• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

কুড়িগ্রামে নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে নৌকা তৈরির ধুম

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২১  

চলছে আষাঢ় মাস। কুড়িগ্রামের জনপদে প্রতিদিনেই কোথাও না কোথাও হচ্ছে বৃষ্টি। বৃষ্টির সঙ্গে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে উজানের পানির প্রবেশ করায় এখানকার ১৬টি নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে যে কোনো মুহূর্তে নদ- নদী ফুঁসে উঠে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে এই আশঙ্কা করছেন এখানকার নদী তীরবর্তী মানুষ। 

এ আশঙ্কা থেকে ধরলা নদীর তীরবর্তী মানুষ বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করছেন। এরমধ্যে ধরলা নদীর মোহনার তীরবর্তী ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা পূর্ব-পশ্চিম ধনিরাম গ্রামের মানুষদের মাঝে দেখা গেছে বন্যা মোকাবিলার জোড় প্রস্তুতি। এখানকার অধিকাংশ মানুষের ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে নৌকা তৈরি ও নৌকা মেরামতের ধুম।
বন্যা মোকাবিলায় নৌকা প্রধান মাধ্যম হওয়ায় আষাঢ় মাসের শুরু থেকে এখানকার মানুষরা নৌকা তৈরি ও মেরামতকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির গবাদি পশু, পরিবারের সদস্য, আসবাব পত্রাদি উঁচু স্থানে নেয়ার জন্য নৌকার গুরুত্ব অপরিসীম হওয়ায় এখানকার সচেতন মানুষরা নৌকার উপরই ভরসা করছেন। ফলে এখানে বন্যার আসার আগেই শুরু হয়েছে বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি। 

সরেজমিনে বড়ভিটা ইউপির পূর্ব-পশ্চিম ধনিরাম গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, এ গ্রামের পরিবারের কর্তারা পারিবারিক পরামর্শ করেই নৌকা তৈরি ও মেরামতের কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। নৌকার কারিগরের সঙ্গে তারা সময় দিচ্ছেন নৌকা তৈরির কাজে। কেউ কেউ নদীর নালায় নৌকা ভাসিয়ে হাতুর, করাত ও দা দিয়ে নিজেরাই নৌকা মেরামত করছেন। কেউবা নতুন তৈরি নৌকাকে রোদে শুকানোর জন্য ফাঁকা স্থানে এনে রেখেছেন। প্রতিদিনেই এ গ্রামে নৌকা তৈরি ও মেরামতের ঠুক-ঠাক শব্দ বিরাজমান করছে। 

এ গ্রামের শিক্ষার্থী উম্মে হাফসা বলেন, প্রতি বর্ষা মৌসুমে আমাদের গ্রামটি বন্যায় প্লাবিত হয়ে যায়। মানুষজন ঘর থেকে বের হতে পারে না। বিশেষ করে গৃহপালিত পশুগুলোকে নিয়ে আমাদের চরম বিপাকে পড়তে হয়। তার মতে, বন্যার সময় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে এখানকার মানুষের নৌকা ছাড়া অন্য পথ নেই। তাই এ গ্রামের মানুষ বন্যা মোকাবিলার জন্য বন্যা আসার আগেই নৌকা তৈরি ও নৌকা মেরামতের গুরুত্ব দিচ্ছেন। 

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন বলেন, বন্যার সময় পূর্ব- ধনিরাম গ্রামের মানুষ চরম কষ্টে থাকে। মানুষসহ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। এজন্য আমরা এ গ্রামের মানুষ বন্যার আসার আগেই নৌকা তৈরি ও মেরামত করে বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি গ্রহণ করি। 

তিনি আরো বলেন, এবার আমি ১০ হাজার টাকা দিয়ে তার পরিবারের সদস্য ও গৃহপালিত পশু পারাপারের একটি নতুন নৌকা তৈরি করেছি। এটি আমার বন্যা মোকাবিলার আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সামাদ জানান, আমরা পূর্ব-পশ্চিম ধনিরাম গ্রামের মানুষরা বরাবরেই বন্যা কবলিত হই। বন্যার কারণে আমরা পানিবন্দী থাকি। নিজেদের চলাচল ও গবাদি পশু গরু-ছাগলের খাদ্যের যোগান দিতে বন্যার ৩ মাস সময় আমাদের নৌকার উপর ভরসা করতে হয়। তিনি বন্যা মোকাবিলায় এবার ৮ হাজার টাকা খরচ করে একটি নতুন নৌকা তৈরি করেছন বলে জানান। 

একই এলাকার আদম আলী, আব্দুল মজিদ, আলম মিয়া, একরামুল, করিমুল্লাহ বলেন, পূর্ব-পশ্চিম ধনিরাম গ্রামের মানুষদের প্রতিবছর বন্যার সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। নৌকাই আমাদের মূল হাতিয়ার। তাই বন্যার সঙ্গে লড়াই করতে বন্যার আগে নৌকা তৈরি করছি। 

স্থানীয় নৌকার কারিগর আবুল কাশেম মিস্ত্রী জানান, পূর্ব-পশ্চিম ধনিরাম গ্রামে বন্যা আসার আগেই নৌকার তৈরির ধুম পড়ে। আমাকে রাতদিন ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। বন্যার আসার আগ পর্যন্ত এখানে নৌকা তৈরির কাজ চলবে। এ গ্রামে একমাত্র নৌকা তৈরির কারিগর হওয়ায় এলাকাবাসীর ডাকে সাড়া দিয়ে নৌকা মেরামত ও নতুন নৌকা তৈরি করতে হচ্ছে। 
তিনি এবার আষাঢ় মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম ধনিরাম গ্রামে ১৪ টির মতো নৌকা তৈরি করেছেন। 

কারিগর আবুল কাশেম মিস্ত্রী জানান, তিনি পারিশ্রমিক হিসেবে হাত প্রতি নৌকা তেরিতে ২০০ টাকা মজুরি নিচ্ছেন। যে যত দৈর্ঘের নৌকা তৈরি করতে চাইবেন তাকে হাত প্রতি ২০০ টাকা মজুরি দিতে হয়। 

কেউ যদি ১৫ হাত দৈর্ঘের নৌকা তৈরি করতে চায়, তাকে নৌকা তৈরির পারিশ্রমিক দিতে হবে ৩ হাজার টাকা। 

বড়ভিটা ইউপির স্থানীয় মেম্বার আব্দুল হামিদ জানান, বড়ভিটা ইউপির পূর্ব-পশ্চিম ধনিরাম গ্রাম প্রতিবছর বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। তাই বন্যা মোকাবিলায় এ গ্রামের মানুষকে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে নৌকা মেরামত ও নৌকা তৈরি করতে হয়। 

তিনি আরো জানান, প্রতিবছর তাকেও বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে হয়। এবারো তিনি বন্যা মোকাবিলায় জন্য তার পুরান নৌকাটি মেরামত করছেন বলে জানান।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –