• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

সময়ের চেয়ে অগ্রসর বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গেমস

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০২১  

ইকরামউজ্জমান 

আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি ছাড়াও ক্রীড়াঙ্গনসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন এবং অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে তাঁর নামকরণে ‘বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস’—সর্ববৃহৎ ক্রীড়া উৎসবের (১ থেকে ১০ এপ্রিল) আয়োজন করেছে। ৩১টি খেলায় অংশ নেবেন হাজার হাজার পুরুষ-মহিলা খেলোয়াড় ও ক্রীড়াবিদ। এই গেমস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ১ থেকে ১০ এপ্রিল ২০২০। করোনাভাইরাসের জন্য ঠিক এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেভাবে এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে টোকিও অলিম্পিক। উভয় ক্ষেত্রে ক্রীড়াবিদদের মনে বাজছে এখন আগমনী সুর!

বঙ্গবন্ধু সারা জীবন রাজনীতি ও মানুষের অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকলেও ছিলেন মনেপ্রাণে ক্রীড়াপিপাসু ও ক্রীড়া মানসিকতা বান্ধব একজন উদার হূদয়ের মানুষ। খেলাধুলার প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ দুর্বলতা। ক্রীড়াঙ্গন এবং সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ছিল তাঁর অন্য এক ধরনের আবেগ ও ভালোবাসা। তিনি ক্রীড়াঙ্গনের সব খোঁজখবর জানতেন ও রাখতেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ক্রীড়াঙ্গনে যথাযথ গুরুত্ব ও মর্যাদার সঙ্গে উদযাপনের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক, যৌক্তিক ও অপরিহার্য। ক্রীড়াঙ্গন এখন আর শুধু বিনোদন চত্বর নয়। এর গুরুত্ব ও মর্যাদা পুরোপুরি পাল্টে গেছে। ক্রীড়াঙ্গনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির চরিত্রের প্রতিফলন লক্ষণীয় হচ্ছে। খেলার বিজয় আনন্দে মিশে থাকে জাতিগত আত্মমর্যাদাবোধ আর অহং জাতিসত্তার গৌরবানুভূতি। বঙ্গবন্ধুর যে বিষয়টি উল্লেখ করতেই হবে সেটি হলো তিনি সব সময় মানুষকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেছেন। মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারাননি। মানুষকে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করার তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা ছিল বলেই তিনি গণমানুষের নেতা হতে পেরেছেন। পেরেছেন ব্যক্তিমানুষের শক্তিমত্তাকে টেকসই পরিবর্তনে কাজে লাগাতে। বঙ্গবন্ধু সময় পড়তে কখনো ভুল করেননি। ক্রীড়াঙ্গনে আমরা দেখেছি বঙ্গবন্ধু ছিলেন সময়ের আগে। তাঁর উদ্যোগ ও ভূমিকার ফল ক্রীড়াঙ্গন এখন পাচ্ছে।
জাতি অবিবাহিত করছে ইতিহাসের অন্যতম ঘটনাবহুল ও রোমাঞ্চকর সময়—ক্রীড়াঙ্গনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের এখন অনেক বেশি গুরুত্ব। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বসমাজের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছে। দেশ এগিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাঙালি জাতীয়তাবাদী শক্তি এখন ঐক্যবদ্ধ। ক্রীড়াঙ্গনেও আমাদের অনেক অর্জন আছে। তবে আরো বেশি হতে পারত যদি সঠিকভাবে ক্রীড়াঙ্গন পরিচালিত হতো। সামাজিক অন্য ক্ষেত্রগুলোতে উল্লেখ করার মতো এগিয়ে যাওয়া যদি সম্ভব হয়, তাহলে ক্রীড়াঙ্গনে হবে না কেন। আমাদের আছে তরুণ সম্ভাবনাময়ী বড় মানবসম্পদ। তারা দেশের জন্য সব সময় প্রস্তুত।

স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে ছিলেন তিন বছরের বেশি কিছু সময়। তিনি সব সময় চেয়েছেন মুখরিত ক্রীড়াঙ্গন। সবার ক্রীড়াঙ্গন। উজ্জ্বল ক্রীড়াঙ্গন। পুরুষ-নারী বৈষম্যহীন ক্রীড়াঙ্গন।

ক্রীড়াঙ্গনের দিকে মনোযোগের সঙ্গে তাকালে যে কেউ দ্বিধাহীন চিত্তে বলবেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন সময়ের চেয়ে অগ্রসর একজন নেতা। ক্রীড়াঙ্গন ঘিরে তাঁর নিজস্ব দর্শন ছিল। তিনি কখনো তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাসকে ক্রীড়াঙ্গনে টেনে আনেননি। সব সময় বলেছেন, ক্রীড়াঙ্গনে রাজনীতির স্থান নেই। স্থান নেই দলীয় রাজনীতির। স্বাধীনতার পর পর নতুন করে শূন্য থেকে ক্রীড়াঙ্গনকে পূর্ণ করার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি বিভিন্ন খেলায় ফেডারেশনে কার্যনির্বাহী কমিটিতে যোগ্য সংগঠকদের অন্তর্ভুক্তি। ৪৬ বছর আগে বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াঙ্গন ঘিরে যে চিন্তা করেছিলেন, নির্দেশ দিয়েছিলেন, উপদেশ দিয়েছিলেন এবং উদ্যোগ নিয়েছিলেন—এগুলো অসাধারণ। তাঁর চিন্তা ও উদ্যোগ নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক গবেষণার দরকার আছে। চিন্তা ও দার্শনিকতায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাধারণ। তাঁর প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের শেষ নেই। প্রথম থেকেই তিনি ক্রীড়াঙ্গনের চিন্তাকে বড় করে দেখেছেন।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের দিশারি বাতিঘর। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে নতুন করে ক্রীড়াঙ্গনকে শূন্য থেকে শুরু করার ক্ষেত্রে তাঁর উদ্যোগ ও ভূমিকা কখনো ভোলার নয়। মৃত্যু তাঁকে থামাতে পারেনি। ইতিহাস তাঁকে বন্দি করতে পারেনি। তিনি ৪৬ বছর ধরে সশরীরে ক্রীড়াঙ্গনে নেই সত্য; কিন্তু তিনি ক্রীড়াঙ্গনে সব সময় আছেন আমাদের মধ্যে আদর্শ, নীতি, দর্শন ও অনুপ্রেরক হিসেবে। এখন দরকার আত্মসমালোচনা ও আত্মজিজ্ঞাসার। কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ ক্রীড়াঙ্গনে। অনেক ক্ষেত্রে কি উল্টোভাবে চলা হচ্ছে না। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমাদের ক্রীড়াঙ্গন কি পাকিস্তানের মানসিকতা থেকে মুক্ত হয়েছে? আজকের বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন কতটা ভিন্ন? ক্রীড়াঙ্গনে নারীরা এগিয়ে চলেছেন, ভীষণ সীমাবদ্ধতার মধ্যে। দেশের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন থেকে গৌরব বহন করে আনছেন। বঙ্গবন্ধু প্রথমেই নারীদের ক্রীড়াঙ্গনে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। নারীরা এখনো ক্রীড়াঙ্গনে পুরুষদের তুলনায় পিছিয়ে আছেন। তাঁরা ক্রীড়াঙ্গনে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। তার পরও তাঁরা নিজেদের আকাঙ্ক্ষাকে মলিন হতে দেননি। লক্ষ্য ও স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছেন।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসকে অর্থবহ করতে পারলে ক্রীড়ানুরাগী জাতির পিতার প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন সম্ভব হবে। ক্রীড়াঙ্গনে সংগঠকদের সংস্কারমনস্ক হওয়া ছাড়া উপায় নেই। প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে যেতে হবে। বেরিয়ে আসতে হবে। ক্রীড়াঙ্গনে ‘অগ্রাধিকার’ শব্দটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর বাস্তবায়ন ছাড়া ক্রীড়াঙ্গনের বড় পরিবর্তন আসবে না। ক্রীড়াঙ্গনের আবেগে আদর্শবোধ ও জাতীয় স্বাধীনতার চেতনা বিবেচিত হওয়া উচিত।

লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্লেষক

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –