অবৈধ ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচল

কুড়িগ্রামে সর্বত্র রুট পারমিটহীন অবৈধ ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে অতিষ্ঠ হচ্ছে জনসাধারণ। ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলাচল করছে এসব ট্রাক্টর। বিকট শব্দে ট্রাক্টর চলাচল করায় শব্দ দূষণ ও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। পাশাপাশি ট্রাক্টরে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।

রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার সব সড়কে বেপরোয়া চলাচলকারী চালকদের অধিকাংশই কিশোর। তাদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ। লুকিং গ্লাস ছাড়াই চলছে এসব ট্রাক্টর। ফলে ঝুঁকি নিয়ে সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে ছোট-বড় যানবাহনসহ পথচারীদের। 

অবৈধ ট্রাক্টরের বিকট শব্দ, বেপরোয়া চলাচল ও খোলামেলাভাবে বালু পরিবহনের ফলে মৃত্যু ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে শিশুসহ বৃদ্ধরা। কুড়িগ্রামে প্রশাসনিকভাবে ট্রাক্টর বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, জেলার রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার গ্রামীণ সড়ক থেকে শুরু করে মহাসড়কে দাপটের সঙ্গে চলছে বালুবাহী এসব অবৈধ ট্রাক্টর। এখানে এসব ট্রাক্টরে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটা ও খাল-পুকুর ভরাটের জন্য। এতে সড়কগুলোতে চলাচল করা ছোট যানবাহন, পথচারী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন প্রতিনিয়ত।

রাতে ট্রাক্টরের বিকট শব্দে ঠিকমতো লেখাপড়া ও ঘুমাতে পারছেন না শিক্ষার্থীসহ সড়কের দু’ধারে বসবাসকারী মানুষজন। বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ দিয়ে যেসব রাস্তা পাকাকরণ করা হচ্ছে এই ট্রাক্টরের কারণে সে রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

স্থানীয়রা জানান, ট্রাক্টরের মাধ্যমে বালু ও মাটি নিয়ে যাচ্ছেন ইটভাটার মালিক ও বালু ব্যবসায়ীরা। এতে করে রাস্তা-ঘাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি তাদেরকে রাস্তা চলাচলা করতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। এসব অবৈধ ট্রাক্টর রাস্তা-ঘাটসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করলেও তা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না স্থানীয় প্রশাসন।  

স্থানীয় বিদ্যুৎ তালুককদার জানান, রাজিবপুরে প্রায় দুই শতাধিক অবৈধ ট্রাক্টর চলাচল করে। এসব ট্রাক্টরের বিকট শব্দ আর বেপরোয়া গতিতে সড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে মানুষদের। এছাড়াও বালু বোঝাই ট্রাক্টরগুলো না ঢেকেই চলাচল করছে। 

রৌমারী উপজেলা ট্রাক্টর মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ জিন্নাত আলী জানান, রাজিবপুর ও রৌমারীতে ২০০ এর অধিক ট্রাক্টর রয়েছে। এসব ট্রাক্টরে বালু-মাটি বোঝাই করার সময় তা কাপড় বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়ে পরিবহন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সারওয়ার জাহানের জানান, ট্রাক্টরের মাধ্যমে অতিরিক্ত শব্দ দূষণ মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হচ্ছে। প্রতিনিয়ত মাত্রাতিরিক্ত শব্দ দূষণ হলে মানুষের শ্রবণ শক্তি কমে যাচ্ছে। 

মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রতিনিয়ত ধুলাবালু প্রবেশ করতে থাকলে ফুসফুসে মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক সময় দেখা যাবে ফুসফুস তার কার্য ক্ষমতা হারাতে বসবে। ধুলাবালু শরীরে প্রবেশ করলে এ্যালার্জি, এ্যাজমা সর্দি-কাশি এমন জাতীয় রোগও হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

স্থানীয় রৌমারী থানার ওসি রুপ কুমার সরকার জানান, এরইমধ্যে রৌমারী উপজেলার কুটিরচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুটি ট্রাক্টরের মালিক ও অবৈধভাবে বালুমাটি বিক্রির দায়ে ৩ ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে।  

রাজীবপুর থানার ওসি মোজাহারুল ইসলাম জানান, বালু-মাটি পরিবহনের সময় ঢাকনা ব্যবহার করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ট্রাক্টর মালিকদের। ঈদের সময় যানজট নিরসনে দুপুর ১২ টার পর থেকে বাজারে যাতে কোনো ট্রাক্টর বালু-মাটি নিয়ে প্রবেশ বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। কেউ নিয়ম না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

রাজীবপুরের ইউএনও অমিত চক্রবর্ত্তী জানান, সড়কে অবৈধ ট্রাক্টর চলাচল আইন পরিপন্থী। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ে অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –