• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

সুগন্ধি ধানের বাম্পার ফলন

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০২২  

সাধারণ ধানের চেয়ে বাজার দর বেশি হওয়ায় দিনাজপুরে বেড়েছে সুগন্ধি আমন ধানের আবাদ। মুখোরোচক খাবার তৈরিতে সুগন্ধি এ ধানের কোনো বিকল্প নেই। দেশে-বিদেশে বেশ কদর সুগন্ধি চালের। এ বছর ভালো ফলনও হয়েছে সুগন্ধি ধানের। বাম্পার ফলন ও বাজারে এ ধানের চাহিদা বেশি থাকায় লাভও বেশি পাচ্ছেন সুগন্ধি ধান চাষিরা। 

সরেজমিনে কয়েকটি উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে এখন ঢেউয়ের মতো দোল খাচ্ছে সুগন্ধি ধানের সোনালি শীষ। সবুজ ধান গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করছে। সুগন্ধি ধানের মিষ্টি গন্ধে সোনালি ধানের শীষে ঝলমল করছে ফসলের মাঠ। মাঠভরা ফসল দেখে কৃষকদের চোখে-মুখে ফুটেছে হাসি। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে সুগন্ধি ধানের আবাদ হয়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় ২ হাজার ৯৬২ হেক্টর জমিতে বেড়েছে সুগন্ধি ধানের আবাদ। কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর এ ধানের আবাদ বেড়েছে। এছাড়া রোগবালাই নেই। ফলে ফলনও ভালো হয়েছে।

কয়েক বছরে জেলায় সুগন্ধি ধানের আবাদে এসেছে বড় পরিবর্তন। গত এক দশকে দিনাজপুরে সুগন্ধি ধানের আবাদ বেড়েছে অনেক গুণ। তবে জেলার সদর, বিরল, পার্বতীপুর ও চিরিরবন্দর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সুগন্ধি ধান আবাদ হয়। ঐতিহ্য ধরে রাখতে দিনাজপুরে সামান্য পরিমাণে উৎপাদিত হয় সুগন্ধি বাদশাভোগ ধান। 

শুধু বাদশাভোগ নয়, আরো আছে চিনি কাটারি, জিরা ৩৪, জিরা কাটারি, জটা কাটারি, কাটারিভোগ, ফিলিপাইন কাটারি, কালো জিরা, চল্লিশ জিরাসহ বেশ কয়েকটি প্রজাতির সুগন্ধি ধান।এই চাল দেখতে সরু ও লম্বা। এর অগ্রভাগ ছুরির মত একটু চোখা ও বাঁকা।  

এমনকি দিনাজপুরেও কেবল দিনাজপুর সদর উপজেলার ফাসিলাট, ছোট বাউল, বড় বাউল, করিমুল্লাপুর, খানপুর, চিরিরবন্দর উপজেলায় কাউগাঁ, বিষ্টপুর, তালপুকুর মুকুন্দপুর, দুর্গা ডাঙ্গা, ভিয়াইল, পশ্চিম বাউল ও কাহারোল উপজেলার দু-একটি উঁচু জায়গায় এ বিশেষ জাতের ধান চাষ হয়। উঁচু বেলে-দোআঁশ মাটি কাটারিভোগ চাষের উপযোগী। কাটারিভোগ চালের চিড়া প্রসিদ্ধ। এই চাল দিয়ে পোলাও, বিরিয়ানি, জর্দা, পায়েস, ফিরনি প্রভৃতি প্রস্তুত করা যায়। এই চাল সুগন্ধযুক্ত ও সুস্বাদু। উৎসব-অনুষ্ঠানে, হোটেল-রেস্তোরাঁয়ও সুগন্ধি চালের ব্যবহার বেড়েছে। 

মোহনপুর গ্রামের কৃষক মনির হোসেন বলেন, সুগন্ধি ধানের ফলন ভালো হয়েছে।

শেখপুরা ইউপির দক্ষিণ শিবপুর গ্রামের কৃষক বিকাশ রায় বলেন, আমি এবার ৩ একর জমিতে সুগন্ধি ধান আবাদ করেছি। ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে।  

মথুরাপুর গ্রামের কৃষক জহির উদ্দিন বলেন, আামি এবার সুগন্ধি ধান ২০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ধান কাটার পর ধানের দামটা ভালো থাকলে লাভবান হব।

চিরিরবন্দর উপজেলার পুনট্রি গ্রামের কৃষক উদয় রায় বলেন, জিরা ৩৪ সুগন্ধি ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের পারার্মশে এবার আমি প্রায় ৩ বিঘা জমিতে সুগন্ধি ধান লাগিয়েছি। 

চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা বলেন, জেলার সবচেয়ে বেশি সুগন্ধি ধানের আবাদ চিরিরবন্দর উপজেলায়। সুগন্ধি ধান দিনাজপুরের একটি ঐতিহ্য। ইতোমধ্যে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে কাটারিভোগ এখন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। সুগন্ধি ধানের আবাদ বাড়াতে কৃষি বিভাগ সবসময়ই কৃষকদের পাশে থেকে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর সুগন্ধি ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরাও অনেক খুশি। 

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –