• বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ২৫ ১৪৩১

  • || ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইসলামের দৃষ্টিতে ন্যায়বিচার

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২৪  

ইসলাম ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। পবিত্র কোরআনুল কারিম ও সুন্নাহ নির্দেশিত পন্থায় ইনসাফভিত্তিক বিচার-ফায়সালাকেই ইসলামের দৃষ্টিতে ন্যায়বিচার বলা হয়।

অর্থাৎ যেখানে কোনো স্বজনপ্রীতি থাকবে না। ব্যক্তিগত বা সম্প্রদায়গত কোনো স্বার্থ থাকবে না। ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ থাকবে না। কারো ওপর জুলুম করা হবে না, বরং অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি পাবে, এক্ষেত্রে কম-বেশি করা হবে না এবং যার যার হক যথাযথ পাবে। ন্যায়বিচার পাওয়া প্রতিটি মানুষের অধিকার।

উল্লেখ্য, সমাজে যত অন্যায়-অনাচার এর প্রধান কারণ ন্যায়বিচারহীনতা।

পবিত্র কোরআনুল কারিমে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যদাতা হিসেবে তোমরা দৃঢ়ভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী হও, এমনকি সেই সাক্ষ্য তোমাদের নিজেদের বা পিতামাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে গেলেও। যার সম্পর্কে সাক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে, সে ধনী হোক বা গরীব, আল্লাহ উভয়েরই সর্বোত্তম অভিভাবক। অতএব তোমরা যাতে ন্যায়বিচার করতে সক্ষম হও, সেজন্য তোমরা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করো না আর তোমরা যদি পেঁচানো কথা বলো অথবা সত্য এড়িয়ে যাও, তবে মনে রেখো, তোমরা যা করো সে বিষয়ে নিশ্চয় আল্লাহ পুরোপুরি অবগত আছেন’। (সূরা: নিসা আয়াত: ১৩৫)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সঙ্গে সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান হও। কোনো কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনোভাবে প্ররোচিত না করে যে, ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ করো, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় তোমরা যা করো, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত’। (সূরা: মায়োদা, আয়াত: ৮)

আরো বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের মধ্যে কোনো বিচার-ফয়সালা করো, তখন ইনসাফভিত্তিক ফয়সালা করো। আল্লাহ তাআলা তোমাদের সদুপদেশ দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা’। (সূরা: নিসা, আয়াত: ৫৮)

ইসলামে ন্যায়বিচারের একমাত্র সূত্র কোরআন ও সুন্নাহ। বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করে না তারাই কাফের’। (সূরা: মায়েদা, আয়াত: ৪৪)

রাব্বুল আলামিন আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সুযোগ ইসলামি শরিয়তে নেই। কেননা ন্যায়বিচারের বিশুদ্ধ ও সর্বোৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত নবীজির জীবনীতেই রয়েছে। তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য বিচার-ফায়সালাসহ সবক্ষেত্রে কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব, আপনার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে বিচারক বলে মনে না করে। এরপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে’। (সূরা: নিসা, আয়াত: ৬৫)

বিশ্বনবির (সা.) শাসনকাল পুরোটাই ন্যায়বিচারে পরিপূর্ণ। এ বিষয়ে অনেক হাদিস রয়েছে। একটি হাদিস এখানে তুলে ধরছি। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মাখজুম গোত্রের এক নারী চোরের ঘটনা কুরাইশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে উদ্বিগ্ন করে তুলল। এ অবস্থায় তারা বলাবলি করতে লাগল এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে কে আলাপ করতে পারে? তারা বলল, একমাত্র রাসূল (সা.) এর প্রিয়তম ওসামা বিন জায়েদ (রা.)। সবাই মিলে সুপারিশের জন্য ওসামা (রা.)-কে নির্ণয় করলেন।

ওসামা (রা.) নবী (সা.) এর সঙ্গে কথা বললেন। নবী (সা.) বললেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘনকারিণীর সাজা মওকুফের সুপারিশ করছ? অতঃপর নবী (সা.) দাঁড়িয়ে খুতবায় বললেন, তোমাদের আগের জাতিকে এ কাজই ধ্বংস করেছে যে যখন তাদের মধ্যে কোনো বিশিষ্ট অভিজাত লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত। অন্যদিকে যখন কোনো অসহায় গরিব সাধারণ লোক চুরি করত, তখন তার ওপর দণ্ড জারি করত। আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মাদ (সা.) এর কন্যা ফাতিমাও চুরি করত; তাহলে আমি তার অবশ্যই (দণ্ডবিধি অনুসারে) হাত কেটে দিতাম। (সহিহ বুখারি: ৩৪৭)

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –