• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

সওয়াব কী ও কেন

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২০  

‘সওয়াব’ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো প্রতিদান। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রতিদান চাইবে, আমি তাকে তার অংশ দিয়ে দেব। আর যে ব্যক্তি পরকালের প্রতিদান চাইবে, আমি তাকে তার অংশ দিয়ে দেব। আর যারা কৃতজ্ঞ, আমি শিগগিরই তাদেরকে তাদের পুরস্কার দিয়ে দেব।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৫)

প্রখ্যাত ইসলামী পরিভাষাবিদ আল্লামা জুরজানি (রহ.) সওয়াবের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, ‘সওয়াব হলো ওই বস্তু, যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের উপযুক্ত হওয়া যায় এবং মহানবী (সা.)-এর সুপারিশ পাওয়া যায়।’ এ ব্যাপারে মুফতি জামালুদ্দীন সুবহানি (রহ.)-এর ব্যাখ্যা চমৎকার! তিনি বলেন, ‘সওয়াব হলো জান্নাতের কারেন্সি। দুনিয়াতে যেমন যার কাছে কারেন্সি ও অর্থ বেশি থাকে, তার জীবনযাত্রাও উন্নত হয়, ইচ্ছা হলেই যেকোনো জিনিস ভোগ করতে পারে। আর যার কাছে অর্থকড়ি কম থাকে, তার জীবনযাত্রা নিম্নমানের হয়ে থাকে। তেমনি জান্নাতেও যার অ্যাকাউন্টে সওয়াব যত বেশি থাকবে, সে তত বেশি ভোগ করতে পারবে। জান্নাতে সব মানুষের মান নির্ণীত হবে সওয়াবের আধিক্যের মাধ্যমে।’

সওয়াব পাওয়ার শর্ত : সওয়াব পাওয়ার জন্য কোনো কাজে বিশুদ্ধ নিয়ত থাকতে হবে। নিয়ত ছাড়া কোনো কাজে সওয়াব মেলে না। কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তাদের কেবল এই আদেশই করা হয়েছিল যে তারা আল্লাহর ইবাদত করবে, খালেস ও একনিষ্ঠভাবে তাঁরই আনুগত্য করবে এবং নামাজ কায়েম করবে ও জাকাত দেবে। আর এটাই সরল-সঠিক দ্বিন।’ (সুরা : বায়্যিনাহ, আয়াত : ৫)

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সব কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ীই প্রতিদান পাবে।’ (সহিহ বুখারি)

নিয়তের কারণে সওয়াব হয় : মানুষ কখনো কখনো ভালো নিয়তের কারণে আমল না করেও সওয়াব পেয়ে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের আশা করল, অতঃপর তা করতে পারল না, তবু তার জন্য সওয়াব লেখা হবে।’ (সহিহ বুখারি)

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি শয়নকালে রাত্রিবেলায় তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার নিয়ত করে শুয়েছে, কিন্তু অতিরিক্ত ঘুমের চাপে ভোর হয়ে গেছে, সে তার নিয়ত অনুযায়ী সওয়াব পাবে। তার ঘুমই আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াব হিসেবে গণ্য হবে।’ (নাসাঈ শরিফ : ৩/২৫৮)

অন্যকে সওয়াব পাঠানো যায় : নামাজ, রোজা, হজ, সদকা, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির ইত্যাদি আদায় করে অন্যকে সওয়াব পাঠানো যায়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিজের ও সব মুমিন-মুমিনার জন্য ক্ষমা চাও।’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ১৯)

একবার রাসুল (সা.) দুটি সাদা-কালো মিশ্রিত বকরি কোরবানি করেছিলেন। একটি নিজের পক্ষ থেকে অন্যটি উম্মতের সওয়াবের উদ্দেশ্যে। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৪/২২)

আমর ইবনুল আস (রা.)-কে লক্ষ্য করে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমানের পক্ষ থেকে তুমি গোলাম আজাদ করলে, সদকা করলে ও হজ করলে সে তার সওয়াব পাবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৮৩)

উল্লিখিত আয়াত ও হাদিস থেকে বোঝা যায় যে নিজে আমল করেও অন্যকে সওয়াব পৌঁছানো যায়।

বিপদাপদের কারণে সওয়াব : আল্লাহ তাআলা এতই মেহেরবান যে তিনি কোনো কারণে আমাদের ওপর আপতিত বিপদাপদের বিনিময়েও সওয়াব দিয়ে থাকেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যেসব বিপদাপদ আসে, এর মাধ্যমে আল্লাহ তার পাপ মাফ করে দেন। এমনকি শরীরে কাঁটা ফুটলেও এর কারণে পাপমোচন হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৪০)

মুসতাদরাকে হাকেমের একটি বর্ণনায় আছে, ‘তার জন্য একটি নেকি লেখা হবে এবং তার মর্যাদা এক ধাপ বৃদ্ধি করা হবে।’ (হাদিস : ১২৮৪)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪১)

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –