• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

গাছ পাগল আনোয়ার হোসেন

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৬ জুন ২০২৩  

 
কুড়িগ্রাম সদরের টাপুরচর গ্রামের আনোয়ার হোসেন পেশায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি। ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির প্রতি অগাধ ভালোবাসা তাঁর। এ ভালোবাসা থেকেই আট বছর ধরে রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গাছের চারা রোপণ করছেন। জমি লিজ নিয়ে নার্সারিতে তৈরি করছেন চারা। এ কাজে সহযোগিতা করছেন স্থানীয়রাও। গাছের সুরক্ষায় বাঁশও দিচ্ছেন তাঁরা।

‘গাছ লাগাই পরিবেশ বাঁচাই’– স্লোগানটি মনেপ্রাণে ধারণ করে বৃক্ষরোপণ করে চলেছেন গাছপাগল আনোয়ার। এ পর্যন্ত বিভিন্ন সড়ক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বাঁধ ও কবরস্থানে সাত হাজারের বেশি গাছ লাগিয়েছেন। শহরের পরিত্যক্ত ও অস্বাস্থ্যকর স্থানের সৌন্দর্য বর্ধনে গড়েছেন ফুলের বাগান। প্রতি শুক্রবার গাছের পরিচর্যা করেন নিজ হাতে। বেড়া দেওয়া, ডাল ছাঁটাই, পানি ও সার দেওয়া– সবই করেন। এখন অধিকাংশ গাছে শোভা পাচ্ছে ফল ও ফুল।

এতে সহযোগিতা করছেন একদল শিক্ষার্থী। তাঁদের অধিকাংশই স্থানীয় ওরাকল লাইব্রেরির পাঠক। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা বাড়াতে লাইব্রেরিটি গড়ে তুলেছেন আনোয়ার। তাঁর বসতভিটায় চার-পাঁচ হাজার চারা রয়েছে। প্রতিবেশী আবুল কাশেম বলেন, দপ্তরি পদে থেকেও কাজের ফাঁকে পরিবেশ সুন্দর রাখতে আনোয়ারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। অনেকেই তাঁকে গাছের বেড়া ও খুঁটির জন্য বাঁশ দেন।

গত শনি ও রোববার জেলা শহরের ধরলা সেতুর পাড়, স্টেডিয়াম, পৌর বাজার, চর হরিকেশ, হলোখানা, বাসস্ট্যান্ড, সার্কিট হাউস, কাঁঠালবাড়ি বাংটুর ঘাট, টাপুরচরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা মেলে গাছের। কৃষ্ণচূড়া, বকুল, কাঠবাদাম, বট, সোনালু, জলপাই, কামরাঙা, জামরুল, লেবুসহ তিনি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করেছেন। শহরের শোভাবর্ধনে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সড়ক বিভাজকে গড়ে তুলেছেন ফুলের বাগান।

কলেজছাত্র নাজমুল হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আনোয়ার চাচার গাছের প্রতি আলাদা ভালোবাসা। প্রকৃতি আমাদের নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে। বিনিময়ে আমরা বৃক্ষনিধন করছি। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রত্যেকের উচিত তাঁকে সহযোগিতা করা।’

আনোয়ারের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, বিয়ের ছয় বছরে তাঁর সংসারে তেমন মন না থাকলেও গাছের প্রতি আলাদা টান রয়েছে। অবসর পেলে গাছকে সন্তানের মতো ভালোবাসেন। সরকারিভাবে তাঁকে সহযোগিতা করলে অনেক এগিয়ে যাবে।

আনোয়ার হোসেন বলেন, শুরুতে পুরোনো দেয়াল ও নালার পাশের চারা তুলে বড় করে রোপণ করেছেন। কিন্তু এতে চাহিদা পূরণ হয় না। এ কারণে একটি কবরস্থান চুক্তিতে পরিষ্কার করে চারা উৎপাদন করছেন। চলতি মাসেই চারাগুলো রোপণ করা হবে।

আনোয়ার জানান, শহরের তারামন বিবি সড়কের আট কিলোমিটারে প্রায় ৫০০ চারা রোপণ করেছেন। গাছে ফল ধরছে। হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পৌরসভার প্রায় ছয় কিলোমিটারে ফল ও ফুলের গাছ রোপণ করেছেন। বাস টার্মিনাল থেকে সার্কিট হাউস পর্যন্ত লাগানো সোনালু গাছে ফুল ধরছে।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিদ মো. মির্জা নাসির উদ্দিন বলেন, আনোয়ার সবার কাছে প্রেরণার উৎস। গাছ লাগানোয় শহরের শোভা বর্ধন ও পরিবেশের উন্নতি হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিম্ন পদে চাকরি করা এ যুবকের প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা অনুকরণীয়। তাঁকে দেখে নতুন প্রজন্ম বৃক্ষরোপণে উজ্জীবিত হলে পরিবেশ ও প্রকৃতি সুরক্ষিত হবে।

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাত হাজারের অধিক গাছ রোপণ করা প্রশংসনীয় কাজ। তাঁকে সহযোগিতার চেষ্টা করবেন।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –