• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আর পিছিয়ে যাবে না বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৭ ডিসেম্বর ২০২১  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আর পিছিয়ে যাবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ।

আশা করি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ‘অগ্রসেনা’ হিসাবে কাজ করবেন। বৃহস্পতিবার ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২১ (এনডিসি)’ এবং ‘আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০২১ (এএফডব্লিউসি)’-এর গ্র্যাজুয়েশন সিরিমনিতে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। 

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে সংযুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগে সদা প্রস্তুত থাকেন। তারা বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসাবে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষপূর্তি মাথায় রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। 

শেখ হাসিনা বলেন, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমাদের সরকারের উদ্দেশ্য ছিল দেশ-বিদেশের উচ্চপর্যায়ের সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাদের জন্য একটি শীর্ষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা।

ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ সেই অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দেশ-বিদেশের উচ্চপদস্থ সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন।

বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত করে তোলার পাশাপাশি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোর সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ককে তারা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। এনডিসিতে ২৪টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ৩৮৩ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন জেনে আমি আনন্দিত।

বর্তমান সীমিত সম্পদ, অবকাঠামো ও জনবল দিয়েও এনডিসি সফলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এজন্য আমি এনডিসির কমান্ড্যান্ট এবং তার টিমকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রায় এক বছর কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলন করেছেন। এনডিসিতে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং জাতীয় নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সম্পর্কে তারা জ্ঞানার্জন করেছেন।

এটা নিঃসন্দেহে কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্ব অর্জনে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, কোর্স দুটিতে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সামরিক সদস্যদের সঙ্গে আমাদের সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তা সর্বোপরি আমাদের প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে গড়ে উঠা নিবিড় মিথস্ক্রিয়া ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে।

তিনি আরও বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের অবকাঠামো ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি নিশ্চিতকরণে তারা দক্ষতা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।

জাতিসংঘে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসাবে গৌরবের স্থানটি আমরা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অর্থনৈতিক অগ্রগতির মানদণ্ডে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছি।

বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছি এবং মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি।

আর্থ-সামাজিক সব সূচকে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছি। করোনা না এলে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। করোনা মহামারির সময়ও দেশের সব মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাওয়ার তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি বজায় রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি।

সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথাও তিনি পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন। ‘মুজিবশতবর্ষ’ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। 

অনুষ্ঠানে তিন বাহিনীর প্রধান এবং এনডিসি কমান্ড্যান্ট উপস্থিত ছিলেন। এবারে এনডিসিতে ২৭ জন বিদেশি সামরিক সদস্যসহ ৮৮ জন এবং এএফডব্লিউসিতে মোট ৫৫ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। 

এনডিসি ও ডিএসসিএসসির পরিচালনা পর্ষদের ১৮তম যৌথসভা : গণভবনে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) এবং ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) পরিচালনা পর্ষদের ১৮তম যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় এনডিসি ও ডিএসসিএসসির চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং এনডিসি কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল আকবর হোসেইন যোগ দেন। সভায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন প্রতিরক্ষা সচিব (সিনিয়র) ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, জনপ্রশাসন সচিব (সিনিয়র) কেএম আলী আজম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সচিব (সিনিয়র) মাহবুব হোসেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব (সিনিয়র) আবদুর রউফ তালুকদার, পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র) মো. মাসুদ বিন মোমেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের (বিইউপি) উপাচার্য মেজর জেনারেল মো. মোশফিকুর রহমান এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। 

দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সেনা সদস্যরা আরও বেশি অবদান রাখবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও পেশাগত দক্ষতায় দেশ গড়ার কাজে আরও বেশি অবদান রাখবেন। সেনাবাহিনীর সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন। 

সেনা সদস্যদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি ৫০ বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

দেশব্যাপী অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণে সেনা সদস্যরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় তাদের ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী পাঠানোর গৌরব অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের ১২৫ জন সেনা সদস্য প্রাণ দিয়েছেন। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন তিনি।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –