• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজ আমার জন্য আনন্দের দিন- প্রধানমন্ত্রী

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারি ২০২১  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ আমার জন্য আনন্দের দিন। যেসব মানুষের ঠিকানা ছিল না, ঘর ছিল না, তাদের মাথা গোজার ঠাঁই দিতে পারছি।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

এদিন ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়। একযোগে এত ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে জমি ও ঘর করে দেওয়ার ঘটনা বিশ্বে এটিই প্রথম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অনুষ্ঠানে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হন। মুজিববর্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পাশাপামশ মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও নেতাদের সঙ্গেও এ সময় মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে সত্যি আমার জন্য একটা আনন্দের দিন। কারণ এদেশের যারা সবথেকে বঞ্চিত মানুষ। যাদের কোনো ঠিকানা ছিল না। ঘর বাড়ি নেই। আজকে তাদেরকে অন্তত একটা ঠিকানা। মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই করে দিতে পেরেছি। তার কারণ এদেশের মানুষের জন্যই কিন্তু আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি কিন্তু আমাদের কথাও চিন্তা করেননি। চিন্তা করেছেন বাংলার মানুষের কথা। যে মানুষগুলো ক্ষুধার অন্ন জোগাতে পারত না। একবেলা খেতে পারত না। যাদের কোন থাকার ঘর ছিল না। রোগে চিকিৎসা পেত না। ধুঁকে ধুঁকে যাদের মরতে হত। সেই ছোটবেলা থেকে তাদের দেখেছি। এবং তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। কখনো নিজের জন্য পিছনে তাকাননি। নিজে কী পেলেন না পেলেন তা নিয়ে চিন্তা করেননি। বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের কথাই চিন্তা করেছেন। সে লক্ষ্য নিয়ে তিনি সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন।’

সেই ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে এদেশের মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। নিজের জীবনকে তিনি উৎসর্গ করেছিলেন এদেশের মানুষের জন্য। বারবার তাকে হত্যায় চেষ্টা হয়েছে বারবার তাকে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত তার মধ্যেও তিনি কাজ করে গেছেন এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে।

স্বাধীনতার পর তিনি আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন সেখানেও প্রত্যেকটা মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা তিনি বলেছেন। মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠাই ছিল তার লক্ষ্য এবং স্বাধীনতার পর তিনি শুরু করেছিলেন।

জাতির পিতার নেতৃত্বে গৃহহীন মানুষদের গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচির মধ্যে শুরু হওয়ার কথা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে সাধারণ মানুষ যাদের ঘরবাড়ি নেই। তাদেরকে ঘর দেয়ার যে চিন্তাটা এটা কিন্তু তিনি করেছেন। সে কারণে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার পরিবারের সকল সদস্যকে কিন্তু নির্মমভাবে হত্যা করে। শুধু আমি আর আমার ছোট বোন সেসময় বিদেশে ছিলাম তাই বেঁচে গিয়েছিলাম।’

‘এরপর দীর্ঘ ছয় বছর দেশে আসতে পারিনি। কারণ তখন যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল বিশেষ করে জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতা দখল করে তখন থেকে আমাদেরকে দেশে আসতেই দেবে না। এমনকি আমার ছোটবোনের পাসপোর্টটা পর্যন্ত রিনিউ করতে দেয়নি।’

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্বভার নিয়ে দেশে ফিরে আসার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি এক রকম জোর করে শুধু মানুষের কথা ভেবে এবং মানুষের শক্তি নিয়েই আমি দেশে ফিরি। আমার কেউ ছিল না। আমার কোননোথাকার ঘরও নেই। কোথায় যেয়ে উঠব তাও আমি জানি না। আমি কীভাবে চলবো তাও আমি জানি না। কিন্তু আমার কেবলই একটা কথা মনে হচ্ছিল আমাকে যেতে হবে। যেতে হবে এই কারণে, এই যে মিলিটারি ডিটেকটরদের দ্বারা নিষ্পেষিত হচ্ছে আমার দেশের মানুষ তাদেরকে মুক্তি দিতে হবে। তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। তার জন্য কাজ করতে হবে। আর এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। যা আমার বাবা চেয়েছিলেন। সেই একটি আদর্শ সামনে নিয়েই আমি কিন্তু ফিরে আসি।’

‘আমি কখনো আমার ছোট ফুফুর বাড়ি, কখনো মেজো ফুফুর বাড়ি; এরকমভাবে দিন কাটাই। কিন্তু আমার লক্ষ্য একটাই সামনে ছিল, আমি কী পেলাম, না পেলাম সেটা বড় কথা না। কিন্তু দেশের মানুষের জন্য কতটুকু কী করব? আমি সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরেছি, দেখেছি বাংলাদেশের মানুষের কী অবস্থা, সুখ-দুঃখ হাহাকার!’

আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে সারাদেশে ঘুরে বেড়িয়ে মানুষের দুঃখ দুর্দশার চিত্র দেখার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জনগণ কী দুভার্গ্যে পড়েছিল। কারণ জাতির পিতা সব পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। গৃহহীনদের ঘর দেবেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে হাসপাতাল করে স্বাস্থ্যসেবা দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দেবেন। মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। মানুষ একটি সুন্দর জীবন পাবে। এটি তো ছিল জাতির পিতা শেখ মুজিবের একমাত্র লক্ষ্য।’

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –