• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

তিনটি কথোপকথন এবং চিরচেনা বঙ্গবন্ধু

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট ২০২১  

রেজা সেলিম

যাঁরা বলেন বঙ্গবন্ধু তাঁর দেশ পরিচালনার শেষের দিকে মার্কিন নীতির কাছে নিজেকে প্রায় সমর্পণ করেছিলেন, সেসব অলীক প্রচারণার জুতসই জবাব আছে খোদ মার্কিন দলিলপত্রেই। একটু কষ্ট করে নতুন প্রজন্মকে সেগুলো খুঁজে পেতে বের করে নিতে হবে। কারণ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসে আমাদের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে। ১৯৭২ সাল থেকেই দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশকে এমন সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে তার খুঁটিনাটি প্রমাণগুলো জেনে এখন প্রকাশ করা দরকার, যাতে স্বাধীনতাবিরোধী ও অপশক্তির ক্রমাগত সম্মিলিত উদ্যোগে বাধা দেওয়া যায়। এটা অনেকটা অপর একটি মুক্তিযুদ্ধের মতোই, আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে হলে তাকে পাহারা দিয়েই রাখতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফোর্ড, পররাষ্ট্রসচিব কিসিঞ্জার ও একজন মার্কিন কূটনীতিকের ম্লান হয়ে যাওয়া অন্তত তিনটি কথোপকথন ঘটনার উল্লেখ করে আজকের এই নিবন্ধ।

বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পরও কেন জাতিসংঘে পৌঁছাতে এত দিন বিলম্ব হলো সে অন্বেষণও জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের নাম বহুবার আলোচিত হয়েছে জাতিসংঘের দরবারে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের পক্ষে রাশিয়ার ভেটো বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করেছিল। অথচ জাতিসংঘে চীন সদস্য পদ পায় ১৯৭১ সালে, যারা ২৫ বছর আগে আবেদন করেও সদস্য পদ পায়নি। সেই চীন ও তার অক্ষশক্তির হস্তক্ষেপই মূলত বাংলাদেশের সদস্য পদপ্রাপ্তিকে দীর্ঘায়িত করেছিল। বঙ্গবন্ধুর অবিচল কূটনৈতিক নির্দেশনার মাধ্যমে বাংলাদেশ মাত্র দুই বছরে চীন ও তার সেই অক্ষশক্তিকে দুর্বল করতে সমর্থ হয়েছিল।

সদস্য পদ পেয়ে ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে বাংলাদেশ যোগ দেয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। ৩০ সেপ্টেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর হোটেলে দেখা করতে যান। নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ডরফ টাওয়ারে বঙ্গবন্ধুর সুইটে এই সাক্ষাতে কিসিঞ্জারের সঙ্গে ছিলেন মার্কিন সরকারের তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হোসেন ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হোসেন আলী। কিসিঞ্জারের সঙ্গে যে তিনজন ছিলেন তাঁদের একজন পিটার কনস্টেবল, যিনি এই সাক্ষাতের নোট নিয়েছিলেন, যা এখন মার্কিন দলিলপত্রের আর্কাইভে উন্মুক্ত, তাতে দেখা যায় বঙ্গবন্ধু কিসিঞ্জারের সঙ্গে এই সাক্ষাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একজন অবিচল নেতার মতোই আচরণ করেছেন, যেখানে কিসিঞ্জার কখনো কখনো হোঁচট খেয়েছেন।

কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী আলোচনা শুরু করলেও  (I am very pleased to meet you and to welcome you to the United States) কিসিঞ্জারকে দেখা গেছে বঙ্গবন্ধুকে খুশি করার চেষ্টা রাখতে, যেমন তিনি বলছেন,  ‘It is a great pleasure to see you here. In 1970 when Yahya Khan was here for the UN, he explained to me why the elections in Pakistan would be well manipulated. He said there were 20 parties in East Pakistan. There would be no majority party and Yahya would therefore have an excellent opportunity to maneuver to control the situation. Then of course you achieved your spectacular majority, with 167 out of 169 seats in East Pakistan. Ever since then I have never believed political predictions, unless of course you make them.

’(বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ করে কিসিঞ্জার বলছেন, ‘আপনাকে এখানে দেখতে পেয়ে খুবই আনন্দ লাগছে। ১৯৭০-এ জাতিসংঘে যোগ দিতে ইয়াহিয়া খান যখন এখানে আসেন, তিনি আমাকে বোঝান, পাকিস্তানে নির্বাচনকে কেন তাঁর পক্ষে কাজে লাগানো যাবে। তিনি জানান, পূর্ব পাকিস্তানে ২০টি দল আছে, কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে না। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার একটা সুযোগ পাবেন ইয়াহিয়া। এরপর তো পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের ১৬৭টিতে আপনি নাটকীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেন। এর পর থেকে রাজনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণীতে আমি আর বিশ্বাস করি না...’)।

উত্তর বঙ্গবন্ধু খুবই দৃঢ়, বললেন, ‘নির্বাচনের আগে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে আমি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ৯০ শতাংশ ভোট পাব কি না। বলেছিলাম, ৯৭ শতাংশ পাব। আমি এত নির্বাচন করেছি যে অবশ্যই আমি ইয়াহিয়ার চেয়ে ভালো জানি। তাঁর আইডিয়া, কর্মকৌশল আমি ভালোই বুঝি...

(I gave my prediction before the election at a press conference in Dacca. I was asked if I would get 90% of the votes. I said I would get 97%. Of course, I have contested so many elections that I knew better than Yahya. I understood his ideas and plans to maneuver)|

প্রতি উত্তরে কিসিঞ্জার যোগ করেন, যাতে বঙ্গবন্ধুকে খুশি করার চেষ্টা দেখা যায়, “ফলাফল কী হবে তা যদি সে জানত, তাহলে কোনো নির্বাচনই হতো না। চীন যাওয়ার পথে তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা, আমার জন্য যে সফরের ব্যবস্থা সে করেছিল। আমার সম্মানে সে একটা ডিনার দিয়েছিল, টেবিলে আমাকে বলল, ‘লোকে আমাকে একনায়ক বলে।’ তারপর সবাইকে উদ্দেশ করে সে বলল, ‘আমি কি একনায়ক?’ সবাই বলল, ‘না’। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলে বললাম, ‘আমি ঠিক জানি না। তবে একজন একনায়ক হিসেবে খুবই বাজে একটা নির্বাচন করেছেন আপনি।”

যদি কেউ নিবিষ্ট মনে এই দলিল নিরীক্ষণ করেন তাহলে দেখতে পাবেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথোপকথনে কিসিঞ্জার কেমন নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বভাবসুলভ আতিথেয়তায় কিছু খাবেন কি না জানতে চাইলে কিসিঞ্জার চা খেতে চান। বঙ্গবন্ধু চা পরিবেশনের ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমরা কিন্তু চা উৎপাদন করি।’

এই সাক্ষাতে কিসিঞ্জার ও বঙ্গবন্ধুর মধ্যে দুই দেশের সম্পর্ক এবং উন্নয়ন সহায়তা ছাড়াও আরো বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়, যার ঐতিহাসিক মূল্য অনেক। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘জেল থেকে ছাড়া পাবার পরে আমার দেশে মার্কিনবিরোধী মনোভাব প্রবল ছিল। কিন্তু এখন দেশের মানুষ মার্কিনদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন হয়েছে।’ এই প্রসঙ্গে কিসিঞ্জার বলেন, ‘বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন আপনি। পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মানুষকে খেপিয়ে তোলা এবং তাদের কঠোরভাবে মোকাবেলা করার প্রবল প্রলোভন নিশ্চয়ই ছিল। বাঙালিদের প্রতি বরাবরই আমরা ভীষণ সহানুভূতিশীল..

.It is a natural friendship on our side’। কিসিঞ্জার এ রকম কথা বললেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতি ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর মনোভাব কী ছিল ইতিহাস সে সাক্ষ্য দিয়েছে।

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে কিসিঞ্জার বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, চীনাদের ব্যাপারটা কী? তারা আপনার দেশে নাশকতামূলক কিছু কি করছে? এত দিনে আপনাদের সম্পর্ক হয়েছে কি? জবাবে বঙ্গবন্ধু সুস্পষ্ট স্বরে বলেন,  ‘Not yet. We know each other. I went to Peking in 1958 and they came to Dacca in 1962. I want friendship with China but we have our self-respect. I can offer friendship but the initiative has to come from them also.

’ কিসিঞ্জার এ সময়ে ইঙ্গিত করেন, চীন সম্ভবত আগামী বছর (হিসাবে ’৭৫-এর মাঝামাঝিই হয়) থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা শুরু করবে।

বাঙালিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করে এক পর্যায়ে কিসিঞ্জার মন্তব্য করেছিলেন, ‘বাঙালিরা বিদ্রোহী জাতি। হার্ভার্ডে তোমার পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আমার অনেক ছাত্র ছিল, যাদের আমি জানি।’ এই বিদ্রোহী ও দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীদের কেমন করে পাকিস্তানিরা হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধু তার উল্লেখ করে বলেন, পাকিস্তানি জেনারেল ফরমান আলী খান একটা চিরকুটে লিখেছিল, ‘পূর্ব পাকিস্তানের সবুজ মাটিকে লালে রঞ্জিত করে তুলতে হবে।’ ওটা আমরা পেয়েছি, যা সবিস্তারে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের অন্যায় ভূমিকা তুলে ধরেন। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু সময়োচিত প্রসঙ্গের অবতারণা করে কিসিঞ্জারকে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে প্রয়াসী ছিলেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিরও ধারণা উল্লেখ করেন, যা কিসিঞ্জারের জানা দরকার ছিল, বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘We have a foreign policy that is neutral, non-aligned and independent.’

পরের দিন, অক্টোবরের ১ তারিখ বিকেল ৩টায় আমন্ত্রিত হয়ে বঙ্গবন্ধু হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলাপের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু মিসেস ফোর্ডের শারীরিক অসুস্থতার খবর নেন এবং বিস্ময়করভাবে প্রেসিডেন্ট ফোর্ড বঙ্গবন্ধুকে বিস্তারিত অবহিত করতে শুরু করেন। ফোর্ড বলেন,  ‘It was a shock to us. We had to make the decision for the operation, then wait for them to determine malignancy and so forth.’ ফোর্ড এ সময় বঙ্গবন্ধুকে জানান, মিসেস ফোর্ডের শরীরে ৩০টির মতো নোড (এক ধরনের টিউমার) শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে দুটি এরই মধ্যে ক্যান্সার বলে চিহ্নিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু এ সংবাদে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং দ্রুত তাঁর আরোগ্য কামনা করেন, যদিও প্রেসিডেন্ট ফোর্ড এ বিষয়ে তাঁর নিজের উদ্বেগের কথাও বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেন।

কূটনৈতিক জগতের বন্ধুদের কাছে শুনেছি এ রকম ব্যক্তিগত তথ্য সাধারণত খুব ঘনিষ্ঠ পর্যায়ের শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে প্রকাশ হয় না, বিশেষত মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেলায় তো নয়ই। দলিলসূত্রে লক্ষণীয় যে ওভাল হাউসের বারান্দায় ফটো সেশনের পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথোপকথন শুরু হয় এবং বঙ্গবন্ধুর মতো ব্যক্তিত্বের সামনে দুই মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া ফোর্ড, যিনি বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বয়সে সাত বছরের বড় ছিলেন, গড়গড় করে তাঁর স্ত্রীর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য তথ্য শেয়ার করছিলেন।

প্রেসিডেন্ট ফোর্ড যখন বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধানের সাক্ষাৎ হলো। তখন বঙ্গবন্ধু তাঁর জবাবে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি আপনার সঙ্গে আমার জনগণের জন্যে কথা বলার সুযোগ পেয়ে খুশি হয়েছি।’

(Yes, I am happy to have the opportunity to talk with you about my people)|

মার্কিন এই দলিল পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিটি প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু কি অসাধারণ শব্দ ব্যবহার করে এই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎ আলোচনাকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের পটভূমি তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু তাঁর গৃহীত উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যাখ্যা করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ সব উন্নত দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই সহযোগিতা কামনা করেন। এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ফোর্ড বাংলাদেশের পাট উৎপাদন সম্পর্কে জানতে চান এবং আন্তর্জাতিক ঋণ সহায়তা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চান। বঙ্গবন্ধু বিশ্বব্যাংকসহ অন্যদের সঙ্গে আলাপ চলছে জানান।

ফোর্ডের সঙ্গে আলোচনায় বঙ্গবন্ধু কখনো কাঁচুমাচু করে কিছু চেয়েছেন এমন তথ্য নেই। যদিও পরের সরকারের সঙ্গে নানা আলোচনার মার্কিন দলিলে এ রকম তথ্য আছে যে মার্কিনদের খুশি করতে বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপ্রধান অস্ত্র কিনতে আগ্রহী বলে চিঠি দিয়েছিলেন, যা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে কৌতূহলী করেছিল।

বঙ্গবন্ধুর দৃঢ়চিত্তে তাঁর দর্শন ব্যক্ত করার বক্তব্য পাওয়া যায় বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইউজেন বোস্টারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতে। হত্যাকাণ্ডের মাত্র দিন দশেক আগে ৫ আগস্ট ১৯৭৫ বোস্টার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি তাঁদের দুজনের আলোচনার যে প্রতিবেদন ওয়াশিংটনে পাঠান, সেখানে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু বলছেন, ‘আমি মার্ক্সিস্ট নই। আমি একজন সমাজতান্ত্রিক কিন্তু সেটা আমার নিজস্ব পথে। আমি সব দেশের বন্ধু হতে চাই কিন্তু তার মানে এই নয় যে কোনো দেশ ভাবুক আমাকে কী করতে হবে সেটা সে বলে দেবে।’

(I am not a Marxist. I am a Socialist, but a Socialist in my own way. I want to be friends with all countries but I don’t want any country to think it can tell me what to do)| তৃতীয় বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর মুখেই এমন উচ্চারণ মানায়।

এখন সময় হয়েছে প্রকৃত তথ্য যাচাই-বাছাই করে মূল দলিলগুলো বিভিন্ন সূত্র থেকে বের করে আনা। নতুন প্রজন্মের দেশপ্রেমিক সবার দায়িত্ব বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু এই তিনের সমন্বিত যে ইতিহাস তা অবিকৃত করে তুলে ধরার। বাংলাদেশের মানুষ কখনো মাথা নিচু করেনি, এরা বিদ্রোহের জাত এবং সে জাতির নিজস্ব উন্নয়ন দর্শন রয়েছে, যার মূল প্রোথিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর হাতে, আমাদের সেসব জানতে হবে ও জানাতে হবে।   

লেখক : পরিচালক, আমাদের গ্রাম
গবেষণা প্রকল্প

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –