• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

দুই নেতার দ্বন্দ্বে ‘খেই হারা’ যুবদল

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০২০  

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন পার করে চার বছরে গড়ালেও কমিটি দিতে পারছে না বিএনপির অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুবদল। পাঁচজনকে নিয়ে ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির তিন বছর পর আংশিক কমিটি নিয়ে থাকা সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি আটকে আছে প্রভাবশালী দুই নেতার কোন্দলে।

সংগঠনের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি না থাকা আর নেতাদের কোন্দল মাঠের কর্মসূচিতেও প্রভাব ফেলেছে। আর এই কারণেই দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুবদল কর্মীদের অংশগ্রহণ কমেছে। একই সঙ্গে কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা নেমেছে।

যদিও যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের দাবি, রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশের মধ্যেও যুবদল সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। আর কমিটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নেই বলেও দাবি তার।

অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে, বলয় ভারী করা নিয়ে সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া সম্ভব হয়নি। এই অবস্থার মধ্যে পদপ্রত্যাশী শীর্ষ নেতারা ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এসময়ের মধ্যে কমিটি না হলে তারা আন্দোলনে যাবেন।

২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি তিন বছরের জন্য যুবদলের ‘সুপার ফাইভ’ কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু পাঁচজনের কমিটি তিন বছর পার করে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ১১৪ সদস্যের আংশিক কমিটি দেয়। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৭১ সদস্যের কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে হবে না নির্দিষ্ট করে এখনো বলতে পারছেন না যুবদলের দায়িত্বশীল কেউ।

যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, ‘টাইম ফ্রেম দিয়ে রাজনীতি হয় না। বাস্তব অবস্থার কারণে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারিনি। চেষ্টা অব্যাহত আছে। যেকোনো সময় দেয়া হবে।’

হুমকিদাতাদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যুবদলে হাজার হাজার পদপ্রত্যাশী। এখানে কে কি বললো সেটা বড় বিষয় না। যারা মাঠে সক্রিয় ছিলো তাদের মূল্যায়ন করা হবে।’

জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবি নিয়ে গত শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে মাঠের আন্দোলন-কর্মসূচিতে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের মূল্যায়ন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। অন্যথায় তারা আন্দোলনে নামবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক এক সদস্য বলেন, ‘শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজেদের পাল্লা ভারী করার চেষ্টা করছেন বলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে না।’

বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আংশিক কমিটিতে যারা পদ পেয়েছে তাদের বেশিরভাগই যুবদলের সবশেষ কমিটির। যেখানে সভাপতির লোকজন বেশি। আর সাবেক ছাত্রদল নেতাদের যারা পদ পেয়েছেন তারা সাধারণ সম্পাদকের বলয়ের। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ সম্পাদকের লোকজনকে পদ দিতে হবে। এখানেই সভাপতির অনীহা।

জানা গেছে, বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার পছন্দের হলেও সভাপতির সঙ্গে কুলিয়ে উঠছেন না (টুকু) সাধারণ সম্পাদক। তিনি বারবার চেষ্টা করছেন কিন্তু নীরব (সভাপতি) দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পছন্দের হওয়ায় বেশিদূর এগুতে পারছেন না।

যদিও এমন অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্যের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে যুবদল সভাপতি বলছেন, ‘আমরা এক। এখানে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা সবকিছু আলোচনা করেই করছি। যারা এসব বলে তাদের মতলব খারাপ।’

আর এসব বিষয় নিয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এদিকে সংগঠনে গতি আনতে আংশিক কমিটি দেয়ার পর ১১টি সাংগঠনিক টিম সারাদেশে মাঠে নামায় যুবদল। প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার ইউনিয়ন পর্যন্ত সব ইউনিটে তারা মতবিনিময় করা, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙ্গে আহ্বায়ক কমিটি করার নির্দেশনা দেয়া হয়। মাঠ পর্যায়ের সাংগঠনিক চিত্র কেন্দ্রে জমা দেয়ার জন্যও বলা হয়েছিল।

সে অনুযায়ী কাজ শুরু হলেও সফর নিয়ে শুরুতেই সমালোচনা হয় সংগঠনের অভ্যন্তরে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করে আংশিক দিয়েই এমন সফরের বিরোধিতাও করেন কেউ কেউ। এরপরও সফর শুরু হলে কোথাও কোথাও সাংগঠনিক টিমের সদস্যদের বিরুদ্ধে কমিটি দেয়ার নামে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে।

পরে কয়েকজনকে টিমের তালিকা থেকে বাদও দেয়া হয়। কোথাও কোথাও দ্বন্দ্বের জেরে বাধার মুখেও পড়তে হয় নেতাদের। এমন বাধার কারণে গত ২১ সেপ্টেম্বর নরসিংদীর কয়েকটি ইউনিটে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত থাকলেও করতে পারেনি যুবদলের নেতারা।

যুবদলের একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা তো কেউ ধোয়া তুলসি পাতা তা নয়। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর অনেক সময় সেসব কমিটি স্থগিত করেছি। পরে সিদ্ধান্ত দিয়েছি।’ আর দুই শীর্ষ নেতার দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কৌশলে এড়িয়ে যান এই নেতা।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে যুবদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু বলেন, ‘প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা কাজ করেছি। সংগঠনের সাংগঠনিক কাঠামো হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ার কারণ নেই। পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো হলেই কমিটি দেয়া হবে। চেষ্টার ত্রুটি নেই।’

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –