স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রসাধনা
প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০২১
দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বাংলাভাষী অঞ্চলের মানচিত্র অসংখ্যবার বদলেছে। বাংলাদেশে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের উদ্ভব, সেই সব রাজ্যের ওপর ঘন ঘন বহিরাক্রমণ বহুবার সীমান্ত পরিবর্তন হওয়ায় বাঙালির কোনো রাজ্যিক বা রাজনৈতিক আনুগত্য বিকাশ লাভ করেনি। সমষ্টি চেতনার বড় অভাব ছিল বাঙালির।
বাঙালি চিন্তাবিদেরা ইউরোপীয় মানবতাবাদ, মার্কসবাদ ও ব্যক্তিস্বাধীনতার দর্শন, ইতিহাস ও তার ধারাবাহিকতার বৃত্তান্ত চর্চা করেন, কিন্তু বাঙালির বা বাংলাদেশের স্বাধীন সত্তা ও স্বাধীনতার জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো চিন্তাভাবনা করেননি। প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রমথ চৌধুরী প্রমুখ স্বল্প কয়েক জন ব্যক্তি বাঙালিদের স্বার্থের কথা বললেও বাঙালির স্বাধীনতার কথা তেমন উচ্চ কণ্ঠে কেউ বলেননি। তখন রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা, যা ইউরোপীয় চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত ও জারিত ছিল—সর্বভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করা হতো।
নিজেদের ‘বাংলা জাতি’ বলে উল্লেখ করলেও রবীন্দ্রনাথ কখনো কল্পনাতেও ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন, স্বতন্ত্র, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলা জাতি বা রাষ্ট্রের কথা চিন্তা করেননি। দক্ষিণ এশিয়ায় নজরুল ইসলামই প্রথম সাহিত্যিক যিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে স্বাধীনতার কথা বলেন এবং ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সপক্ষে ডাক দেন।
‘জয় বাংলা’ বললেও নজরুলের ‘ভারত-লক্ষ্মী’ বা ‘ভারত জননী’র প্রতি আনুগত্য ছিল অম্লান। তার স্বপ্ন ‘ভারত মহাভারত হবে’ এবং যেদিন পীড়িত মানুষের প্রতিকারে প্রাণে সাড়া জাগবে, ‘মহামানুষের সেদিন সৃষ্টি হবে।’
প্রমথ চৌধুরী তার ‘বাঙালির পেট্রিয়টিজম’-এ বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রশ্নে ভারতের ভূমিকাকে সাম্রাজ্যবাদী বলে চিহ্নিত করে উল্লেখ করেন যে ‘ইউরোপের কোনো জাতির সঙ্গে অপর জাতির সে-প্রভেদ নেই, আমাদের এক জাতির সঙ্গে অপরজাতির যে-প্রভেদ রয়েছে।’
বাংলার স্বাধীনতার কথা কেউ আগে উচ্চারণ করেনি। বাংলা ভাষায় স্বাধীনতার কথা লেখা হলেও সে স্বাধীনতা বাংলার স্বাধীনতা নয়। ১৯৪৭ সালের আগে মুসলমান বা হিন্দু যারাই স্বাধীনতার কথা বলেছেন, তারা নিখিল ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে তা বলেছেন। ইতিহাস পর্যালোচনা করে আমার দৃঢ়বিশ্বাস, এই বিষয়টি বঙ্গবন্ধুকে দারুণভাবে পীড়া দিয়েছিল। তাই তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ লাহোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ সংবাদপত্রে এই শাসনতান্ত্রিক প্রস্তাব প্রকাশিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের আইন ও পার্লামেন্টারি দপ্তরের মন্ত্রী আবদুল হাই চৌধুরী ছয় দফাকে ‘দেশদ্রোহিতার নামান্তর’ বলে অভিহিত করেন। ১০ মার্চ ১৯৬৬ প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান হুমকি দিয়ে বলেন, ‘ছয় দফার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ চাপাচাপি করলে অস্ত্রের ভাষায় জবাব দেওয়া হবে এবং দেশে গৃহযুদ্ধ হয়ে যাবে।’
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা চান, কারণ বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প রাজনৈতিক কাঠামোয় বাঙালিদের মঙ্গল নেই। তাই তিনি সমগ্র দেশের মানুষকে দিতে চান স্বাধীনতার স্বাদ। সমগ্র দেশ চষে বেড়িয়ে তিনি মানুষকে প্রস্তুত করতে থাকলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য।
১৪ আগস্ট ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ সব ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটে অবাঙালি আমলা ও পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ যোগাযোগে। ১ জুলাই ১৯৭০ থেকে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিটের অবসান ঘটে। পশ্চিম পাঞ্জাবের নতুন নাম হয় পাঞ্জাব। পূর্ব পাকিস্তান বাংলা, এমনকি পূর্ব বাংলাও হলো না। পাকিস্তানিদের কাছে ‘বাংলা’ ও ‘দেশ’ দুটো শব্দই ছিল বড় অবাঞ্ছিত।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের স্বায়ত্তশাসনের জন্য আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ মূলত সেদিন থেকেই শুরু হয় স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত অধ্যায়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। চলে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। নির্বাচনের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে আমূল পরিবর্তনকবাদী র্যাডিক্যাল বাংলার যুবকেরা যে রণধ্বনি তুলেছিল—‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’—সে এক অভিনব ব্যাপার। ভুট্টো বুঝতে ভুল করেননি, যখন ২৫ মার্চ ১৯৭১ তিনি বলেন, ‘ওদের দাবি তো স্বাধীনতার চেয়ে বেশি, প্রায় সার্বভৌমত্বের কাছাকাছি।’ সামরিক জান্তাও ভুল করেনি। তাই তারা স্বাধীনতার কথা যেখানে উচ্চারিত হতো, সেই একুশে মিনার গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ২৬ মার্চের রাতে।
২ মার্চ, ১৯৭১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবনের ছাত্রসভায় প্রথম স্বাধীন বাংলার যে পতাকা উত্তোলিত হয়, তার মধ্যেও পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র ছিল। ছয় দফা ঘোষণার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু প্রকাশ্যেই বলতেন ছয় দফা নয়, আসলে আমার এক দফা, আর তা বাংলার স্বাধীনতা। বাঙালি তরুণেরা বঙ্গবন্ধুর এই আকাঙ্ক্ষা ভালোভাবেই বুঝেছিলেন। তাই, বাঙালি তরুণেরা স্লোগান দিয়েছিলেন, ‘হয় ছয় দফা, নয় এক দফা।’ খুব দ্রুত সেই স্লোগানের রূপান্তর ঘটে—‘ছয় দফা নয়, এক দফা এক দফা।’ ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’—সেই অভিনব রাজনৈতিক আহ্বানে বাঙালি অভূতপূর্ব উৎসাহ ও উন্মাদনায় সাড়া দিয়েছিল। প্রণোদনার সেই আকস্মিক পরিবর্তনেই যেমন সাহসিকতা তেমন সহজতা ছিল। সারা দেশে স্বাধীনতাবিরোধীরাও প্রতিযোগিতায় নামল স্বাধীনতার পক্ষে যোগ দেওয়ার জন্য।
মার্চ ১৯৭১ প্রথম প্রহরে মহান নেতা ও বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনেন। জাতি পায় স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সংগীত। বাঙালি জাতির এই বীরত্ব ও দেশাত্মবোধ বিশ্বে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে।
ক্ষণজন্মা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে পৃথিবীর মানচিত্রে সৃষ্টি হতো না বাংলাদেশের। যুগ যুগ ধরে বঙ্গবন্ধুর মনের লালিত স্বপ্নের কারণেই এই বাংলাদেশের সৃষ্টি। বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র সাধনার ফল বাংলাদেশ।
সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন এক অভাবিত সমর্থন পায়। সেই সংগ্রামের এমন একটা স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল যে তখন ‘জাতীয়তাবাদ’—এর কথা বিশেষভাবে উচ্চারণ করার প্রয়োজন হয়নি।
‘বঙ্গ’ শব্দের সঙ্গে বাংলাদেশের নাড়ির সম্পর্ক। ইতিহাস-ভূগোলে পরিচিত ‘বাংলাদেশ’-এর উৎসভূমি, হূদকেন্দ্র ও চারণভূমির বৃহদাংশ তো বর্তমান বাংলাদেশের পরিধির মধ্যে বিরাজমান। আমাদের দেশের নাম তার ভাষার নামে নাম। এমন যৌগপদ্য সৌভাগ্যেরও কথা। আমাদেরকে সৌভাগ্যবান করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতি তার জনকের প্রতি রক্তঋণে আবদ্ধ।
লেখক: প্রকৌশলী জাহিদ আবছার চৌধুরী
প্রকৌশলী, বঙ্গবন্ধু গবেষক ও প্রকৌশলী সংগঠক।
- ধূমপান বা তামাক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর
- সত্যি কী আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পাচ্ছেন শাকিব খান?
- হজের জন্য মাহরাম না পেলে নারীদের করণীয় কী?
- রাশিয়ার সাথে সম্ভাব্য সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে ন্যাটো: মস্কো
- অপসাংবাদিকতা মূল সাংবাদিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
- ট্রেন সুবিধায় আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল দক্ষিণবঙ্গ: রেলমন্ত্রী
- ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে আমরা পাপমুক্ত হয়েছি’
- ‘মৎস্যসম্পদ রক্ষার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে হবে’
- উপজেলা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে যে নির্দেশনা দিল ইসি
- টেনিস খেলাকে জনপ্রিয় করতে কাজ করা হচ্ছে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
- ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে রাজধানীর চাপ কমে আসবে: চিফ হুইপ
- ‘উদ্যোক্তারাই দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির কাণ্ডারি’
- তীব্র গরমেও শীতল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
- চাই না মুক্তিযুদ্ধ চেতনাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় আসুক
- ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৫ শতাংশ কার্বণ নিঃসরণ কমাতেই হবে
- খুলেছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
- রৌমারীতে মুক্তিযোদ্ধাকে হুমকি ও জীবনাশের অভিযোগে মানববন্ধন
- গ্রীষ্মকালে শীতল ত্বক : শসার মাস্ক
- মুসলিম উম্মাহর একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে
- বাংলাদেশ-গাম্বিয়া জয়েন্ট বিজনেস টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব
- ডর্টমুন্ডের সঙ্গে এক যুগের সম্পর্ক ছিন্ন করছেন এই ফুটবলার
- ব্যাভিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে পুরস্কার পেলেন ‘অভাগী’ মিথিলা
- হজের ক্ষেত্রে শয়তান যেসব ওয়াসওয়াসা দেয়
- মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলার পরিকল্পনা ভেস্তে দিলো কুয়েত
- যেসব জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শনিবার বন্ধ থাকবে
- আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান: ইসি রাশেদা
- আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান: ইসি রাশেদা
- খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণের আহ্বান প্রধান বিচারপতির
- রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি চায় বাংলাদেশ-গাম্বিয়া
- সাত জেলায় দুপুরের মধ্যেই ঝড়-বৃষ্টির আভাস, নদীবন্দরে সতর্কতা
- চিলমারীতে অষ্টমীর স্নান উৎসবে এসে পুরোহিতের মৃত্যু
- চিলমারীতে পুকুরের পানিতে ডুবে প্রতিবন্ধী শিশুর মৃত্যু
- বিভিন্ন দেশে নিষেধাজ্ঞার মুখে ভারতীয় খাদ্যপণ্য
- জুমার দিনের বিশেষ আমল
- ট্রেনের টিকিট এবার ভেন্ডিং মেশিনে, দাঁড়াতে হবে না লাইনে
- রান তাড়ায় বিশ্বরেকর্ডের ম্যাচে আরো যত রেকর্ড
- টেলিস্কোপ তৈরি করলো রাজারহাটের ফারাবী
- জিম্মি এক ইসরায়েলি-আমেরিকানের ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস
- রাজিবপুরে ইসতিসকা নামাজ আদায় ও দোয়া প্রার্থনা
- কোরবানির নিয়তের পর পশু বিক্রি করার বিধান
- তাপপ্রবাহ কবে কমবে, জানালো আবহাওয়া অফিস
- ফুলবাড়ীতে দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট সেন্টারের উদ্ভোধন
- যে কারণে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেনি বাংলাদেশ
- মির্জা ফখরুলকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে: ওবায়দুল কাদের
- অক্টোবরে পরীক্ষামূলক চালু হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
- জনপ্রিয় অভিনেতা রুমি মারা গেছেন
- চাঁদা তুলে খেলতে আসা দলই গড়ল ইতিহাস
- কুড়িগ্রাম মাদকের বিরুদ্ধে শিশু-কিশোরের স্মারকলিপি প্রদান
- ফুলবাড়ীতে ইউস্যাফের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান
- সড়কে দুর্ঘটনা রোধে প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ