• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পল্লী বিদ্যুতের ছুটি বাতিল, বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্নের শঙ্কা

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ মে ২০২৪  

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) এর অধীন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আগামীকাল শুক্রবার ছুটির দিনে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় আরইবির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় দেশের বিভিন্ন এলাকার ৮০টি সমিতি থেকে দুইজন করে প্রতিনিধি অংশ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে অফিস সময়ের পরে এ সংক্রান্ত পৃথক দুটি অফিস আদেশ জারি করা হয়। বিকেল ৪টায় ওই অফিস আদেশ জারি করে কর্মকর্তাদের পরদিন সকাল ১০টায় মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়ার নির্দেশ দেওয়া এবং হঠাৎ করে কোন অদ্ভুদ পরিস্থিতি ছাড়াই সবার ছুটি বাতিল করায় অবাক হয়েছেন সমিতির একাধিক কর্মকর্তা। তাদের প্রশ্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কী জরুরি অবস্থা জারি করা হলো?

এমন এক পরিস্থিতিতে অফিস আদেশ দুটি জারি করা হলো যখন আরইবি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে থাকা বৈষম্যগুলো দূর করাসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের দাবিতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। ইতোমধ্যে আন্দোলনের যুক্ত একাধিক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত, তাৎক্ষণিক বদলিসহ নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং নানারকম হুমকি ধামকি দিচ্ছে আরইবি-এমন অভিযোগ উঠেছে। 

বর্তমানে দেশে অন্তত ৪ কোটি ৬৮ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে যাদের মধ্যে প্রায় ৪ কোটি গ্রাহকই আরইবির। আন্দোলনের কারণে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং গ্রাহক সেবা বিঘ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা দাপ্তরিক কিছু কাজ বন্ধ রেখেছেন। এই আন্দোলনের ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহে কোন সমস্যা হবে না।

আরইবির দুটি অফিস আদেশে সই করেছেন প্রতিষ্টানটির নির্বাহী পরিচালক মো. আসাফউদ্দৌলা। বিষয়টি জানতে বৃহস্পতিবার তার মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া মেলেনি।
 
প্রতিষ্টানটির চেয়ারম্যান অজয় কুমার চক্রবর্তীকেও কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

জানতে চাইলে আরইবির সদস্য (প্রশাসন) মো. হাসান মারুফ বলেন, কোন জরুরি অবস্থা চলছে না। বিদ্যুৎ একটি অত্যাবশ্যকীয় সেবা। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন সেজন্যই ছুটি বাতিল করা হয়েছে। 

অনেকে বলছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলন দমানোর জন্যই এ ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সঙ্গে এই নির্দেশের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ মহামান্য আপিল বিভাগ যেকোন ট্রেড ইউনিয়ন সংক্রান্ত মামলা খারিজ করে দিয়েছে। পল্লী বিদ্যুতে কোন ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে না।’

অবশ্য আন্দোলনকারীরা কোন নির্দিষ্ট ব্যানারে আন্দোলন করছেন না। তাদের দাবির মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের কথাও বলা নেই। মূলত নিজেদের ন্যায্য সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলছেন তারা। 

বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে আরো যে ৫ টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি রয়েছে তারা তো কর্মীদের ছুটি বাতিল করেনি। তাহলে আরইবি কেন করলো? জবাবে হাসান মারুফ বলেন, তাদের গ্রাহক ৫০-৬০ লাখ। আর আমাদের প্রায় ৪ কোটি গ্রাহক। ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ দেই। ফলে তাদের আর আরইবির মধ্যে পার্থক্য আছে। তাছাড়া এখন গ্রীস্ম ও সেচ মৌসুম। এ কারণেই আমরা বিষয়টিতে জোর দিচ্ছি।’ 

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আরইবির এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে তৎপর হতে বলা হয়েছে। তবে অভ্যান্তরীণ কিছু ঝামেলার কারণে এমন আদেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ব্যবস্থাপনা ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে যৌক্তিক প্রস্তাব থাকলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দাখিল করার কথাও বলা হয় এতে।
 
যদিও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছে, অতীতে সেচ ও গ্রীস্ম মৌসুমে ছুটি বাতিলের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সাধারণত প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা বিশেষ পরিস্থিতিতে এ ধরনের নির্দেশনা জারি করা হয়। তাছাড়া ছুটি বাতিলের ওই আদেশে গ্রীস্ম বা সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা উল্লেখ নেই।

আরইবির আদেশে বলা হয়, উন্নত ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের অভূতপূর্ব উন্নয়ন কর্মকান্ড বাধা বিঘ্নহীনভাবে চলমান রাখা এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সমিতির সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করার পাশাপাশি কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতি প্রদান বন্ধ থাকবে। তবে যৌক্তিক কারণ থাকলে তা বিবেচনা করা যাবে।

গ্রাহক সেবা ও বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক সচল রাখতে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর অর্পিত দায়িত্ব কেউ পালন না করলে প্রয়োজনে তার চুক্তি বাতিল বা চাকরিচ্যুত করার কথা বলা হয় এতে।

যেকোন ধরনের কর্মবিরতি, উস্কানিমূলক কাজ ও বক্তব্যসহ অন্যান্য বেআইনি কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সমিতির প্রধানদেরকে। প্রয়োজনে বিভাগীয় এবং ফৌজদারি মামলা করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই অফিস আদেশে।

এদিকে মতবিনিয়ম সভা সংক্রান্ত দ্বিতীয় আদেশে, কী কারণে এই সভা ডাকা হচ্ছে তার কোন উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া এত স্বল্প সময়ের নোটিশে নিকট অতীতে এ ধরনের কোন সভার আয়োজন করা হয়নি বলেও জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা। তাছাড়া বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করতে সবার ছুটি বাতিল এবং কর্মস্থল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পরপরই কেন ১৬০ জন কর্মকর্তাকে ঢাকায় মতবিনিময় সভায় যোগ দিতে বলা হলো তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এটা অনলাইনেও হতে পারতো। কারণ বিভিন্ন অফিসের মত আরইবিতেও এখন অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের সভার আয়োজন করা হয়।

এদিকে এজেন্ডা ছাড়াই হঠাৎ ডাকা সভায় অংশ নিতে বেশ কিছু শর্ত দিয়ে আরইবির চেয়ারম্যানকে বৃহস্পতিবার রাতে লিখিতভাবে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা।

শর্তের মধ্যে রয়েছে— মতবিনিময় সভা কি সংক্রান্ত সে বিষয়ে পরিস্কার করা, দাবি দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানোর দায়ে যাদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার, প্রতিটি সমিতি থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে কমপক্ষে ১০ জন করে প্রতিনিধিকে সভায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া এবং ওই সভায় শুধুমাত্র আরইবির চেয়ারম্যান এবং সরকার বা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকবেন।

মূল প্রতিষ্ঠান, নিয়োগকারী কর্মকর্তা, চাকরির যোগ্যতা এক হওয়া সত্বেও সুযোগ-সুবিধা বিচেনায় আরইবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে নানা বৈষম্য। আরইবির কিছু কর্মকর্তা নিজেদের সুবিধার জন্য বছরের পর বছর ধরে এই বৈষম্য জিইয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

ন্যায্য দাবি আদায়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আরইবিকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হলেও সমিতির নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকা আরইবি কোন সমাধান না করে উল্টো একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ তুলেছেন।

তাদের দাবি, আরইবির দ্বৈতনীতির কারণে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত কর্মীরা একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও পদ-পদবি, বেতন-ভাতা ও বোনাসসহ পদোন্নতির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –