• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

৮০ শিশুর বাবা-মা বিলকিছ-রবিউল

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩  

মানবসেবার আদর্শ হিসাবে সামনে রেখেছেন মাদান তেরেসাকে। তার সেবায় উদ্বদ্ধ হয়েই সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের বুকে টেনে নিয়েছেন কুড়িগ্রামের বিলকিছ বানু ও রবিউল ইসলাম দম্পতি। অনাথ, এতিম ও পথ শিশুদের জীবনে আলো ফুটিয়ে তুলছেন তারা।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ডিগ্রি কলেজের পাশে মাদার তেরেসাকে আদর্শ মেনে নিজেদের এক একর জমির ওপর গড়ে তুলেছেন গোলাপ খাঁ শিশু সদন।

সেখানে বর্তমানে লেখাপড়াসহ জীবন গড়ছেন বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৮০ শিশু। এসব শিশুদের মা-বাবা হয়ে প্রতি মাসে ব্যয় করছেন বিপুল অঙ্কের অর্থ। ভবিষ্যতে ট্রাস্টের মাধ্যমে সারাদেশ থেকে এসব অসহায় শিশুদের নিয়ে এসে বড় পরিসরে শিশু সদনটি পরিচালনার  ইচ্ছে তাদের।

এক একর জমির চারিদিকে নির্মিত টিনশেড বিল্ডিং। মাঝে একই পোশাকে সুশৃঙ্খলভাবে পিটি করছে সেখানকার বিভিন্ন বয়সের শিশুরা। এদের কারো মা নেই, কারো বাবা নেই, কারো আবার বাবা-মা কেউই নেই।  এসব ঠিকানাবিহীন শিশুদের এখন মা-বাবা বিলকিছ বানু ও রবিউল ইসলাম।

শুরুটা করেছিলেন ১৪ বছর আগে। তখন অভিভাবকহীন কয়েকটি শিশুকে রাস্তা থেকে তুলে এনে লালন-পালন করতে শুরু করেন। দিনে দিনে অনাথ শিশুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরপর শিশু  সদনটি গড়ে তোলেন। শিশুদের যত্ন থেকে শুরু করে খাবার খাওয়ানোর কাজ সব কিছুই করেন বিলকিছ বানু। এই দম্পতির এক ছেলে এক মেয়ে থাকলেও এখন সব শিশুরাই সন্তান তাদের।

শিশুদের শিক্ষার জন্য সদনেই গড়া বিদ্যালয় পরিচালনা ও প্রতিদিনের খাবারের ব্যয় বহন করতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তবুও আগামীতে ট্রাস্টের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে এতিম অনাথ ও পথশিশুদের এনে শিক্ষিত করে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছা এই দম্পতির।

গোলাপ খাঁ শিশু সদনে বসবাসকারী শিশুদের মা বিলকিছ বানু জানান, নিজের এক ছেলে ও এক মেয়ে থাকলেও এতিম ও অনাথ শিশুদের অবহেলিত থাকতে দেখে ভালোবাসা জাগে তার মনে। কেন না, স্বপ্নে দেখা মাদার তেরেসাকে আদর্শ মানেন তিনি।

দেড় বছরের এক কন্যা প্রীতিলতা তার মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের সঙ্গে বাজারে একটি দোকানের বারান্দায় কুকুরের সঙ্গে বসবাস করতো। ১৩ বছর আগে এমন পরিস্থিতি দেখে শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে আসেন।

তারপর একে একে পেয়ে জান আরও কয়েকজন শিশু। তাদের প্রথমে নিজ বাড়িতে রেখে লালন পালন শুরু করলেও শিশুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় গড়ে তোলেন এ শিশু সদন।

তিনি জানান, ভবিষ্যতে ট্রাস্টের মাধ্যমে শিশু সদনটি পরিচালিত হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এতিম, অনাথ ও পথশিশুদের লালন পালন করার ইচ্ছে তার। যাতে করে দেশ থেকে এতিম শব্দটি উঠে যায়।

বিলকিছ বানুর স্বামী অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক রবিউল ইসলাম জানান, বিশেষ করে প্রীতিলতাকে পাওয়ার পর থেকে তাদের মানুসিকতায় পরিবর্তন আসে। তারপর নিজের বাবার জমিতে তার নামে শিশু সদনটি গড়ে তোলেন।

এটি পরিচালনার জন্য শহরের নিজস্ব জমিতে গড়ে তোলেন প্রীতিলতা নামে মার্কেট। সেই মার্কেটের ভাড়া ও অন্যের কাছে পাওয়া সামান্য সহায়তায় পরিচালিত হয়ে আসছে শিশু সদনটি। কিন্তু বর্তমানে শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

শিশু সদনে বসবাসকারী শিশুরা জানান, এখানে আসা শিশুরা তাদের অতীত ভুলে এই দম্পতিকে বাবা-মা মেনে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ পড়ছেন অনার্সে আবার কেউ কেউ ঢুকে পড়েছেন কর্মে। ভালো কিছু করতে পারলে এই বাবা-মায়ের আদর্শ মেনে চলার ইচ্ছে তাদের।

শিশু সদনে বসবাসকারী প্রীতিলতা জানান, বাবা-মায়ের পরিচয় বলতে বিলকিছ বানু ও রবিউল ইসলামকে জানা তার। এখান থেকেই লেখাপড়ার খরচ চলছে এবং বর্তমানে অনার্সে পড়ার কথা জানান সে।

রাস্তার পাশে মার্কেটের বারান্দায় পড়ে থাকা দেড় বছরের শিশু প্রীতিলতার প্রতি মায়া থেকেই ২০০৯ সালে রবিউল ইসলামের বাবার নামে গোলাপ খাঁ শিশু সদনটি প্রতিষ্ঠা করেন তারা। পরে প্রীতিলতার নামে গড়া তোলা মার্কেটের আয় ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের দেয়া কিছু অর্থে পরিচালিত হচ্ছে শিশু সদনটি।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –