• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

একজন গ্রামীণ কবি রাধাপদ রায়   

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২১  

একজন কবিতার ফেরিওয়ালা রাধাপদ সরকার। আঞ্চলিক ভাষায় নিজের লেখা গান, কবিতা আবার কখনো ছান্দসিক গল্পের আসর বসিয়ে গ্রামবাসীর মাঝে বিনোদন দিয়ে তা থেকে পান তা দিয়েই সংসার চালান আশি ঊর্ধ্ব বয়সের এই চারণ কবি।

সংসার জীবনে ৬ সন্তানের জনক রাধাপদ সরকারের জন্ম কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের গোদ্ধারের পাড় গ্রামে। ৬ সন্তানের মধ্যে ৩জন ছেলে ৩জন মেয়ে। তিন ছেলে আলাদা সংসার পেতেছেন। তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তবে ছোট মেয়ে অঞ্জলী রানী কিছুদিন আগে স্বামীকে হাড়িয়ে দুই সন্তান নিয়ে রাধাপদের সংসারে রয়েছেন। স্ত্রী নিয়তি বালা এবং মেয়েসহ মেয়ের দুই সন্তান মোট ৫জনের সংসার চালাতে বৃদ্ধ রাধাপদ’র হিমসিম খেতে হয়।

তার লেখা গান ও কবিতাগুলো স্থানীয় পাড়ামহল্লায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার লেখা গান ও কবিতাগুলোর মধ্য থেকে "কেয়ামতের নমুনা জানি কিন্তু মানি না" শিরোনামক কবিতাটি ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ নেট দুনিয়ায় ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে।

রাধাপদ সরকার জানান,১৫/২০ বছর থেকে তার উপার্জনের কোন রাস্তা নেই। সেই থেকে  গ্রামের বিভিন্ন  উৎসব, পালা পার্বণসহ গ্রামবাসীর আবদার এবং আয়োজনে গান এবং কবিতার আসর করেন তিনি। সেসব আসরে গান এবং কবিতা  পরিবেশন করে যে অর্থ পান তা দিয়ে সংসার চালান তিনি। 

সে সাথে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া "কেয়ামতের নমুনা জানি কিন্তু মানি না" প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউ একজন তার পরিবেশিত কবিতাটি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। সেখান থেকে বিভিন্নজন আমার নাম বাদ দিয়ে অন্যকারো নামে ভিডিওটি ছড়িয়েছে। আমার অনুরোধ আমার কবিতা আমার নামেই প্রচার হোক অন্য কারো নামে নয়। 

গ্রামবাসী রতন রায়, পুশনাত রায়, রাধা রাণী, শান্তনা রানী জানান, তারা মাঝে মধ্যে রাধাপদ সরকারের কবিতা ও গান শোনেন এবং তার কবিতা এবং গানে ধর্মীয় ও বাস্তবতা খুজে পান। আসরের দর্শকরা খুশি হয়ে কিছু পয়সা দেন তা দিয়ে তিনি সংসার চালান। এভাবে তার জীবন চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। 

সে সাথে তারা রাধাপদ সরকারের লেখাগুলো নিয়ে পুস্তক আকারে প্রকাশের জন্য সমাজের সচেতন মহলের প্রতি আহ্বান জানান। 

মেয়ে অঞ্জলী রাণী বলেন, এই বয়সে তিনি (রাধাপদ) সাইকেল চালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে গান করেন। এতে তার অনেক কষ্ট হয়। সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

কুড়িগ্রামের সাহিত্য সংগঠক ও সাংবাদিক প্রভাষক রফিকুল ইসলাম জানান, গ্রামীন জনপদের ঘটনা কিংবা বাস্তবতা দিয়ে তাৎক্ষনিক কবিতা বা গান রচনা করে মুখে মুখে ছড়িয়ে দেয়া চারণ কবিদের কাজ। রাধাপদ সরকার এমনি একজন চারন কবি। তার সৃষ্টি সংরক্ষণ করা দরকার।

নাগেশ্বরীরর ভিতবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম খন্দকার বাচ্চু জানান, রাধাপদ সরকার অত্যান্ত দরিদ্র একজন মানুষ। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিজের কবিতা এবং গান গেয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে থাকেন। তার প্রতিভা বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –