবার প্রভাষক। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের এ নিয়ে ভাবনা কী?

অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন: একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে গেলে শুধু জুনিয়র শিক্ষক দিয়ে এগোনো অনেক কঠিন। আমরা চেষ্টা করব, বিভিন্ন পর্যায়ের ভালো গবেষক, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অথবা অভিজ্ঞ শিক্ষকদের আমন্ত্রণ করে এখানে পাঠদান করানোর। ব্যবহারিক ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষকের বিকল্প নেই। পাশাপাশি প্রভাষক পর্যায়ের শিক্ষকগণও থাকবেন। সিনিয়র-জুনিয়ের মিলেই একাডেমিক কার্যক্রম খুব ভালোভাবে এগিয়ে নিতে পারব বলে আশাবাদী।

প্রতিবেদক: সর্বোপরি এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?

অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন: আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে সম্পৃক্ত রয়েছি। দেশ ও দেশের বাইরে নানা জায়গায় গবেষণার কাজ করেছি। তাই আমার প্রত্যাশা হলো- অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে স্থানে রয়েছে সেখান থেকে আরো উন্নততর স্তরে নিয়ে যাওয়া। কুড়িগ্রাম একটি ইতিহাসসমৃদ্ধ জেলা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও কুড়িগ্রাম নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেছিলেন। এ জেলাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিশ্ববিদ্যালয়টি করেছেন। প্রথমে মেডিকেল কলেজ করার কথা থাকলেও পরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন। সুতরাং কৃষি শিক্ষার উন্নয়ন ও রূপান্তরের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠান ঐ অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিঃসন্দেহে ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। 

সর্বোপরি বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সেই চিন্তা করেই আমরা একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। সবার সহযোগিতা পেলে এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –