• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে সরকারের উন্নয়নের বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে গ্রামিণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচির কাজ না করেই অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপর উঠলেও বিষয়টি অস্বীকার করছেন তারা। ফলে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামিণ সমাজ। সীমিত সময়কাল ও একসাথে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকেই দায়ী করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ। তবে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস উপজেলা প্রশাসনের।

জেলার তিস্তা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় চিলমারী উপজেলায় রয়েছে ৬টি ইউনিয়ন। দরিদ্র পীড়িত এই উপজেলায় সরকারিভাবে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে ১ম ও ২য় পর্যায় টেস্ট রিলিফ (টিআর)-৮৭টি প্রকল্পে ১২ কোটি ৪৮লাখ ২হাজার ৯০১ টাকা, কাজের বিনিময় টাকা (কাবিটা)-১৩টি প্রকল্পে ৪ কোটি ৫২লাখ ৪ হাজার ১শ’ টাকা এবং কাজের বিনিময় খাদ্য (কাবিখা)-৮টি প্রকল্পে ৩১ লাখ ৩৫ হাজার ২১ টাকা ও ১৪টি প্রকল্পে ২৩৬ দশমিক ৮৬০২ মে.টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। ভাঙন কবলিত এসব এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়,থানাহাট ইউনিয়নের চিলমারী মডেল থানার সামনে নুরুল হকের পুকুর পাড় হতে বারী মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ১ লাখ ২৮ হাজার ২শ’টাকা এবং মাটি কাটা নুরানী মাদ্রাসা হতে ওমর হাজীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের চর উদনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ভরাটের জন্য ৭০ হাজার টাকা, সোনবোন পাড়া পাকা রাস্তা হতে ইয়াকুবের বাড়ি পর্যন্ত ৭৩ হাজার ৭শ’ টাকা, ময়জুদ্দি মেম্বারের বাড়ি হতে বৈরাগীর ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ৭৮হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও কোন কাজই করা হয়নি। অথচ কাগজ-কলমে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে জুনের মধ্যেই বিল উত্তোলন করা হয়েছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা মোকছেদ (৫০),মজিবর (৪৫) আমেনা বেগম (৩০) বলেন,ব্র্যাক মোড় হতে রেলক্রসিং পর্যন্ত কাচা রাস্তা এবং অধিকারী পাড়ার পূর্বদিকে মকবুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার জন্য ৪৩ হাজার ২৮০ টাকা করে বরাদ্দ দিলেও এখানে এক কোদাল মাটি কাটা হয়নি। রাস্তা থেকে রেল ক্রসিং উঁচু হওয়ায় প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটে। নুরুল হকের পুকুর পাড় হতে বাড়ি মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের নামে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা স্থানীয়রা কেউ জানেন না ওই এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী (৫০), শমসের মিয়া (৫৫),ফজলু মিয়া (৬০) অভিযোগ করেন। তারা আরো বলেন, প্রচার-প্রচারণা না থাকায় স্থানীয়রা জানতে পারে না। যার কারণে মাঠ পর্যায় কাজ না করেই প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের লোকজন নিজেদের মধ্যে আঁতাত করে সরকারের উন্নয়নের টাকা পকেটস্থ করছেন। ফলে সরকার উন্নয়ন করলেও এর সৃফল মাঠ পর্যাযে পৌঁছায় না। মাটি কাটা নুরানী মাদ্রাসা হতে ওমর হাজীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের কোন কাজ হয়নি বলে জানান ওমর হাজী (৬৫)। বন্যার সময় পানি উঠলেও তার আগে ও পরে এই রাস্তার কোন কাজ করা হয়নি। তবে স্থানীয়রা বলেন, নিজেরা চাঁদা তুলে বন্যার পরে ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা মেরামত করেছি। এখানে কোন সরকারি বা বেসরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের সোনবোন পাড়ার বাসিন্দা ইয়াকুব আলী (৬৫) বলেন, আমার বাড়ি হতে সোনবোন পাড়ার পাকা রাস্তা পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি। এখানে বরাদ্দ এসেছে আমরা স্থানীয়রা জানিই না। 

চর উদনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবলু মিয়া জানান,আমার স্কুলে ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার কান্ট্রি প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে মাটি কেটে দিয়েছিল। কিন্তু টিআর প্রকল্পে মাঠ ভরাটের নামে যে ৭০হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেই টাকার মাটি কাটা হয়নি। আমি নিজেও জানিনা আমার স্কুলের নামে মাঠ ভরাটের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের বিষয়ে আপনাদের কাছেই প্রথম শুনলাম।

বৈরাগীরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন বলেন, ময়জুদ্দি মেম্বারের বাড়ি হতে স্কুলের রাস্তা মেরামতের কথা শুনেছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই রাস্তা সংস্কার হয়নি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেন, যে টাকা বরাদ্দ আসে সেই টাকার কমিশন দিতে হয় স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা-কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তাই সব কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়না। তারা আরো বলেন, সরকারের একাধিক প্রকল্প আসে বছরের মাঝামাঝি সময়। যা অল্প সময়েই শেষ করার নির্দেশ থাকে। প্রকল্প শেষ হতে না হতেই বন্যা চলে আসে। ফলে অনেকেই নামকা ওয়াস্তে বন্যা শুরুর কয়েকদিনের মাথায় কাজ করলেও পরে বন্যায় ক্ষতি দেখানো হয়। তবে তারা জানান,নজরদারী বাড়ানোসহ বছরের শুরু এবং বন্যার পরে প্রকল্প দিলে দুর্নীতি অনেকটাই কমে আসবে বলে তারা ব্যক্তিগত মত দেন। 

চিলমারী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে থানাহাট ইউনিয়নে টিআর-২৮টি প্রকল্পে ৪ কোটি ৫২ লাখ ১ হাজার ৩১০টাকা। কাবিখা প্রকল্পে ১৩০.৬৫৪ মে.টন গমসহ ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯১ টাকা। কাবিটা-৩টি প্রকল্পে ০১ কোটি ২২লাখ ০৮ হাজার ১৫০টাকা। রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে টিআর- ১৬টি প্রকল্পে ০১ কোটি ৭৭ লাখ ০৮ হাজার ৩২৭টাকা। কাবিখা প্রকল্পে ১৬.৪১২২ মে.টন গমসহ ১২লাখ ৩১হাজার ৯০টাকা। কাবিটা-১টি প্রকল্পে ৩লাখ ২২ হাজার টাকা। অস্টমিরচর ইউনিয়নে টিআর-১০টি প্রকল্পে ০১ কোটি ৭৭ লাখ ৮ হাজার ৪৪৬টাকা। কাবিখা প্রকল্পে ১০.৫০১ মে.টন গমসহ ৩লাখ ৮৩হাজার ৭৩০টাকা। কাবিটা-৬টি প্রকল্পে ০২ কোটি ৪০ লাখ ০৬ হাজার ৩২০টাকা। নয়ারহাট ইউনিয়নে টিআর-৪টি প্রকল্পে ০৯লাখ ৪৭হাজার ৮২০টাকা। কাবিখা প্রকল্পে ০৮.০৫২ মে.টন গমসহ ০২লাখ ৮৩হাজার ৩৬০টাকা। কাবিটা- ০৫লাখ ৬৭হাজার ৬৩০টাকা। রমনা ইউনিয়নে টিআর-১১টি প্রকল্পে ০১ কোটি ৩৫লাখ ০৬হাজার ৬৯৮টাকা। কাবিখা প্রকল্পে ৩৯.১৯৬ মে.টন গমসহ ০৩লাখ ২২হাজার ৬৩০টাকা। চিলমারী সদর ইউনিয়নে টিআর-৯টি প্রকল্পে ০১ কোটি ৫৪ লাখ ০৪ হাজার ২৬০টাকা। কাবিখা প্রকল্পে ৩২.০৪৫মে.টন গমসহ ০২লাখ ৪৪হাজার ৭২০টাকা।  

চিলমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কোহিনুর রহমান বলেন, কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রকল্প কমিটিকে চেকের মাধ্যমে টাকা প্রদান করা হয়। অনেকেই প্রকল্পের বিষয় জানেন না প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিষয়টি অস্বীকার করে  বলেন, সবাই প্রকল্পের বিষয় জানেন।  

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোঃ শামসুজ্জোহা জানান, এই উপজেলার বালু মাটি হওয়া রাস্তা সংষ্কারে স্থায়ীত্ব কম হয়ে যায়। এরপর বন্যায় প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হবার দাবী করেন এই কর্মকর্তা। তবে অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দেন।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –