• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দাদন ব্যবসা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

দাদন শব্দটি ফার্সি। এর অর্থ আগাম। কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাবসায়িক চুক্তির স্মারক হিসেবে কোনো আগাম দিলে তাকে দাদনদার বলা হয়। আঠারো শতকে বাংলায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির ব্যবসা-ব্যবস্থাপনায় দাদনি কথাটি একটি বাণিজ্যিক বুলি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ভাষা ও অন্য আয়োজক ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে কম্পানি বাজার থেকে পণ্য সংগ্রহের জন্য যে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিযুক্ত করত, তাদের দাদনি ব্যবসায়ী বলা হতো। তারা কিছু নির্ধারিত শর্তে পণ্য সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতিতে কম্পানির কাছ থেকে আগাম অর্থ গ্রহণ করত। 

স্থানীয় বাজারে গিয়ে নির্ধারিত সময় ও বর্ণনা অনুযায়ী, পণ্যের সরবরাহের শর্তে প্রকৃত উৎপাদককে আগাম হস্তান্তর করার জন্যই তাদের এ অর্থ প্রদান করা হতো। দাদনি ব্যবসায়ীরা সরাসরি প্রকৃত উৎপাদককে কিংবা দালাল বা পাইকার (স্থানীয়  আড়তদার) নামে অভিহিত দ্বিতীয় পর্যায়ের মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ওই দাদন হস্তান্তর করত। দাদন ব্যবসায়ী এ কাজটি করত একটি নির্ধারিত বাট্টা বা কমিশনের বিনিময়ে, যার একটা অংশ অন্য মধ্যস্থতাকারী তথা দালালরাও পেত। বহু দাদনি ব্যবসায়ী যথাসময়ে পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হতো, এমনকি তাদের অনেকে আগাম দেওয়া কম্পানির অর্থ নিয়ে গা-ঢাকা দিত। এসব কারণে ১৭৫৩ সালে দাদনি প্রথা রহিত করা হয়। (বাংলাপিডিয়া, দাদনি প্রথা)

কিন্তু ইংরেজরা দাদনি প্রথা বিলুপ্ত করলেও কালক্রমে আবহমান গ্রাম বাংলায় এই প্রথা নানাভাবে এখনো প্রচলিত। এবং এই প্রথা সম্পূর্ণ সুদের ভিত্তিতে প্রচলিত ও পরিচালিত। এক অর্থে দাদন ব্যবসা মূলত দাসত্বের চিহ্ন! ব্রিটিশদের গোলামির চিহ্ন!

সুদের কারবারি মহাজনরা গ্রামের গরিব চাষিদের সুদে ঋণ বা দাদন দেয় এবং নির্ধারিত সময়ে সুদে-আসলে তা আদায় করে। বাংলা দাদনি প্রথা টিকে আছে প্রধাণত ব্যবসায়ীদের মধ্যে এবং বিভিন্ন পল্লী উন্নয়ন সমিতির ব্যানারে।  ২২ জানুয়ারি ২০১৭ প্রথম আলোর একটি খবরের শিরোনাম হলো, ‘দাদন ব্যবসার ফাঁদে পড়ে জেলেরা নিঃস্ব’। খবরে বলা হয়েছে, ‘মাছ ধরার জাল, নৌকা ও ট্রলার কেনার জন্য বৈদ্যেরবাজার ফিশারিঘাটের আড়তদার ও মহাজনদের কাছ থেকে প্রতিবছর ঋণ নেন জেলেরা। স্থানীয় ব্যক্তিরা একে দাদন ব্যবসা বলেন। জেলেরা যে পরিমাণ টাকা দাদন নেন, প্রতিদিন সেই টাকার ১৫ শতাংশ দাদন ব্যবসায়ীদের দিতে হয়। পাশাপাশি জেলেদের নিজ নিজ দাদন ব্যবসায়ীর আড়তে এনে মৌখিক নিলামে মাছ বিক্রি করতে হয়। আর নিলামে ওঠার আগেই জেলেদের মজুত মাছের এক-দশমাংশ আড়তদার সরিয়ে রাখেন। সরিয়ে ফেলা মাছ পরে আবার নিলামে তুলে বিক্রি করা হয়।’

এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিওর ব্যানারে ঋণ কর্মসূচির নামে চলছে চড়া সুদে দাদন ব্যবসা। আবার কোথাও দাদনের কারবারের সঙ্গে ‘ইসলামী শরিয়াভিত্তিত পরিচালিত’ স্লোগান জুড়ে দেন। আসলে এগুলো স্পষ্ট সুদি কারবার। যে নামেই হোক না কেন, যে পদ্ধতিতেই হোক না কেন—সুদভিত্তিত যেকোনো কার্যক্রম ইসলামে নিষিদ্ধ। কোনো মুসলমান এমন ঘৃণ্য ব্যবসায় জড়িত হতে পারে না।

ইসলামী অর্থব্যবস্থায় সুদ খুবই নিকৃষ্ট পাপ। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘সুদ ভক্ষণকারীরা এমনভাবে (কবর থেকে) দাঁড়াবে যেন সে শয়তানের স্পর্শে উন্মাদ হয়েছে। কারণ তারা বলে বেড়ায় যে সুদ তো ব্যবসার মতো, অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৫)

বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে রাসুল (সা.) সুস্পষ্টভাবে সুদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। সালমান বিন আমর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, আমি বিদায় হজে রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘শুনে রাখো, জাহেলি যুগের সব ধরনের সুদ রহিত করা হলো। সর্বপ্রথম আমি আমাদের আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিবের পাওনা সুদ রহিত করছি। তোমরা শুধু মূলধন পাবে। অন্যদের জুলুম কোরো না। তোমাদেরও জুলুম করা হবে না। জাহেলি যুগের সব রক্তপণ পরিত্যাজ্য। সর্বপ্রথম আমি হারিস বিন আবদুল মুত্তালিবের রক্তপণ রহিত করছি। সে বনু লাইসে দুধ পান করত। তাকে হুজাইল হত্যা করেছে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩৩১৮)

রাসুল (সা.) সুদে জড়িতদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন। জাবের (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) অভিসম্পাত করেছেন সুদখোর, সহযোগিতাকারী, সুদের লেখক ও সাক্ষ্যদাতাদ্বয়কে। আর তারা সবাই সমান পাপী।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩০৯৬)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –