• মঙ্গলবার ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৩০ ১৪৩১

  • || ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

ঈদ সামনে রেখে চাঙ্গা অর্থনীতি

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৪  

ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে ঢাকায়। মার্কেট-বিপণিবিতান ফ্যাশন হাউজ এবং শো-রুমগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। রমজান মাসের প্রথম রোজা থেকে বেচাবিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতারা জানিয়েছেন, তারা এখন সাধ্যমতো ঈদের শপিং করছেন। চাঁনরাত পর্যন্ত তাদের কেনাকাটা চলবে। বেচাবিক্রি বাড়ায় খুশি সাধারণ ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে মার্কেটগুলো ভরে উঠছে নতুন ও বাহারি সব পোশাক- আশাকে। ঈদের বাজারে জমজমাট ব্যবসা-বাণিজ্যের আশায় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা। ঈদের দুদিন পরই এবার বাঙালির সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ পালিত হবে সারাদেশে। মূলত এই দুই উৎসব ঘিরে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে এখন সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। ফলে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার সুযোগ এসেছে ঈদকে ঘিরে। আশা করা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ বেচাকেনায় গতি ফিরবে অর্থনীতিতে।

জানা গেছে, এবারের ঈদ ও পহেলা বৈশাখে সারাদেশে অন্তত ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এই বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনমান উন্নত হওয়ায় তাদের ভোগব্যয় ও কেনাকাটা বাড়ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন উৎসব কেন্দ্রিক এই বাণিজ্য দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণে চাপে থাকা ব্যবসা-বাণিজ্যে আবার গতি ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-বোনাস, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং ব্যক্তিগত তহবিলের অর্থ ঈদের কেনাকাটায় সাধারণত ব্যবহার করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের এক বিশাল বাজার। ঈদকে ঘিরে এই বাজারে দিন দিন আরও বড় হচ্ছে। ইতোমধ্যে এক কোটি প্রবাসী তাদের আত্মীয়-স্বজনকে ভালোভাবে রোজা, ঈদ উদযাপন এবং পহেলা বৈশাখের কেনাকাটার জন্য রেমিটেন্স পাঠাতে শুরু করেছেন। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও বিপুল পরিমাণ পণ্যসামগ্রী বিশেষ করে পোশাক,  ইলেক্ট্রনিক্স, গহনা, প্রসাধনী, ফার্নিচার এবং গাড়ি  আমদানি করা হচ্ছে। ঈদের অর্থনীতিতে পোশাক, জুতা, ভোগ্যপণ্য ও ইলেক্ট্রনিক্সের মতো শীর্ষ ১৫ পণ্যের কেনাকাটায় বাণিজ্য হবে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার ওপরে। এর বাইরে আরও অনেক রকম পণ্যের কেনাকাটা ও লেনদেন হবে ঈদকে ঘিরে। যার পরিমাণ হবে প্রায় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও উন্নত হয়েছে। অস্থিরতা ও উদ্বেগ কেটে যাওয়ায় নতুন বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করেছে। এমনকি ভোক্তা ব্যয়ও বাড়তে শুরু করেছে দেশে। সব মিলিয়ে ঈদে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকার ব্যবসায়-বাণিজ্য হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতিসহ ব্যবসায়ীদের অন্যান্য সংগঠন। 

ঈদের অর্থনীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ বলেন, ঈদকেন্দ্রিক বেচাবিক্রি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আগের কয়েক বছর করোনা মহামারির ধাক্কা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের অস্থিরতা ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যে। এখন করোনা নেই এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও কেটে গেছে। ফলে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরবে। সাধারণ মানুষ এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেনাকাটায় শামিল হবেন।

শবে বরাতের পর থেকে মার্কেট-শপিংমলে ভিড় বাড়ছে ॥ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মার্কেট- বিপণিবিতান, ফ্যাশন হাউজ এবং শো-রুমগুলোতে ঈদের বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে।  শবে-বরাতের পর থেকে মার্কেট, শপিংমল এবং ফ্যাশন হাউজগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পুরান ঢাকার পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত-ইসলামপুর, উর্দুরোড এবং বুড়িগঙ্গা নদীর ওপার কেরানিগঞ্জের পাইকারি মার্কেটগুলো থেকে ইতোমধ্যে সব ধরনের পোশাক-আষাক ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের মার্কেটগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি মার্কেট থেকে ইতোমধ্যে সব ধরনের পোশাক ও অন্যান্য উপকরণ সামগ্রী সংগ্রহ করেছেন। ফলে মার্কেটগুলোতে বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। যারা থান কাপড় কিংবা থ্রি পিস বানিয়ে পরেন তারা ভিড় করছেন দর্জিপাড়ায়। ফলে কাজের ব্যস্ততায় দর্জিরা এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। খিলগাঁওয়ের তিলপা পাড়ার বাসিন্দা কামরুন নাহার জানান, তিনি গাউছিয়া মার্কেট থেকে থ্রিপিসের কাপড় কিনে ওই মার্কেটের দোতলায় বানাতে দিয়েছেন। একইভাবে তাঁর স্বামীর জন্য পাঞ্জাবি ও পাইজামার কাপড় কিনেছেন নিউমার্কেট থেকে। সেটি বানানো হবে রমনা ভবনে। দর্জিরা জানিয়েছেন, ১০ রোজার পর তারা আর অর্ডার নিতে পারবেন না। এবার শবে-বরাতের পর থেকে তাদের কাজ বেড়েছে।

এ ছাড়া রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, ইস্টার্ন প্লাজা, মৌচাক মার্কেট, আনারকলি মার্কেট, কর্ণফুলি গার্ডেন সিটি মার্কেট, নিউ মার্কেট, চাঁদনী চক, চ›িন্দ্রমা সুপার মার্কেট, গাউছিয়া, ধানমন্ডি হকার্স, গাউসল আজম মার্কেট, রাইফেলস স্কয়ার, ক্যাপিটাল মার্কেট, ধানমন্ডি প্লাজা, মেট্রো শপিং মল, প্রিন্স প্লাজা, রাপা প্লাজায় দেখা গেছে থরে থরে সাজানো হয়েছে নতুন পোশাকে। থ্রি পিস, পাঞ্জাবি ও বাচ্চাদের পোশাক কেনায় আগ্রহী বেশি  ক্রেতারা। এছাড়া বেইলি রোড থেকে পছন্দের শাড়ি কিনছেন ক্রেতারা। যদি বেইলি রোডের কাচ্ছি ভাইতে আগুন লাগার ঘটনায় সেখানে ক্রেতা উপস্থিতি এবার একটু কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বিকেল এবং সন্ধ্যার পর ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে বেইলি রোডের শো-রুমগুলোতে। এ ছাড়া তালতলা সিটি কর্পোরেশন মার্কেট, ওয়ারী র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিট, বেইলি রোড এবং মিরপুর রোডের ফ্যাশন হাউজগুলো এখন ভরপুর নতুন নতুন পোশাকে। বেচাবিক্রিও হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া আড়ং, বাংলার মেলা, ক্যাটস আই, মেনজ ক্লাবসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুমগুলোতে বাহারি ডিজাইন ও রংয়ের পোশাক আনা হচ্ছে। রোজার শুরু থেকে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। 

ঈদের অর্থনীতি বাড়ছে ॥ প্রতিবছর নতুন নতুন চাহিদা বাড়ায় বড় হচ্ছে ঈদের অর্থনীতি। ঈদকে সামনে রেখে  সেজে উঠেছে রাজধানীসহ দেশের ছোট-বড় সব বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলো। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী  এখন কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে বাড়ছে ঈদের অর্থনীতির আকার। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে থাকবে সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বোনাস। এক কোটি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও  বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আরও প্রায় দেড় কোটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বোনাস। এছাড়া ব্যক্তিগত অর্থ এবং সঞ্চয় থেকে সাধ্যমতো মানুষ ঈদের কেনাকাটায় শামিল হবেন। এ পরিমাণ টাকার সবই ঈদ অর্থনীতিতে যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রবাসীরা ঈদ উৎসব পালনে আপনজনদের কাছে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠাতে শুরু করেছেন। মূলত প্রবাসীরা নিজেদের আপনজনদের কাছে ঈদ উৎসব পালনে বাড়তি টাকা পাঠাচ্ছেন। রোজার ঈদের পরই শুরু হবে কোরবানি ঈদের প্রস্তুতি। সেই সময়ও প্রবাসীরা বিপুল অঙ্কের রেমিটেন্স পাঠাবেন। এর ফলে ডলার সংকট কেটে বাড়বে রিজার্ভ। দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাড়াতে হলে এখন ডলারের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ঈদকে ঘিরে সেই ডলার সংকট কাটবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্যবসায়ীরা সারাবছর এই সময়ের জন্য মুখিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে ঈদকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন বিনিয়োগ করছেন। ইতোমধ্যে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে পাইকারি মার্কেটের পর এখন খুচরা পর্যায় থেকে ভোক্তারা সাধ্যমতো কেনাকাটা করছেন। তিনি বলেন, ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ অনেক বাড়াচ্ছেন। ফলে রিজার্ভ শক্তিশালী হচ্ছে। ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য যখন চাপের মুখে তখন ঈদের কারণে আমরা ডলার পাচ্ছি। এটা সবচেয়ে ভালো দিক। 

২৬ লাখ দোকানে হবে ঈদের কেনাকাটা ॥ বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, ঈদে সারা দেশের ২৬ লাখ দোকানে কেনাকাটা শুরু হবে। মুদি দোকান থেকে শুরু করে এসব দোকানের মধ্যে কাপড়ের দোকান, শো-রুম ও ফ্যাশন হাউজগুলোও রয়েছে। এসব দোকানে বছরের অন্য সময় প্রতিদিন ৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হলেও রোজার মাসে সেটি তিনগুণ বেড়ে হয় ৯ হাজার কোটি টাকা। ওই হিসাবে রোজার এক মাসে এই ২৬ লাখ দোকানে ঈদ পোশাক থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্য বিক্রি হবে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকারও বেশি। ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি টাকা লেনদেন হয় পোশাকের বাজারে। পোশাকের দোকানেই ঈদের  কেনাকাটা এবার ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ কোটি কোটি টাকার বেশি। শুধু তাই নয়, ঈদ ঘিরে অর্থনীতির সব খাতেই গতি ফিরে আসে। ঈদের মাসে যেমন সারাদেশের শপিংমল বা মার্কেটগুলো গতিশীল হয়-তেমনি সারাদেশের কুটিরশিল্প, তাঁতশিল্প, দেশীয় বুটিক হাউসগুলোয় বাড়ে কর্মচাঞ্চল্য ও আর্থিক লেনদেন। বিপুল অর্থ ব্যয়ের কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের গতিশীলতা আসে।

ঈদের সময় ব্যাংকিং খাতে লেনদেন বাড়ে ব্যাপক হারে। ঈদ উপলক্ষ্যে রেকর্ড গতিতে দেশের অর্থনীতিতে জমা হচ্ছে প্রবাসীদের রেমিটেন্স। মানুষের চাহিদা পূরণে ঈদের আগে বাজারে অতিরিক্ত নতুন নোট ছাড়বে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা ও যানজটের ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশের অনলাইন বাজার। রোজার আগে অর্থনীতিতে এক ধরনের প্রভাব থাকে। আর রোজা শুরুর পর থাকে আরেক ধরনের। রোজার আগে অর্থনীতি সচল থাকে ভোগ্যপণ্যকেন্দ্রিক। এ মাসে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। রোজা শুরুর প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই মূলত শুরু হয় রোজাকেন্দ্রিক অর্থনীতি। কেননা রোজার জন্য পণ্য আমদানি কার্যক্রম অনেক আগেই শুরু করতে হয় ব্যবসায়ীদের। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, মার্কেটগুলোতে ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। এদেশের মানুষ উৎসব পৌষ-পার্বনে কেনাকাটা করে থাকেন। বিশেষ করে  ঈদে সবারই নতুন কিছু চাই। ফলে সেভাবেই ব্যবসায়ীরা পণ্যের উৎপাদন ও আমদানি করে থাকেন। ইতোমধ্যে পাইকারি বাজারে ভালো বেচাকেনা হয়েছে। আশা করছি, এবার খুচরা পর্যায়ে রেকর্ড বেচাবিক্রি হবে। তিনি বলেন, নানা সঙ্কটের কারণে অর্থনীতি এখন চাপের মুখে রয়েছে। তবে ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনায় সেই চাপ সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়াবেন ব্যবসায়ীরা।

বেশি বেচাকেনা পোশাকেই ॥ ঈদে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পোশাক সামগ্রী। ঈদে শীর্ষ ১০ পণ্যের কেনাকাটায় দেড় লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঈদ কেনাকাটার সবার শীর্ষে থাকে  পোশাক। এর পরই জুতা-স্যান্ডেল, লুঙ্গি-গেঞ্জি-গামছা। খাদ্যপণ্যের মধ্যে সেমাই-চিনি, মাংস, মিষ্টি, গ্রসারি পণ্য রয়েছে। প্রসাধনী, ইলেক্ট্রনিক্স টিভি, মোবাইলসহ নানা ধরনের পণ্যও কেনা হয় ঈদ উপলক্ষ্যে। অনেকে আবার  সোনার গয়না, ঘরের আসবাবপত্র কেনেন বলে ঈদে এসব পণ্যের বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক গুন   বেড়ে যায়। এর বাইরে ঈদের ছুটিতে পর্যটন খাতেও মানুষ অর্থ ব্যয় করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মধ্যবিত্ত  শ্রেণির একটি পরিবার ন্যূনতম থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করে ঈদকে ঘিরে। সামর্থ্য অনুযায়ী এই অঙ্ক আরো বাড়ে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঈদে  পোশাকসহ পরিধেয় খাতে থেকে ১ লাখ কোটি, জুতা-কসমেটিকস ৪ হাজার কোটি, ভোগ্য পণ্য সাত থেকে ৯ হাজার কোটি, জাকাত-ফিতরা ও দান-খয়রাত ৩৮ হাজার কোটি, যাতায়াত বা  যোগাযোগ খাতে ১০ হাজার কোটি, সোনা-ডায়মন্ড পাঁচ হাজার কোটি, ভ্রমণ খাতে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি, ইলেকট্রনিক্স চার হাজার কোটি, স্থায়ী সম্পদ ক্রয় এক হাজার কোটি, পবিত্র ওমরাহ পালন তিন হাজার কোটি, আইন-শৃঙ্খলাসহ অন্যান্য খাতে লেনদেন হয় আরও এক হাজার কোটি টাকা।

তবে এফবিসিসিআইয়ের পাশাপাশি আরও কয়েকটি সংগঠন থেকে ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির আকার ঘোষণা করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির আকার প্রায় ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। ঈদ অর্থনীতির একটি বড় চালিকাশক্তি হচ্ছে পোশাকের বাজার। এ সময় দোকানগুলোতে পোশাকের  বেচাকেনা তিন থেকে চারগুণ বেড়ে যায়। অভ্যন্তরীণ পোশাকের সবচেয়ে বড় জোগান আসে পুরান ঢাকার উর্দু  রোডের পোশাক মার্কেট থেকে। ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটসহ দেশের বিভাগ ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের মার্কেটগুলোতে দেশি পোশাক সরবরাহ হয় পুরান ঢাকার এই মোকাম থেকে। এর বাইরে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড এবং চীন থেকেও প্রচুর তৈরি পোশাক আমদানি করা হয়। ঈদ বাজারে এসব দেশ থেকে পোশাক আমদানি আরও বেড়ে যায়। সব মিলে এবারের ঈদে পোশাক বাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হওয়ার আশা ব্যবসায়ীদের। এছাড়া ঈদে সব ধরনের নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো  ভোজ্যতেল, মাংস, চিনি, ডাল, সেমাই ও পেঁয়াজ। ফলে এসব পণ্যের আমদানিও বাড়ে। রোজা ও ঈদে  ভোজ্যতেলের চাহিদা হচ্ছে প্রায় আড়াই লাখ টন, চিনি সোয়া ২ লাখ টন থেকে পৌনে তিন লাখ টন, ডাল ৬০ হাজার টন, ছোলা ৫০ হাজার টন, খেজুর ১৩ হাজার টন, পেঁয়াজ ৩ লাখ ২৫ হাজার থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন এবং রসুনের চাহিদা প্রায় ৮০ হাজার টন। এসব পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব টাকার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকার জোগান দেওয়া হয়।

অগ্নিঝুঁকি নিরাপত্তায় বাড়তি সতকর্তা ॥  বেইলি রোড ট্রাজিডির পর অগ্নিনিরাপত্তায় এবার বাড়তি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে ব্যবসায়ী ও মার্কেট কর্তৃপক্ষ। এজন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ঠিক করা,  মার্কেটে পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, বালি, এবং কার্বন-ডাই অক্সাইড ও অগ্নি নিয়ন্ত্রণ ইক্যুপমেন্ট রাখা হচ্ছে মার্কেটগুলোতে। এর আগে গত বছর রমজানে দুদফায় পুড়ে যায় বঙ্গবাজার ও ঢাকার নিউ সুপার মার্কেট। এতে করে আশপাশের আরও বেশ কয়েকটি মার্কেটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়ার পর  ঈদের আগে ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে সেখানকার ব্যবসায়ীরা আবার নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সেখানে পুনরায় দোকান চালু করা হয়েছে। বেইলি রোডের ঘটনায় অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে অভিযান পরিাচালনা করা হচ্ছে।  এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ হাফেজ হারুন জনকণ্ঠকে বলেন, আগুন থেকে নিরাপদ থাকা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা অগ্নিনিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলায় মার্কেটে নিজস্ব ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার দিকে নজর দিচ্ছি। এছাড়া এব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হচ্ছে।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –