• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

ইসলামে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জোর তাগিদ

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৪ মে ২০২৩  

ইসলামে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ব্যাপারে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইসলাম তার অনুসারীদের সামগ্রিকভাবে সৌন্দর্যমণ্ডিত দেখতে চায়- এ জন্য সাড়ে ১৪০০ বছর আগেই এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কারণ, স্বাস্থ্যসম্মত পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং উন্নত জীবনমান পদ্ধতি একে অপরের পরিপূরক। মিসরের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা সাইয়েদ তানতাভি লিখেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনুল কারিমে ৫০০ বার প্রকৃতি এবং পরিবেশদূষণমুক্ত রাখার উৎসাহ দিয়েছেন। তাতে ৫৪ প্রজাতির উদ্ভিদের কথা বলা হয়েছে; যার ৫১ প্রজাতি পৃথিবীতে পাওয়া যায়। বিক্ষিপ্তভাবে প্রায় ২০০ আয়াতে প্রাণিজগতের প্রসঙ্গ এসেছে।’

জীবজগৎ বিষয়ক কোরআনের আয়াত ও হাদিস বিশ্লেষণে দেখা যায়, মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা সমগ্র সৃষ্টিজগৎকে মানুষের কল্যাণে ভারসাম্যপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমিনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরি করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৯)

আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি, এতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং সব বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপন্ন করেছি। আমি তোমাদের জন্য তাতে জীবিকার ব্যবস্থা করেছি এবং তোমরা যাদের রিজিকদাতা নও, তাদের জন্যও। প্রতিটি বস্তুর ভান্ডারই আমার কাছে আছে এবং আমি তা প্রয়োজনীয় পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি। আমি বৃষ্টিসঞ্চারী বায়ু প্রেরণ করি, এরপর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তা তোমাদের পান করতে দিই। মূলত এর ভান্ডার তোমাদের হাতে নেই’। (সূরা: হিজর, আয়াত: ১৯-২২)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক- আমি আশ্চর্য উপায়ে পানি বর্ষণ করেছি, এরপর ভূমি বিদীর্ণ করেছি, এরপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙুর, শাকসবজি, জয়তুন, খেজুর, ঘন উদ্যান, ফল ও ঘাস; তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের জীবনোপকরণ হিসেবে’। (সূরা: আবাসা, আয়াত: ২৪-৩২)

প্রাণিজগৎকে পৃথক জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিয়ে কোরআন বলছে, ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল যত প্রাণী আছে, আর যত পাখি দুই ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, তারা সবাই তোমাদের মতো একেকটি জাতি’। (সূরা: আনআম, আয়াত: ৩৮)

পৃথিবীর মানুষকে গাছপালা ও পাহাড়-পর্বত ধ্বংস না করার জন্য পবিত্র কোরআনের সূরা রুমের ৩৮ নম্বর আয়াতে সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ সুস্থ, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনো না।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৯৫) আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘শান্তি স্থাপনের পর তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।’ (সূরা: আরাফ, আয়াত: ৫৬) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে’। (সূরা: রুম, আয়াত: ৪১)

কোনো প্রাণী যদি বিপন্ন হয় এবং তার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে, তবে তা সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা, নুহ (আ.) এর মহাপ্লাবনের সময় আল্লাহ তাআলা প্রাণিকুলের অস্তিত্ব রক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশেষে যখন আমার আদেশ এলো এবং চুলা (পানিতে) উথলে উঠল; আমি বললাম, তাতে উঠিয়ে নাও প্রতিটি শ্রেণির যুগলের দুটি করে’। (সূরা হুদ, আয়াত: ৪০)

বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম সেই সাড়ে ১৪০০ বছর আগে বৃক্ষ বা বন রক্ষার জোর তাগিদ দিয়েছেন। এক ব্যক্তি একটি গাছের পাতা ছিঁড়লে রাসূল (সা.) বললেন, ‘প্রত্যেকটি পাতা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করে।’ মহানবী (সা.) আরো বলেন, ‘গাছ লাগানো মুসলিমদের জন্য সদকাস্বরূপ’। (বুখারি, মুসলিম ও দারেমি)

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করার উৎসাহ দিয়ে মহানবী (সা.) বলেন, ‘মানুষ, পাখি বা পশু যখন তাদের খাবার গ্রহণ করে, তখন তা তার রোপণকারীর (উৎপাদনকারীর) পক্ষে একটি সদকা বা দান হিসেবে পরিগণিত হয়’। (বুখারি ও মুসলিম) আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে, কেয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি লাগানোর মতো একটি চারাও থাকে, তবে তা লাগাবে’। (মুসলিম)

পশুপাখির সঙ্গে যথাসম্ভব দয়াশীল আচরণ করতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) ওই ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন, যে প্রাণীদের অঙ্গচ্ছেদ করে’। (বুখারি) অহেতুক পশুপাখির পেছনে লেগে থাকা এবং এগুলোকে অযথা শিকার করা ইসলামে নিন্দনীয়।

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো প্রাণীকে লক্ষ্যবস্তু বানিও না’। (মুসলিম) অন্য হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অহেতুক কোনো চড়ুই পাখি মেরে ফেলল, কেয়ামতের দিন পাখিটি আল্লাহর কাছে এই বলে নালিশ করবে যে, হে আল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আমাকে অহেতুক হত্যা করেছে’। (নাসায়ি)

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার অংশ হিসেবে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানোর জন্য জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা অতীব প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। সৃষ্টিজগতের ভারসাম্য রক্ষায় এ ক্ষেত্রে কোরআন ও সুন্নাহর দিকনির্দেশনাই হোক সর্বোত্তম পাথেয়। কারণ, ইসলামের দৃষ্টিতেও সব প্রজাতির জীবকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের প্রত্যেকের অলঙ্ঘনীয় দায়িত্ব। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

ইয়া আল্লাহ! উক্ত বিষয়ে বিশ্ববাসীকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –