• বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

কুড়িগ্রামের এক জীবন সংগ্রামী নারীর নাম অফেলা বেগম

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২৩  

 
কুড়িগ্রামের এক জীবন সংগ্রামী নারীর নাম অফেলা বেগম। তিনি কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডে গুয়াতি পাড়া-খান পাড়া গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে ৩০ বছর ধরে ছোট্ট একটি টিনের চালায় জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ চালায় দীর্ঘ সময় ধরে আফেলা বেগম বাহারি সব সুস্বাদু খাবার বিক্রি করে সবার নজর কেড়েছেন। তার দোকানে দুই টাকার পেঁয়াজু, আলুর চপ ও তিন টাকার বেগুনী চপ, ডিমের চপ, পাঁচ টাকায় মাংসের চপসহ কম মূল্যে ইফতারি বিক্রি হচ্ছে।

রমজান মাসে প্রতিদিন বিকেল হলে বিভিন্ন এলাকার লোকজন এসে ভিড় জমায় ইফতার কেনার জন্য আফেলা বেগমের দোকানে। নিজের তৈরিকৃত এসব ইফতারি সামগ্রী বিক্রে করেই অনেকটা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন সংগ্রামী নারী আফেলা বেগম। 

জানা গেছে, কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের গুয়াতি পাড়া-খানপাড়া গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে আফেলা বেগমের স্বামী ইলিয়াছ হোসেন পাশের একটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে চকলেট, আচার, পাপর ভাজা, আলুর দম, বাদাম, বিস্কুট বিক্রি করতেন।

ইলিয়াছ আফেলাকে বিয়ে করার পর স্বামীর সঙ্গেই দোকানে সহযোগিতা শুরু করেন আফেলা বেগম। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে প্রায় ২০ বছর ধরে মিলেমিশে ওই দোকান দিয়ে সংসার চালাতেন। হঠাৎ আফেলার স্বামী ইলিয়াছ মারা গেলে একা হন আফেলা। 

এরপর স্বামীর মৃত্যুর পর আফেলা বেগম শক্ত হাতে স্বামীর রেখে যাওয়া দোকানের হাল ধরতে হয়। স্বামীর সঙ্গে ২০ বছর ও স্বামীর মৃত্যুর পর ১০ বছর মোট দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে দোকানটি পরিচালনা করে যাচ্ছেন আফেলা বেগম। 

আফেলা বেগম ওই দোকানে এখন অন্যান্য মালামালের সঙ্গে নিজ হাতের তৈরি পেঁয়াজু, চপ ও বেগুনি বিক্রি করে সুনাম অর্জন করেন। এতে তার দোকানের বিক্রি বাড়তে থাকে। রমজান মাসে তার বেচাকেনা বেড়ে যায় দ্বিগুণ। ইফতারি বিক্রিতে আফেলা বেগম ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বর্তমান নিজ হাতের তৈরি পেঁয়াজু, চপ ও বেগুনি বিক্রি করে করে আফেলা বেগম প্রতিদিন ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। তার সংগ্রামী আয়ের টাকায় তিনি এতিম দুই মেয়ের বিযে দিয়েছেন। তার ছোট ছেলে সরকারি বালক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। 

আফেলা বেগম বলেন, স্বামীর ৩০ বছরের এ দোকানটি শক্ত হাতে ধরে রেখেছি। আল্লাহর রহমতে আমার এই দোকানে সারা বছর পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনির চপ ও ডিমের চপের সুনাম ছড়িয়ে গেছে। ইফতারি হিসেবে এসব জিনিস নিজেই তৈরি ও বিক্রি করছি। 

রমজান মাসে আমার তৈরি পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনির চপ ও ডিমের চপের বিক্রি দ্বিগুণ বাড়ে। মানুষজন ভিড় জমিয়ে আমার ইফতার সামগ্রী কিনে নেয়। এতে খরচ বাদে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা রোজগার করে সংসার চালাচ্ছি।

স্থানীয়রা জানান, আফেলা বেগমের স্বামী ১০ বছর আগে মারা যাওয়ার পর আফেলা বেগম একা হয়ে যান। এরপরও এতিম ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্ট করে এই ব্যবসাটি চালাচ্ছেন তিনি। তার হাতের তৈরি পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনির চপ ও ডিমের চপ সুস্বাদু।

এই সুস্বাদু মুখরোচ খাবার সামগ্রী গুলো কিনতে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গুয়াতি পাড়া-খান পাড়া গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে ভিড় করেন বিভিন্ন এলাকার লোকজন। এরমধ্যে রমজানে এর ভিড় বেড়েছে দ্বিগুণ।

স্থানীয়রা আরো জানান, সংগ্রামী নারী আফেলা বেগম একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তাকে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতার হাত বাড়ালে তিনি আরও এগিয়ে যেতে পারবেন। স্বাবলম্বী হতে পারবেন সংগ্রামী জীবন থেকে। 

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –