• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সাদা সোনা উৎপাদনে সফলতা

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২১  

সাদা সোনা নামে খ্যাত গলদা চিংড়ি উৎপাদন করে সফলতা অর্জন করেছে দেশের উত্তর জনপদের দিনাজপুরের পার্বতীপুর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার। এই সফলতার কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় পরামর্শ নিতে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন মৎস্য খামারিরা। খামারিদের মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। 

জানা গেছে, পার্বতীপুর উপজেলার ৫০ একর জমির ওপর অবস্থিত মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি সম্প্রতি গলদা চিংড়ির উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। নিবির পর্যবেক্ষণে এখানে প্রতিনিয়ত উৎপাদন করা হচ্ছে গলদা চিংড়ি। উৎপাদিত চিংড়ি দিয়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 

২০০০ সালের ২৭ অক্টোবর সাবেক মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রী আ স ম আব্দুর রব প্রকল্প কমপ্লেক্সে গলদা হ্যাচারি উদ্বোধনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে গলদা চিংড়ি চাষের সম্ভাবনাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। শুরুতে এটা ছিল পরীক্ষামূলক। দীর্ঘদিনে তা ব্যাপক সম্প্রসারিত করেছে এবং এর প্রসার ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। 

এরইমধ্যে বিভিন্ন সময়ে কর্মকর্তারা দায় সারাভাবে কাজ করলেও বর্তমান ব্যবস্থাপক মো. মুসা কালিমুল্লা যোগদানের পর ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে খামারের। 

স্থানীয়দের মতে, সরকারের এ বৃহৎ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকলেও এখন তা পিকনিক স্পটের মতো সুসজ্জিত হয়েছে। খামারের অবস্থান মহাসড়কের পাশে হওয়ায় যাত্রাপথে অনেকে থেমে এক নজর দেখে যান। পরিদর্শনের জন্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসেন এখানে। 

উত্তর পশ্চিম মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক মো. মুসা কালিমুল্লা বলেন, এক সময় এমন ধারণা ছিল, এই অঞ্চলের মাটি ও পানি চিংড়ি চাষের উপযুক্ত নয়। চিংড়ির জন্য অধিক খারত্বযুক্ত মাটি ও পানি বেশী উপযোগী। কিন্তু এই অঞ্চল চিংড়ি চাষের জন্য একেবারে অযোগ্য এ কথা মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষায় ভুল প্রমাণিত হয়েছে এবং প্রমাণিত হয়েছে যে, এই অঞ্চলে চিংড়ি চাষ সম্ভব। 

চলতি বছরের কর্ম পরিকল্পনায় এই খামারে সাড়ে চার লাখ গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। 
 
গলদা চিংড়ির পিএল (পোস্ট লার্ভা) উৎপাদনের ক্ষেত্রে জীবন চক্রের শুরুতে ব্রাইন ওয়াটার বা লোনা পানির প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে কক্সবাজারের পেকুয়া থেকে ব্রাইন ওয়াটার বা লোনা পানি সংগ্রহ করে স্বাদু পানি বা মিঠা পানির সঙ্গে খাপ খাইয়ে পিএল উৎপাদন করা হয়। উৎপাদনের ক্ষেত্রে বরগুনার আমতলীর পায়রা নদী থেকে গলদা চিংড়ির মা মাছ সংগ্রহ করা হয়। মা মাছ থেকে লার্ভা সংগ্রহ করে ২৮ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে পি এল উৎপাদন করা হয়।

এছাড়াও এখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন করা হচ্ছে। ১৯৬৪ সালে স্থাপিত খামারটি কয়েক যুগ ধরে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকলেও বর্তমানে খামারটি দেশের একমাত্র আদর্শ খামারে পরিণত হওয়ায় পথে রয়েছে। এখানে রয়েছে মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য ৪৬ টি পুকুর, প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স ও আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। 

কিছু নিয়ম-কানুনের পরিবর্তন করা হলে এই মৎস্য খামারটি দেশের একটি আদর্শ খামারে পরিণত করা সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন খামার ব্যবস্থাপক মুসা কলিমুল্লা। 

পার্বতীপুর উপজেলার আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, পার্বতীপুরের মৎস্য খামারটি গলদা চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য উৎপাদনের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করেছে। এখানকার মৎস্য চাষিরা এলাকায় মাছের চাহিদা মিটিয়ে এখানকার মাছ অন্যত্র সরবরাহ করছে। এই স্বনামধন্য মৎস্য খামারটিকে কেন্দ্র করে এখানে একটি মৎস্য পলিকেটনিক ইন্সটিটিউট নির্মাণের জোর দাবি জানান তিনি। 

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –