• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

সৎ উদ্দেশ্যে ব্যবসা করা ইবাদততুল্য

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২১  

মুসলমানের গোটা জীবনই হতে পারে পুণ্যময়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর অনুগ্রহে আমাদের এমন একটি দ্বিন দান করেছেন, যার মধ্যে মানবীয় প্রয়োজনের কোনো দিককেই অবহেলা বা উপেক্ষা করা হয়নি। পবিত্র কোরআনে পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির যে উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে, তা হলো, আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘আমি মানুষ ও জিনকে আমার ইবাদতের উদ্দেশ্যেই তাদের সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)

মানুষকে সৃষ্টি করার মূল উদ্দেশ্যই যখন এই ইবাদত করাটা, তখন কর্তব্য ছিল, মানুষ সকাল-সন্ধ্যা, দিবারাত্রি আর কোনো কাজ করবে না—শুধু আল্লাহর ইবাদত করবে।

কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁর অসীম অনুগ্রহে মানুষ সৃষ্টির আসল উদ্দেশ্য ইবাদত হওয়া সত্ত্বেও তাকে তার মানবীয় প্রয়োজন পূরণ করারও অনুমতি দিয়েছেন। অর্থাৎ সে নিজের ও পরিবার-পরিজনের জীবনোপকরণ এবং বসবাসের চাহিদা পূরণ করতে পারবে।

এ কারণে আল্লাহ তাআলা এমন এক দ্বিন আমাদের দান করেছেন, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের সব চাহিদা পূরণ করতে পারি। শুধু প্রয়োজন পূরণ পর্যন্তই শেষ নয়; বরং এগুলোকে নেক আমলেও পরিণত করতে পারি।

পৃথিবীতে অনেক ধর্ম এমন আছে, যার দৃষ্টিভঙ্গি হলো, আল্লাহ তাআলাকে ততক্ষণ পর্যন্ত পাবেন না অর্থাৎ তাঁর নৈকট্য-সন্তুষ্টি লাভ করবেন না, যতক্ষণ না আপনি দুনিয়ার সব কর্মব্যস্ততা ত্যাগ করে আশ্রম-উপাসনালয়ে গিয়ে ঠাঁই নেবেন এবং নির্জন সাধনার জীবন গ্রহণ করবেন। বহু ধর্ম এমন আছে, যার বক্তব্য হলো, ধর্ম ও দুনিয়া একসঙ্গে চলতে পারে না।

আপনারা দেখেছেন অথবা শুনেছেন যে অনেক মানুষ আত্মসংযম ও আত্মপীড়নের নানাবিধ আচার-সংস্কার পালন করে এ ধারণা করছে যে আমরা খোদার প্রিয়ভাজন হয়ে গেছি। তারা কেমন সব কষ্ট-সাধনা করে। উপবাস থেকে দিন কাটায়। উদোম-উলঙ্গ হয়ে সময় পার করে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আমাদের এমন এক দ্বিন দান করেছেন, যার মধ্যে যদিও জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হিসেবে ইবাদত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সব কায়কারবার ছেড়ে দিয়ে বসে যাও; বরং এমন এক আদর্শ আমাদের দিয়েছেন, যার মাধ্যমে জীবনের নানাবিধ প্রয়োজনও পূরণে বাধা থাকে না, আয়-উপার্জন, ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছুই গতিশীল থাকে। শুধু যে গতিশীল থাকে এমন নয়; বরং ব্যবসা একটি নেক আমলের রূপ লাভ করে।

সৎ ব্যবসায়ীদের হাশর হবে নবীগণ ও সিদ্দীকীনের সঙ্গে

ছোট্ট একটি বিষয়, যার প্রতি যত্নবান হলে সব কারবার নেক আমলে রূপান্তরিত হয়ে যায়। সেটা হলো, আল্লাহ তাআলা কিছু বিষয় হালাল করেছেন আর কিছু হারাম করেছেন। পাশাপাশি এ কথাও বলে দিয়েছেন,

‘তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের সন্তান যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল করে না দেয়।’ (সুরা মুনাফিকুন, আয়াত : ৯)

এটা হতে পারবে না যে ব্যবসায় মত্ত হয়ে নিজের ধর্মীয় কর্তব্যের কথা ভুলে যাবে; বরং মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহকে স্মরণ রাখা ও হালাল পদ্ধতিতে আয়-উপার্জনের চেষ্টা করা। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সত্যবাদী ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস ১২০৯)

মোটকথা ব্যবসা যখন আমানতদারি, বিশ্বস্ততা ও সততার সঙ্গে করা হবে, তখন এটি নেক আমলে পরিণত হবে। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)ও ব্যবসা করেছেন; বরং তিনি ব্যাপক পরিসরে ব্যবসা করেছেন। যাকে আজকাল ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (International trade)  বলা হয়। এ অঙ্গনে তিনি আমাদের জন্য অনেক আদর্শ রেখে গেছেন। যদি ঈমানদারি, আমানত ও সততা আমাদের মধ্যে এসে যায়, তাহলে ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ড নেক আমলে পরিণত হবে।

ভারতবর্ষে ইসলাম এসেছে আরব বণিকদের মাধ্যমে

আপনারা জানেন, ভারতবর্ষের মাটিতে যেখানে আলহামদু লিল্লাহ আজ আমরা বিপুলসংখ্যক মুসলমান। এ ভূখণ্ডে সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচারকারীরা মুজাহিদ ছিলেন না যে জিহাদের মাধ্যমে তাঁরা এখানে ইসলামের প্রসার ঘটিয়েছেন। কোনো তাবলিগি জামাতও এখানে আসেনি ইসলামের দাওয়াত নিয়ে। এ অঞ্চলে সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচারকারী ছিলেন কিছুসংখ্যক সাহাবি ও তাবেঈ, যারা ব্যবসায়ী বেশে এ অঞ্চলে এসেছিলেন। তাঁরা নিজেদের ব্যবসার মাধ্যমে এমন সুমহান আদর্শ স্থাপন করেছিলেন যে এ অঞ্চলের মানুষের অন্তরে তাঁদের প্রতি সীমাহীন অনুরাগ জন্ম নেয়। ফলে ইসলামের সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটে এবং ইসলামকে তারা একটি শ্রেষ্ঠ দ্বিনরূপে গ্রহণ করে নেয়।

ব্যবসা করার সুবর্ণ সুযোগ       

আল্লাহ তাআলা তাঁর অনুগ্রহে মুসলিম-অমুসলিম-নির্বিশেষে একটি দেশ ও সমাজে বসবাস করার সুযোগ দিয়েছেন। তাই তাদের সামনে নিজেদের কর্মের সর্বোত্তম নমুনা পেশ করলে, তাদের সঙ্গে আন্তরিক ও সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ করলে, তাদের সঙ্গে সৎ এবং ন্যায়সংগত লেনদেন করলে এই ব্যবসা শুধু ব্যবসাই থাকবে না; বরং একটি দাওয়াতে পরিণত হবে এবং এর একেকটি মুহূর্ত আল্লাহ তাআলার দরবারে সওয়াব ও প্রতিদান লাভের কারণ হবে। প্রতিনিয়ত অমুসলিমদের সঙ্গে আমাদের ওঠাবসা হয়। কিন্তু আমাদের এ বিষয়টি মনে থাকে না যে আল্লাহ তাআলা একজন মুসলমান হিসেবে আমাকে দ্বিনের একজন দাঈ (ধর্মপ্রচারক) বানিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত। সমগ্র মানবতার কল্যাণের জন্য তোমাদের আবির্ভাব...।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

তাই নিজেদের কর্ম ও আচরণের মাধ্যমে অমুসলিমদের কাছে টানুন। তাদের সহমর্মী হোন। তাদের দুঃখ-দুর্দশায় শরিক হোন। এভাবে তাদের ইসলামের দাওয়াত দিন। এ কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনারা দেখবেন সেই পরিবেশ, যা অতীতে দেশে দেশে সাহাবায়ে কেরাম সৃষ্টি করেছিলেন। ইনশাআল্লাহ, সেটা আজও সৃষ্টি হয়ে যাবে।

ব্যবসা অন্য পেশার চেয়ে শ্রেষ্ঠ

কোরআন ও হাদিসে ব্যবসার ব্যাপারে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে মনে হয়, ব্যবসা করা অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।

আমরা ব্যবসার মাঝে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলের একটি শিক্ষা খুঁজে পাই। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা ব্যবসার পেশাকে অন্যান্য পেশার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। শুধু শর্ত একটি। আর তা হলো, ইসলামী শরিয়ত ও সুন্নত মোতাবেক হতে হবে। ব্যবসায় মগ্ন হয়ে কিছুতেই আল্লাহ থেকে গাফিল হওয়া যাবে না।

আল্লাহ তাআলা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –