• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ভরা বর্ষা মৌসুমে ফেটে চৌচির আবাদি জমি

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০২২  

আষাঢ় পেরিয়ে চলছে শ্রাবণ। এসময় মাঠ-ঘাট জলমগ্ন থাকার কথা। তবে ভরা বর্ষার এই সময়ও খরায় পুড়ছে উত্তরের কৃষিনির্ভর জেলা দিনাজপুর। এর ফলে ফেটে চৌচির আবাদি জমি। আমন আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। বৃষ্টির অভাবে অনেকে সম্পূরক সেচ দিয়ে ধানের চারা রোপণ করছেন। এতে বাড়ছে আমন উৎপাদনের খরচ।

এদিকে, বৃষ্টির অভাবে দিনাজপুর জেলায় আমন আবাদ পিছিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। অপরদিকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দিনাজপুর জোন অফিস সম্পূরক সেচ দেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এরই মধ্যে তারা ৫৫টি গভীর নলকূপ চালু করেছে।

কৃষি বিভাগ ও আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আকাশে মেঘের আনাগোনা থাকলেও নেই বৃষ্টির দেখা। জমিতে নেই পানি। বৃষ্টির অভাবে আবাদি জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ৩৫ থেকে সাড়ে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বয়স বেড়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে আমনের চারার। জেলায় বীজতলা করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত বিকল্প ব্যবস্থায় লক্ষ্যমাত্রার কেবল ৮ শতাংশ জমিতে আমনের চারা রোপণ করা হয়েছে। দিনাজপুর জেলায় এবার ২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে, সেচ ও শ্রমিকের বাড়তি মজুরির কারণে এবার আমন আবাদে খরচ বেশি হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

বিরল উপজেলার কৃষক নুরুজ্জামান বলেন, গভীর নলকূপ চালু করলে এখন পয়সা লাগবে। এতদিন আমনের চারা রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত হয়ে যায়। কিন্তু এবার জমি শুকিয়ে ফেটে গেছে। খরচ বাড়ছে।

বিরল তেঘরা গ্রামের আরেক কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, আকাশের দিকে কতদিন তাকায় থাকবো। জমিগুলোতে আগাম ধান লাগানো গেলে আলুসহ রবিশস্য চাষে সুবিধা হয়।

চিরিরবন্দর বিন্নাকুড়ি এলাকার কৃষক রেজাউল ইসলাম বলেন, সেচের পানিতে খরচ বেশি পড়বে। তাই বৃষ্টির অপেক্ষায় আছি। এখন সময় আছে, দেখি কতদিনে বৃষ্টি হয়।

বৃষ্টি না হওয়ায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দিনাজপুর জোন অফিস সম্পূরক সেচের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কি না জানতে চাইলে সহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, দিনাজপুর জেলায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ১২৫টি গভীর নলকূপ এবং নদী থেকে পানি উত্তোলনের জন্য পাম্প রয়েছে ১১টি। এরই মধ্যে ৫৫টি গভীর নলকূপ চালু করা হয়েছে। বাকিগুলো প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবারও কাহারোল উপজেলার গড়নরপুরে গভীর নলকূপ চালু করা হয়েছে। কৃষকরা চাইলেই সম্পূরক সেচের জন্য বাকি নলকূপগুলোও চালু করা হবে। এখন যেহেতু সময় আছে তাই কৃষকেরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনজুরুল হক বলেন, বৃষ্টির অভাবে আমন আবাদ কিছুটা ব্যাহত হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোনো সমস্যা হবে না। বৃষ্টি হলে কৃষকেরা দিন-রাত পরিশ্রম করে জমিতে আমনের চারা রোপণ করে ফেলবে।

তিনি আরও বলেন, দিনাজপুর জেলায় এবার ২ লাখ ৬০ হাজার জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাত্র ৩০ হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপণ করা হয়েছে।

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, চলতি জুলাই মাসে সব মিলিয়ে প্রায় ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা। কিন্তু ২০ জুলাই পর্যন্ত জেলায় মাত্র ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে আগামী ২২ তারিখের পর, অর্থাৎ চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেসময় ২০০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া আগস্ট মাসে চাহিদার তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে ধারণা করছি।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –