• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

নতুন বছরে আলোচনায় থাকবে মার্কিন রাজনীতি

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ জানুয়ারি ২০২১  

গত নভেম্বরের নির্বাচনের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অশ্চিয়তা দেখা দিয়েছিল। সেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার এখনো অবসান হয়নি। নতুন বছরে আরো বেশি শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দুই মাসের বেশি সময় পার হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরাজয় মেনে না নিয়ে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জয় আটকে দিয়ে ক্ষমতায় থাকার জন্য তিনি এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আগামী বুধবার ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গণনা করে বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জয়ী ঘোষণা করবে মার্কিন কংগ্রেস। এই প্রক্রিয়াকে আটকে দিতে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের প্ররোচিত করছেন ট্রাম্প। ইতিমধ্যে প্রতিনিধি পরিষদের ১৪০ জন সদস্য ও এক ডজনের বেফশ রিপাবলিকান সিনেটর জানিয়েছেন তারা বাইডেনের জয় নিয়ে আপত্তি তুলবেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, যিনি সিনেটের চেয়ারম্যান, তিনিও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। এদিন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বড় বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন ট্রাম্পের সমর্থকেরা। ট্রাম্প নিজেও ঐ বিক্ষোভে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, কংগ্রেসে কিংবা এর বাইরে এ ধরনের বিশৃঙ্খলায় বাইডেনের জয় ঘোষণা কিছুটা বিলম্বিত হবে, তবে নির্বাচনের ফলে কোনো পরিবর্তন হবে না। আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন জো বাইডেন।

নতুন বছরে পরিবর্তনের অঙ্গীকার থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক উত্তেজনার রেশ রয়ে গেছে। মার্কিন রাজনীতি বছর জুড়েই আলোচনায় থাকবে, একই সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যাবে। আলজাজিরার এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছাড়বেন। তাকে নিয়ে অথবা তাকে ছাড়াই রিপাবলিকান পার্টিকে সামনে অগ্রসর হওয়ার পথ খুঁজতে হবে। অন্যদিকে ক্ষমতা গ্রহণের পর রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রে শুধু রিপাবলিকানদের নয়, নিজ দল থেকেও বিরোধিতার মুখোমুখি হতে পারেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

নতুন প্রশাসনের প্রথম ১০০ দিন নজরে থাকবে সবার। এই সময়ে বাইডেনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি প্রথম দিন থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক নীতি পরিবর্তনে কাজ করবেন। তবে করোনা মহামারি মোকাবিলায় তার প্রশাসনের পদক্ষেপেই বিশেষভাবে নজর থাকবে সবার। ইতিমধ্যে তিনি জানিয়েছেন, মার্কিনীদের মাস্ক ব্যবহারের আহ্বান জানাবেন। প্রথম ১০০ দিনে তার প্রশাসন ১০ কোটি মার্কিনীকে টিকা দেওয়ার উদ্যোগ দেবেন। বেশির ভাগ স্কুল এই সময়ে খুলে দেবেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় আবারও যোগ দেবে যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অতীত ইতিহাসে পরিণত হবে বলে অনেকবারই ইঙ্গিত দিয়েছেন বাইডেন। তিনি মার্কিন মিত্রদের সম্পর্কে আস্থা ফেরাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বাইডেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও যুক্ত করবেন বলে জানিয়েছেন। ২০১৭ সালে এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প। অভিবাসন ও জলবায়ু নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু নির্বাহী আদেশও বাতিল করবেন বাইডেন। এছাড়া বাইডেন করোনা মহামারির ক্ষতি পোষাতে আরো বেশি অর্থ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ডেমোক্র্যাটরা নতুন বছরে হোয়াইট হাউজ ও প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নেবে। তবে সিনেটে তাদের নিয়ন্ত্রণ আসছে না। যদি জর্জিয়ার নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা দুটিতে জেতে, তাহলে সিনেটে তাদের আসন ৫০-৫০ হবে। আর একটিতে হারলেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে রিপাবলিকানদের। অন্যদিকে প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা গত ৯০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এ অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ ও আইন পাশের ক্ষেত্রে চরম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে বাইডেনকে। দুই দলের ঐকমত্যে সরকার চালানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সেটা সহজ হচ্ছে না। বাইডেন প্রশাসন কোন নীতি অনুসরণ করে অগ্রসর হবে, তা নিয়ে ডেমোক্র্যাট দলের মধ্যে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলে যুব প্রগতিশীলদের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর তারা অনেক বেশি সরব। যারা দলকে ‘ফার লেফট’ করার চেষ্টা করছেন। ফলে বাইডেন প্রশাসনকে অনেক নীতির ক্ষেত্রে দলীয় বিরোধিতার মুখেও পড়তে হতে পারে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর রিপাবলিকান পার্টিতেও কোন্দল দেখা দিতে পারে। অনেকে মনে করেন, ২০২৪ সালে ট্রাম্প আবারও প্রার্থী হবেন। আবার দলের অনেকেই ট্রাম্প যুগের অবসান চাইছেন। তবে সন্দেহ নেই, ট্রাম্পের বড় প্রভাব রিপাবলিকান পার্টিতে থাকবে। কারণ তিনি এবারের নির্বাচনে ৭ কোটির বেশি ভোট পেয়েছেন। কট্টর রক্ষণশীলদের কাছে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। যে কারণে নতুন বছরে মার্কিন রাজনীতিতে উত্তেজনা দেখা যাবে বছর জুড়ে।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –