• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অমর কীর্তি অসমাপ্ত আত্মজীবনী

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১ এপ্রিল ২০২১  

ড. এ এফ এম মফিজুল ইসলাম   

বাংলাদেশের উন্নয়নের অপর নাম শেখ হাসিনা। তাঁকে বলা হয় উন্নয়নকন্যা। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে তিনি রাখেননি উন্নয়নের ছাপ! শিক্ষাক্ষেত্রে, কৃষিক্ষেত্রে, বিদ্যুতায়নে, ডিজিটায়নে, রেলোন্নয়নে, সেতু ও সড়কায়নে, দারিদ্র্য বিমোচনে, নারীর ক্ষমতায়নে, যুবোন্নয়নে, স্বাস্থ্যসেবা, বয়স্কসেবা—সর্বক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়া। আর তা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা এবং সাহসী পদক্ষেপের ফলে। কতিপয় ঈর্ষান্বিত ব্যক্তি ছাড়া আজ আর কেউ অস্বীকার করে না যে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জন্য বড় অনেক কাজ এরই মধ্যে করেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা সবচেয়ে বড় যে কাজটি করেছেন, তা হলো বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি তিনি প্রকাশ করেছেন। দেশকে কিভাবে ভালোবাসতে হয়, বিশেষ করে মানুষকে কিভাবে ভালোবাসতে হয়—বঙ্গবন্ধু সেই শিক্ষাই আমাদের দিয়ে গেছেন ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে। বইটি এক অমর কীর্তি, দেশের এক অমূল্য সম্পদ।

শেখ মুজিব মনে-প্রাণে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জোরদার হতে থাকে। কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভার অনেক নেতা এই দাবির বিরুদ্ধাচরণ করতে শুরু করে। চারদিকে শুরু হয় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা। তখন কলকাতা শহরে শুধু মানুষের লাশ বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া, লুটতরাজ, মানুষ হত্যা ইত্যাদি এহেন কোনো অমানবিক কাজ ছিল না, যা করা হয়নি। মুসলিমপাড়ায় চলছে সংখ্যালঘু হিন্দুনিধন, হিন্দুপাড়ায় মুসলিমনিধন। অনেক সংখ্যালঘু হিন্দু তালতলায় বাস করত। তারা শেখ মুজিবের মহৎ হৃদয় সম্পর্কে জানত। তারা গোপনে সাহায্য চাইল। বিপদ মাথায় নিয়ে শেখ মুজিব তাঁর দলবল নিয়ে তাদের হিন্দু এলাকায় পাঠিয়ে দিলেন। অনুরূপভাবে নিজের বিপদ মাথায় নিয়ে শেখ মুজিব হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বেকার হোস্টেলের আশপাশের অনেক হিন্দু পরিবারের জীবন রক্ষা করেছিলেন।

১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ লোক মারা যায়। ব্যথিত হৃদয় মুজিব হোস্টেলে যা বাঁচত দুপুরে ও রাতে বুভুক্ষুদের বসিয়ে তা ভাগ করে দিতেন, যদিও তা ছিল অতি সামান্য। এসব দৃশ্যে ব্যথিত শেখ মুজিব শেষ পর্যন্ত অনন্যোপায় হয়ে মুসলিম লীগ অফিস ও কলকাতা মাদরাসাসহ অনেক জায়গায় লঙ্গরখানা খোলার ব্যবস্থা করলেন। লেখাপড়া ছেড়ে দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়লেন। দিনভর কাজ করতেন, আর রাতে কোনো দিন বেকার হোস্টেলে ফিরে আসতেন, আবার কখনো লীগ অফিসে সারা রাত কাটিয়ে দিতেন। পরবর্তী সময়ে এই দারিদ্র্যপীড়িত বুভুক্ষু মানুষ শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনে অনেক প্রভাব ফেলে। তাই সারাটি জীবন তিনি ক্ষুধামুক্ত সমাজ আর অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলে গেছেন।

বঙ্গবন্ধুর জীবন-ইতিহাস মানবতার ইতিহাস। তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন দুর্ভিক্ষে দারিদ্র্য-নিপীড়িত মানুষের কি করুণ আর্তনাদ, ক্ষুধার্ত মানুষের কি মর্মন্তুদ হাহাকার! আর তাই দুমুঠো অন্ন দিতে পড়ালেখা ছেড়ে ছুটে গেছেন তাদের পাশে। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় মর্মে মর্মে অনুভব করেছেন, মানুষ কত অমানুষ হতে পারে! তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে ছুটে গেছেন সংখ্যালঘুদের প্রাণ বাঁচাতে। মানুষের অধিকার আদায় করতে গিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের মায়া-মমতা, স্নেহ থেকে বঞ্চিত করে জীবনের মূল্যবান দিনগুলো তাঁকে কাটাতে হয়েছে জেলখানার বিছানায়। তাঁর জন্যই আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ। অর্জন করেছি স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সোনার দেশের, যেখানে থাকবে না বিন্দুমাত্র দারিদ্র্য, থাকবে না বর্ণে বর্ণে, ধর্মে ধর্মে ভেদাভেদ। হরিণশাবক ও ব্যাঘ্রশিশু একই মাঠে স্বাধীনভাবে বিচরণ করবে। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান হবে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার, যা থেকে কেউ বঞ্চিত হবে না। এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, তিনি ছিলেন এক মহান নেতা।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি দেশের জন্য বড় অনেক কাজ করেছেন, সামনের দিনগুলোতে আরো করবেন। কিন্তু তিনি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি লিপিবদ্ধ করে সবচেয়ে বড় কাজটি করে গেলেন, যা কেউ কোনো দিন করতে পারত না। বইটি বাংলার মানুষের জন্য এক অমূল্য সম্পদ, অমর কীর্তি। বইটি বাংলার সব নাগরিকেরই পড়া উচিত।

লেখক : উপাচার্য, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –