• সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ছেলের হাতেই খুন হন দেলদার মিয়া, চার বছর পর খুলল জট

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

রংপুরের পীরগঞ্জে এক কৃষককে হত্যার চার বছর পর এর রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাবাকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যার দায় ইতিমধ্যে স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন ছেলে সোহেল মিয়া ওরফে লেবু।

আজ মঙ্গলবার (২২ ফ্রেব্রুয়ারি) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআইর রংপুর জেলা পুলিশ সুপার এ বি এম জাকির হোসেন।

তিনি জানান, ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পীরগঞ্জের চাপাবাড়ি গ্রামের কৃষক দেলদার মিয়াকে (৬০) অচেতন অবস্থায় বাড়ির পাশের একটি বাঁশঝাড় থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন স্থানীয়রা। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে মৃত্যু হয় কৃষক দেলদার মিয়ার।

এ ঘটনায় রংপুরে কোতোয়ালি থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর একটি মামলা রুজু হয়। পরে মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন কৃষক দেলদার মিয়ার মৃত্যুকে অন্তিম ও নরহত্যা প্রকৃতির উল্লেখ করা হয়। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানা থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পীরগঞ্জ থানায় পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয় পীরগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে ২০১৯ সালের ৫ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কিন্তু আদালত মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআই রংপুরকে নির্দেশ দেন। এরপর মামলাটির তদন্ত শুরু করেন পিবিআইর এসআই শফিউল আলম।

তদন্তকালে তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মৃত দেলদার মিয়ার মেজো ছেলে সোহেল মিয়া ওরফে লেবু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তাকে আদালতে নেওয়া হলে নিজ বাবাকে পিটিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন সোহেল মিয়া।

পুলিশ সুপার এ বি এম জাকির হোসেন আরো জানান, ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কৃষক দেলদার মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে দেলোয়ারা বেগম কিছু বাঁশ ও বাঁশখড়ি নেওয়ার জন্য বাড়িতে আসে। এ নিয়ে দেলদার মিয়ার চতুর্থ স্ত্রী শাহার বানুর সঙ্গে সতীনের মেয়ে দেলোয়ারার ঝগড়া-বিবাদ হয়। দেলোয়ারা বাঁশঝাড়ে বাঁশ কাটতে গেলে তার বাবা দেলদার মিয়া তাকে বাধা দেন। তখন  ঘটনাস্থলে উপস্থিত সোহেল মিয়া ওরফে লেবু মিয়া তার বোনের পক্ষ নিয়ে বাবা দেলদার মিয়ার সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে বাঁশঝাড়ে থাকা কাটা বাঁশ হাতে নিয়ে তার বাবার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করলে দেলদার মিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

বিষয়টি ধামাচাপা দিতে দেলদার মিয়ার মৃত্যুর ঘটনাকে দুর্ঘটনা- অর্থাৎ বাঁশ কাটতে গিয়ে আকস্মিক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করেন সোহেল মিয়া ওরফে লেবু মিয়া। এর কিছুদিন পর সোহেল গাঁ ঢাকা দেন এবং দীর্ঘদিন অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে থাকেন।

এদিকে দীর্ঘ চার বছর পর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরেছে বলে দাবি করেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ছেলে তার বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করে। কিন্তু পরিবারের লোকজন আন্তরিকভাবে সহায়তা না করায় মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে সময় লেগেছে। আসামি নিজেই আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার এ বি এম জাকির হোসেন।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –