• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় হচ্ছে বাসকপাতার চাষ

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০২১  

কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অধুনালুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার কাঁচাপাকা ৮ কিলোমিটার সড়কের দুধারে বাসকপাতার সৌন্দর্য দেখলেই মন ভরে যায়। অপরিচিত কেউ দাসিয়ার ছড়ায় আসলে গাড়ি থামিয়ে ছবি তুলে চলে যায়।

ফুলবাড়ী উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে দাসিয়ারছড়া। আগে ভারতের একটি ছিটমহল হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০১৫ সালে 'স্বাধীনতা' ফিরে পায় দাসিয়ার ছড়ার বাসিন্দারা। তারপর থেকে সরকার তাদের উন্নত জীবন ও আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ব্যাপক উন্নয়ন করে। দাসিয়ারছড়ার রাস্তার দুই ধারে ঔষধি গাছ বাসকের গাছের সারি চোখে পড়ে।

ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে বাস্তবায়িত স্বপ্ন প্রকল্পের ১৭ জন নারী কর্মী ১০ বছরের জন্য বাসকপাতার লিজ নিয়েছেন। তাদের অনেকে বাড়ির আশপাশে খোলা জায়গায় বাসক চাষ করে বাড়তি আয়ের উৎস খুঁজে পেয়েছেন। সড়কের ধারে ঔষধি গাছ বাসকের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন তারা। তাদের চাষ করা ঔষধি বাসকপাতা কিনে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন নামকরা ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।

দাসিয়ারছড়ার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮ সালের শেষ দিকে দাসিয়ারছড়ায় রাস্তার ধারে ১৮ হাজার বাসকের চারা রোপণ করতে উদ্বুদ্ধ করেন কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক মোসা. সুলতানা পারভীন। ৮ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে, বাড়ির আনাচে-কানাচে ও পতিত জায়গায় বাসকের চারা রোপণ করেন উদ্যোক্তরা। একবছরের বেশি সময় পর প্রথম পাতা সংগ্রহ শুরু হয়। প্রথমবার বাসকপাতা ১১ হাজার টাকা বিক্রি করেন। ৪ মাস পর দ্বিতীয় দফায় ৩১ হাজার টাকার বাসকপাতা বিক্রি করেন। এখন প্রতিকেজি শুকনো বাসকপাতা ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ১৭ জন স্বপ্ন প্রকল্পের কর্মীদের যৌথ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করা হয়। বাসকপাতার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা থাকলেও অনেকে এর ঔষধি উপকারিতা না জানার কারণে আগাছা ভেবে উপড়ে দেন। এ কারণে ১৮ হাজার চারার মধ্যে এখন অর্ধেকের কম চারা রাস্তার ধারে চোখে পড়ে। ঔষধি উপকারিতা না জানায় অনেকে বাসকগাছ কেটে সেখানে উদ্ভিদ গাছ লাগাচ্ছেন। যার ফলে বাসকগাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

স্বপ্ন প্রকল্পের ইউনিয়ন ফেসিলেটর মোসা. হেলেনা খাতুন বলেন, চার মাস পরপর বাসকের কাঁচা পাতা সংগ্রহ ও গাছ পরিষ্কার করতে হয়। এরপর দু-তিন ঘণ্টা বিরতি দিয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে পাতা শুকাতে দিতে হয়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক গাছ থেকে তিন মাস পরপর চার কেজি কাঁচা পাতা পাওয়া যায়, যা শুকিয়ে হয় এক কেজি। প্রতিকেজি বাসকপাতা ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হয়। তিনি বলেন, কিছু মানুষ এই গাছের উপকারিতা না জেনেই কেটে ফেলছে। এ কারণে গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশীদ জানান, ছোট থাকতে অনেক বাসকচারা নষ্ট হয়েছে। এখন সবাই পরিচর্যা করে। বাসকের পাতায় কিছুটা দুর্গন্ধ থাকায় পশুরা তা খায় না। কেউ যদি স্বেচ্ছায় বাসকগাছের ক্ষতি করে তাহলে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বন বিভাগের তথ্যমতে, বাংলাদেশে বাসকপাতার যে চাহিদা রয়েছে তার ১০ ভাগ দেশ থেকে যোগান দেওয়া হয়। বাকি কাঁচামাল ভারত থেকে আমদানি করা হয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ জানেই না বাসকগাছের ঔষধি ও বাণিজ্যিক মূল্য।

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ বলেন, রাস্তার ধারে উদ্ভিদ গাছের পরিবর্তে ভেষজ বা ঔষধি গাছ লাগালে আয় হবে, পরিবেশ ভালো থাকবে এবং মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে। বাসকপাতার অনেক সম্ভাবনা আছে। কেউ যদি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে চায় আমরা তাদের সহযোগিতা করব।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –