• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

কোয়েল পাখির খামার করে সফল ঠাকুরগাঁওয়ের জাহিদ

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

ঠাকুরগাঁও শহরের শাহপাড়ার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। শহরের হাজিপাড়ায় বিসমিল্লাহ ড্রাইওয়াশের দোকান দিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। করোনায় লকডাউন থাকায় দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ রাখতে হয় তাকে। আয়ের পথ না থাকাই কোয়েল পাখি পালনের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অবশেষে কোয়েল পাখির খামার করে জাহিদ সফল হয়েছেন। এই উদ্যোক্তা খামার করে নিজে যেমন সফল হয়েছেন তেমনি অনেকের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করেছেন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালান্দর এলাকায় ১ একর জমি লিজ নিয়ে বগুড়ায় চাচার কাছ থেকে ৩৫০০টি কোয়েল পাখি নিয়ে আসেন তিনি।

‘বিসমিল্লাহ কোয়েল পাখির খামার’ নাম দিয়ে পাখির খামার শুরু করেন উদ্যোক্তা জাহিদুল ইসলাম। প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যয় করে শুরু করেছিলেন খামারটি। খামার দেয়ার পরে ঠান্ডার কারণে তার বেশ কিছু পাখি মারা যায়।

এরপরও হাল ছাড়েননি জাহিদ। অবশেষে খামার দেওয়ার ২ মাস পরেই কোয়েলের ডিম বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন এই উদ্যোক্তা। পাখির ডিম ও পাখি বিক্রি করে বেশি লাভের আশায় রয়েছেন এই উদ্যোক্তা। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে খামারের পরিধি বৃদ্ধি করতে পারলে আরও অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে আশাও করছেন উদ্যোক্তা জাহিদ।

বর্তমানে জাহিদের খামারে ২৫০০ থেকে ৩০০০ কোয়েল পাখি রয়েছে। প্রতিদিন খামার থেকে ২২০০ থেকে ২৩০০ ডিম সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হচ্ছে। আর এই খামারের পরিচর্যা করছেন পাঁচজন কর্মচারি। যার ফলে তাদেরও তৈরি হয়েছে একটি আয়ের উৎস।প্রতিদিন খামারে পাখির জন্য চার বেলায় ৭০ কেজির মতো খাবার দেয়া হয়। দিনে ২ বার ও রাতে ২ বার করে মোট ৪ বার লেয়ার ফিড ৭০ শতাংশ ও সোনালি স্টেটার ফিড ৩০ শতাংশ পরিমাণে খাবার দেয়া হয় পাখিগুলোকে।

এই খামারে কাজ করে নিজে চলতে পারছেন এবং সংসারও ভালোভাবে চালাতে পারছেন বলে জানান, খামারে কর্মরত আলী হোসেন। তিনি বলেন, এখানে পাখিগুলো লালন-পালন করতে আমার অনেক আনন্দ লাগে। আমি ভবিষ্যতে এমন একটি কোয়েল পাখির খামার দিতে চাই।

খামারের ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা শরিফুল ইসলাম শরিফ জানান, খামারটি প্রথমে ৩ হাজার ৫০০ পাখি নিয়ে শুরু করা হয়েছিল। ঠান্ডার কারণে কিছু পাখি মারা যায়। এখন প্রায় ২৫০০ মতো পাখি আছে। এতে পাখিরা যে পরিমাণ ডিম দেয় তা বিক্রি করে আমাদের বেতন ভাতা দিয়ে মালিকেরও কিছু আয় হয়।

তিনি আরও জানান, স্বল্পপরিসরে খামারটি চালু করলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটিকে আরও বড় আকারে করা যাবে। পাশাপাশি আমাদের দেখে আরও অনেকে খামার করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে।

কোয়েল পাখির খামার করে সমাজে বেকারত্ব দূর করা যাবে বলে জানান, এই সফল উদ্যোক্তা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, করোনাকালে হতাশ হয়ে গেলেও আমার চাচার পরামর্শ নিয়ে এই কোয়েল পাখির খামার শুরু করি।

প্রথমদিকে মাংসের জন্য পাখি লালন-পালন করলেও সেটার তেমন চাহিদা না থাকায় পরে ডিম উৎপাদনের জন্য পাখি পোষা শুরু করি। এখন ডিম বিক্রয় করে আমার এখানে কর্মচারীদের বেতন দিয়ে আমারও সংসার ভালোভাবে চলছে।

যারা কোয়েল পাখির খামার করতে চান বা করতে আগ্রহী তাদের জন্য পরামর্শ হিসেবে তিনি আরও বলেন, তারা বাড়তি কিছু না করতে পারলেও এই আয় দিয়ে তাদের সংসার চলবে। আমি তো জমি লিজ নিয়ে খামার করেছি তাই আমার খরচ বেশি হয়। কেউ নিজের জমিতে খামার করলে তারা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন। তবে খামার দেওয়ার আগে ডিম বা পাখি বিক্রি করার পথ তৈরি করতে হবে বলে পরামর্শ তার।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোয়েল পাখির খামার একটি লাভজনক ব্যবসা। যদি এটি কেউ করেন তাহলে তার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাদের মাধ্যমে আরও নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। যেটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই জরুরি। তবে যে অঞ্চলে এটির ভোক্তা বেশি সেই অঞ্চলে এমন খামার করলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, যারা এমন খামার করছেন বা করতে চান তাদের আগে আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত করি। এছাড়াও খামারের জন্য চিকিৎসা দিয়ে থাকি। পাশাপাশি সেগুলো আমরা মনিটরিং করি।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, জাহিদুলের মতো আমরা যদি আরও নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে পারি তাহলে দেশে বেকারত্ব দূরীকরণে এটি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –