• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

নিজের আলোতেই আলোকিত নাসুম

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১  

পারফরম্যান্স নয়, সিলেটের এক তরুণ বছর আটেক আগে নিজের অপ্রচলিত নাম দিয়ে প্রথম নজর কাড়েন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট অভিষেকেই ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়ার কীর্তি নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমের প্রধান কৌতূহল এটিই হয়ে উঠেছিল যে স্কোরকার্ডে লেখা নামটা ঠিক তো!

সাধারণত ‘মাসুম’ শুনতেই অভ্যস্ত কানে নামটি বিচিত্র ঠেকায় সবার আগে সংশোধনীর খোঁজ চলল। সবশেষে অবশ্য জানা গেল ঠিকই আছে। তিনি মাসুম আহমেদ নন, বাঁহাতি স্পিনারটি নাসুম আহমেদই।

সেই থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ নাসুম পারফরম্যান্সের ওঠানামা দেখতে দেখতে একসময় জাতীয় দলের সীমানায়ও ঢুকে পড়েন। গত মার্চের নিউজিল্যান্ড সফরে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অভিষেক হয়ে যায় তাঁর। এমন উল্লেখযোগ্য কিছু করেননি। তবে এর আগে-পরে ভিন্ন কারণে খবরের শিরোনাম অবশ্য ঠিকই হয়েছেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) তাঁকে চড় মারতে উদ্যত মুশফিকুর রহিমের ছবি ভাইরাল হয়েছিল। নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ফেরার পর ব্যর্থতার কারণ ব্যাখ্যায় সেখানকার ‘পরিষ্কার আকাশ’কে দায়ী করার মতো বক্তব্য নিয়ে হাস্যরসও কম হয়নি।

অর্থাৎ খবরে ছিলেন, কিন্তু নিজের খেলা দিয়ে নয়। মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে প্রচারের আলো কাড়ার বদলে হচ্ছিলেন নেতিবাচক খবরের শিরোনামই। কর্মে নয়, নানা কাণ্ডেই নাসুমের নাম এসে যাচ্ছিল। সেই ভাগ্যবদলের তাগিদও অনুভব করছিলেন নিশ্চিতভাবেই। অবশেষে তাঁর অপেক্ষা ফুরায়। তা-ও আবার এমন এক ম্যাচ দিয়ে, যে ম্যাচে বাংলাদেশও অমীমাংসিত এক রহস্যের জট খোলে নাসুমের বোলিংয়ে। গত ৩ আগস্ট সেটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি। এর আগ পর্যন্ত কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে কখনোই অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে না পারা স্বাগতিকরা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ধীরগতির টার্নিং উইকেটে বিছিয়ে রাখে অসমান বাউন্সের বিষও।

যে বিষে আরো বিষাক্ত হয়ে ওঠা নাসুম সেই প্রথম আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলো ছড়ান ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স দিয়ে। নতুন বলে ‘পাওয়ার প্লে’তে বোলিং করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে জেতেনই না শুধু, কাঁপিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদেরও। প্রথম চারটি টি-টোয়েন্টিতে যেখানে শিকার ছিল মাত্র দুটি, সেখানে এক ম্যাচেই ক্যারিয়ারসেরা পারফরম্যান্স। ১৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা নাসুমের হাতে এর পর থেকে নতুন বল তুলে দিতে আর কখনোই দ্বিধা করেননি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহ।

এরপর এক মাস না পেরোতেই আস্থার প্রতিদান দিলেন আরেকবার। তৃতীয় ম্যাচে হারায় সিরিজ জয় নিয়ে অনিশ্চয়তা যখন, তখন কাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া পারফরম্যান্স নাসুমের। এবার চার ওভারে দুটি মেডেনসহ মাত্র ১০ রান খরচায় চার শিকারে আবারও জয়ের নায়ক এই বাঁহাতি স্পিনার। এবারও অবধারিতভাবেই পেলেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। পর পর দুটি সিরিজে নিজের আলোয় আলোকিত নাসুমের একটু অন্য রকম নামেও এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটসমাজ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যেমন—তিনি নিজেও মাঠের পারফরম্যান্স দিয়েই খবরের শিরোনাম দখল করার ব্যাপারটিকে নিয়মিত বানিয়ে ফেলতে শুরু করে দিয়েছেন।

নিজ কর্মেই দলে আস্থার প্রতিশব্দ হয়ে উঠলেও নাসুম এতে সতীর্থ আর কোচদের অবদানই বেশি দেখাতে চাইলেন, ‘আসলে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়েছি কি না, জানি না। তবে দল থেকে অনেক সমর্থন পাচ্ছি। বিশেষ করে অধিনায়ক ও অভিজ্ঞরা আমাকে অনেক সমর্থন করছেন। আর এতে আমার আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যাচ্ছে।’ সেই সঙ্গে কোচের পরামর্শ যে তাঁকে বোলিংয়ে আরো ক্ষুরধার করে তুলছে, সেটিও জানাতে ভুললেন না নাসুম, ‘কোচও (স্পিন বোলিং উপদেষ্টা রঙ্গনা হেরাথ) আমাকে নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করেন। তাঁর সঙ্গে আমি যেমন, তেমনি তিনিও আমার সঙ্গে অনেক কিছু শেয়ার করেন। কালকের (মঙ্গলবার) অনুশীলনে কোচ বলছিলেন, এই উইকেটে আরেকটু আস্তে বল করলে ভালো হয়। ওটাই অনুশীলন করছিলাম। আজ ওটা ম্যাচে প্রয়োগও করেছি।’ 

এমন নয় যে শুধু আস্তেই বল করে গেছেন। ব্যাটসম্যানভেদে কৌশল বদলেও সাফল্য তুলে নিয়েছেন নাসুম। মারকুটে কিউই ব্যাটসম্যান ফিন অ্যালেনকেই যেমন শিকার বানিয়েছেন এভাবে, ‘আমার কাছে ফিন অ্যালেনের উইকেটটি সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। আর গ্র্যান্ডহোমকে তো আমি এই নিয়ে তিনবার আউট করলাম। তো অ্যালেনের উইকেটই বেশি মূল্যবান। ও রিভার্স সুইপ করতে চাচ্ছিল, আর আমিও ওই ডেলিভারিটা খুব জোরে করেছি। ও মিস টাইম করেছে। এর আগের ম্যাচে আমার লক্ষ্য ছিল ওর উইকেটটা যেন পাই।’

বোলিংয়ে বৈচিত্র্যের মিশেল রেখে পাওয়া সাফল্যে আরেকটি লক্ষ্যও পূরণ হয়েছে নাসুমের, ‘নিউজিল্যান্ড সফরে আমার টি-টোয়েন্টি অভিষেক। প্রথম ম্যাচে দুই উইকেট পেলেও আক্ষেপ ছিল ওদের সঙ্গে জিততে পারিনি। এবার নিজেদের কন্ডিশনে আমরা সিরিজও জিতলাম। আরো খুশি এ জন্য যে এই জয়ে নিজেও পারফরম করেছি।’

যে পারফরম্যান্সে এখন নিজের আলোতেই আলোকিত নাসুম!  

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –