• শুক্রবার ১০ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ০১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

কুড়িগ্রাম-১: গোলাপ ফুলের সুবাসে ধার কমছে লাঙ্গলের

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ জানুয়ারি ২০২৪  

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী উপজেলা নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-১ সংসদীয় আসন। এই আসনে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন জাকের পার্টি সমর্থিত গোলাপ ফুল প্রতীকের প্রার্থী মো. আব্দুল হাই। পিছিয়ে নেই জোট ও জাতীয় পার্টি (জাপা) সমর্থিত লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী এ কে এম মুস্তাফিজুর রহমান। তবে শুরুর দিকে লাঙ্গলের মাঠ শক্ত মনে করা হলেও ধীরে ধীরে জাকের পার্টি সমর্থিত প্রার্থী ভোটের মাঠে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন।  

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে মাঠের পরিবেশ। স্পষ্ট মন্তব্য করতে শুরু করেছেন ভোটাররা।

আসনটিতে নাগেশ্বরী উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ সরাসরি কাজ করছেন গোলাপ ফুল প্রতীকের হয়ে। তবে নাগেশ্বরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্যানেল লাঙ্গলকে জয়ী করতে মাঠে কাজ করছেন। অপরদিকে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক খোকন চৌধুরী প্যানেল কাজ করছে লাঙ্গল প্রতীকের হয়ে।

জোট ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ কে এম মুস্তাফিজুর রহমানকে জয়ী করতে নাগেশ্বরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আসলাম হোসেন সওদাগর দলীয় সিদ্ধান্তে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তবে বর্তমানে তিনিসহ তার কর্মী সমর্থকরা গোলাপ ফুল প্রতীকের মো. আব্দুল হাইকে জয়ী করতে মাঠে কাজ করছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশের সমর্থন ও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে মাইক নিয়ে নিজেই নিজের প্রচারণা করে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন আব্দুল হাই।

অপরদিকে এ আসনের বর্তমান জোট তথা জাতীয় পার্টি (জাপা) দলীয় প্রার্থী এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (মোস্তাক) নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় কাঙ্খিত কোন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করতে পারেনি এবং নির্বাচনী এলাকায় তার যাতায়াত কম থাকায় সাধারণ জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পেয়েছে। 

নাগেশ্বরী উপজেলার ভোটার চাঁদ সওদাগর বলেন, 'এর আগে যখন এ কে এম মুস্তাফিজুর রহমান এমপি ছিলেন, তখন তিনি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন নাই। এজন্য এবার অধিকাংশ জনগণ তার প্রতি ভরসা করবেনা। এখন পর্যন্ত যা বোঝা যাচ্ছে তাতে গোলাপ ফুল এগিয়ে রয়েছে। লাঙ্গলের তৎপরতা বেশি একটা দেখা যাচ্ছে না।' সুষ্ঠু ভোট হলে গোলাপ ফুল প্রায় ৩০ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকতে পারে বলেও জানান তিনি। 

ভুরুঙ্গামারী উপজেলা ভোটার আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, 'সুষ্ঠু ভোট হলে লাঙ্গল ও গোলাপ ফুলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। শুরুর দিকে গোলাপ ফুলের মাঠ ভালো না থাকলেও ধীরে ধীরে তিনি মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছেন।' তবে দিন শেষে লাঙ্গল এই আসনে জয়ী হবে বলে মনে করছেন তিনি। 

জাকের পার্টি সমর্থিত গোলাপ ফুল প্রতীকের প্রার্থী মো. আব্দুল হাই বলেন, 'আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদি। যদি সুষ্ঠু ভোট হয় তাহলে আল্লাহর রহমতে জিতে যাব। লাঙ্গলের কর্মী সমর্থকরা আমার ওপর ২ বার হামলা করেছে। হুমকি দিচ্ছে ভোট কারচুপির। আমি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই যাতে সুষ্ঠু ভোট হয়। ভোটারদের প্রতি আমার আস্থা আছে।' 

এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ কে এম মুস্তাফিজুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। 

কুড়িগ্রাম জেলার ৪ টি আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল আরীফ বলেন, 'দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার তার সবগুলো নেয়া হয়েছে। নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ নিরপেক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। কোথাও কোন অনিয়ম হলে ছাড় দেয়া হবে না। 

উল্লেখ্য, কুড়িগ্রাম-১ আসেন ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। এরপর ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হন। এরপর সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসলাম হোসেন সওদাগর সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

এই আসনে মোট ভোটার পাঁচ লাখ ২৯ হাজার ১৬৭ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৬৫ হাজার ৮৯৭ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৩ হাজার ২৬৭ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৩ জন। এই আসনে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –