• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

কুড়িগ্রাম-২: ট্রাক নিয়ে চিন্তায় লাঙ্গল

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ জানুয়ারি ২০২৪  

কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ি উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন কুড়িগ্রাম-২। এই আসনে এবারে জাতীয় পার্টি মনোনীত জোট প্রার্থী মো. পনির উদ্দিন আহমেদ। তবে, ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. হামিদুল হক খন্দকারকে প্রকাশ্যে সমর্থন করছে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ। এতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে জাতীয় পার্টির কপালে।

এই আসনে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। তবে, জাতীয় পার্টির সাথে জোট গঠনের ফলে লাঙ্গলকে আসন ছেড়ে দিতে হয় আওয়ামী লীগকে।

আসনটিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাফর আলী দলীয় মনোনয়ন পেলেও পরে প্রত্যাহার করে নেন। বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. পনির উদ্দিন আহমেদকে ছাড় দিতে দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তিনি। তবে জাপা প্রার্থীকে সমর্থন না দিয়ে এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নেতা ডা. হামিদুল হক খন্দকারকে সমর্থন করছে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ। এজন্য নিজেদের জয় নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও সমর্থকেরা।

জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা জানান, প্রায় অস্তিত্বহীন দলটির (জাপা) কারণে জেলায় তাদের রাজনীতি বিফলে যাচ্ছে। তা ছাড়া দলীয় প্রার্থী সংসদ সদস্য না হওয়ায় জেলার এ আসনটি উন্নয়নবঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। সাংগঠনিক কার্যক্রমেও প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তারা তাদেরই দলের মতাদর্শে বিশ্বাসী স্বাচিপ নেতা হামিদুল হক খন্দকারের নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে ও তাকে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করছেন।

জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আনিছুর রহমান খন্দকার চাঁদ বলেন, এবার নির্বাচনে মহাজোট নেই। কেন্দ্রীয়ভাবে জাপা প্রার্থীর জন্য কাজ করার কোনও নির্দেশনাও নেই। আমরা দলটির প্রার্থীর জন্য কাজ করতে চাই না। কুড়িগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে লাঙ্গলকে ‘না’ বলুন। আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. হামিদুল হক খন্দকারের হয়ে কাজ করছি। তিনি যোগ্য ও শিক্ষিত প্রার্থী।

জাপা প্রার্থীকে সমর্থন না করার প্রশ্নে এই যুবলীগ নেতা বলেন, আমি ৩৫ বছর ধরে রাজনীতি করছি। আমরা কি বারবার জাপা প্রার্থীর জন্য কাজ করে যাবো? এবার আর নয়।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কাদের বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হামিদুল হক খন্দকার ও তার প্রতীক ট্রাকের প্রচারণা করছি। কারণ জাপা প্রার্থীরা জোটের দোহাই দিয়ে বারবার এই আসন নেন ঠিকই কিন্তু আমাদের উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করেন। উন্নয়নের স্বার্থে এবার আমরা জাপা প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অর্থ এই নয় যে জাপা প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া বা তাদের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে তো আর ভোট থাকলো না। দেশের অনেক স্থানের মতো এখানেও নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন। দল সেই স্বাধীনতা তাদের দিয়েছে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. পনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বচ্ছ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমার জনগণের কাছে বার্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি। কিছু নৌকার লোক একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছে। এটা সম্ভব না।

ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. হামিদুল হক খন্দকার বলেন, অনেকে অনেক কিছু বলবে। তাদের তো মুখ ধরতে পারবো না। কেউ যদি আমাকে সমর্থন দিতে আসে আমি অবশ্যই তাদের স্বাগত জানাবো।

কুড়িগ্রাম-২ আসনে ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হন। এরপর ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে মো. জাফর আলী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ আসনে ১৯৭৯ সালে বিএনপি এবং পরবর্তীতে ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১,২০০৮,২০১৪ ও সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন গুলোতে জাতীয় পার্টি(জাপা) দলীয় প্রার্থীরা বিজয়ী হন। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগ'কে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হিসেবে মনে করা হয়।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –