• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

লালমনিরহাটে পিটিয়ে হত্যার পর পুড়িয়ে ফেলা জুয়েল ছিলেন ধার্মিক

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২০  

গুজবে কান দিয়ে শহিদুন্নবী জুয়েল নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে বিক্ষুব্ধরা। হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা, আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে জুয়েলের লাশ। অথচ সেই জুয়েল ছিলেন ধার্মিক ও সহজ-সরল। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি কোরআন-হাদিস পাঠ করতেন।

শুক্রবার রংপুর নগরীর শালবনে নিহত শহিদুন্নবী জুয়েলের বাসায় গিয়ে স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয়ে জানা গেছে। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার গুজব থেকে জুয়েলকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা।

নিহত জুয়েল রংপুর শহরের শালবন রোকেয়া সরণি এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক লাইব্রেরিয়ান ছিলেন। তার বড় মেয়ে জেবা তাসনিম এবার এইচএসসি পাস করেছেন। ছেলে তাশিকুল ইসলাম ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

এমন এক ধার্মিক যুবক নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শুক্রবার সকালে শালবনে জুয়েলের বাসায় ভিড় জমান এলাকাবাসীসহ আত্মীয়-স্বজনরা। স্বজনদের কান্না ও আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে রংপুর শহরের আকাশ-বাতাস।

স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে চাকরি চলে যাওয়ায় জুয়েলের একমাত্র আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন। ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ খেতেন।

জুয়েলের বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেকটি ঘরে পবিত্র কোরআন, হাদিসসহ ইসলামিক বিভিন্ন বই। ঘরের আলমারি ও দেয়ালে ঝুলছে ইসলামিক বিভিন্ন নিদর্শন ও দোয়ার ছবি। তার স্ত্রী হাতে তসবিহ নিয়েই আহাজারি করছেন। স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

জুয়েলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার মুক্তা আহাজারি করতে করতে বলেন, আমার স্বামী অনেক সহজ-সরল ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি কোরআন-হাদিস পড়তেন। প্রত্যেক বছরই তিন-চারবার করে কোরআন খতম দিতেন। করোনাভাইরাসের সময় কয়েকবার কোরআন খতম দিয়েছেন। আগামী বছর আমাকে নিয়ে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি কোরআন অবমাননা করতে পারেন কোনোভাবেই আমি বিশ্বাস করি না। যারা গুজব ছড়িয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।

নিহতের বোন হাছনা আক্তার নিতি বলেন, ২০১৬ সালে ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ রংপুরের লাইব্রেরিয়ান পদে ষড়যন্ত্র করে জুয়েলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য করা হয়। এতে প্রচণ্ড রকমের মানসিক ধাক্কা খান আমার ভাই। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধর্মের দিকে মনযোগ দেন। জুয়েল নিয়মিত কোরআন-হাদিসসহ ইসলামিক বই পড়তেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতেন।

হাছনা আক্তার বলেন, আমি শুনেছি জুয়েলের বন্ধুসহ ওষুধ আনতে গিয়ে বুড়িমারীতে মসজিদে আসরের নামাজ পড়ে সেখানের দেয়ালের তাকে রাখা কোরআন নিতে যান। এ সময় অসাবধানতাবশত কোরআন ও হাদিসের বই পায়ের কাছে পড়ে যায়। এটা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

জুয়েলের বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পি বলেন, আমরা প্রায় ৪০ বছর ধরে একই এলাকায় থাকি। ছোটবেলা থেকে তাকে চিনি। একসঙ্গে খেলাধুলাসহ নানা কাজ করতাম। জুয়েল আমাকে সবসময় নিজের বিষয়গুলো জানাতেন। নামাজের সময় হলে তিনি নামাজে ছুটে যেতেন। আশপাশের লোকজনকেও নামাজের জন্য ডাকতেন। ষড়যন্ত্রে চাকরিটা চলে যাওয়ার পর জুয়েল অনেকটা ভেঙে পড়েন। ফলে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধর্মের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –