• সোমবার ১৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৯ ১৪৩১

  • || ০৪ জ্বিলকদ ১৪৪৫

জ্যাকের কিছু অজানা অধ্যায়, যা জানা দরকার

কুড়িগ্রাম বার্তা

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০১৮  

হলিউড অভিনেতা ‘লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও’। তবে এই নামে তিনি যতটা পরিচিত না তার চেয়ে বেশী চেনে তাকে ‘জ্যাক’ নামেই। কারণ তার সবচেয়ে জনপ্রিয় ছবি ‘টাইটানিক’, এতে তিনি জ্যাক নাম চরিত্রে অভিনয় করে ফাটিয়ে দিয়েছিলেন। এই ছবির পর তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন সকলের মনের গভীরে।‘লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও’র মা ছিলেন চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির এক বিশাল ভক্ত। জ্যাক যখন পেটে, তখন তিনি (মা) একদিন বেড়াতে গিয়েছিলেন এক মিউজিয়ামে। ওই সময় ভিঞ্চির আঁকা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই পেটের ভেতর থেকে নড়ে উঠেছিল জ্যাক।ঠিক তখনই তিনি মনে মনে ভেবে রেখেছিলেন, ছেলে হলে তিনি ভিঞ্চির নামের সঙ্গে মিলিয়েই তার সন্তানের নাম রাখবেন। তাতে যদি সত্যি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মতো ছেলে বিশ্বখ্যাত হয়! মায়ের সেই আশা পূরণ হয়েছিল!

ছেলেটা ঠিকই তার কর্মে, আপন প্রতিভায় জয় করে নিয়েছে বিশ্বের কোটি মানুষের হৃদয়। পর্দায় তাকে দেখে প্রেমে পড়েছে কোটি কোটি তরুণ-তরুণী সিনেমাপ্রেমীরা। ১৯৭৪ সালে এগারোই নভেম্বরে জন্ম নেয় এই বিশ্ববিখ্যাত অভিনেতা। সকলের প্রয় অভিনেতা হলেও তার জীবনে ঘটেছিল কিছু ঘটনা যা অনেকের অজানা।বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য থাকছে আজ অজানা সেই কাহিনী, যা ঘটেছিল বিখ্যাত এই হলিউড তারকার জীবনে।লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও তথা জ্যাককে এগারো বছর বয়সে নাম বদলে ফেলার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। সেই সময় তিনি একটা পার্টটাইম চাকুরীর চেষ্টা করছিলেন।কিন্তু যে এজেন্টের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন, তারা তাকে বলেছিল আমেরিকান কোন নাম নিতে। এবং সেই এজেন্ট একটা নামও দিয়েছিলেন- লেনি উইলিয়ামস। কিন্ত ডি ক্যাপ্রি এমন আজব প্রস্তাবে একদমই রাজী হননি। তিনি তার নামই বড় হয়েছেন।

লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও’র অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার রোগটি আজীবনের সঙ্গী। সে কারণে ‘ইনসেপশন’ তারকাবদ্ধ জায়গায় বেশী সময় থাকতে পারেন না তিনি।স্পাইডারম্যানের তারকা টবি ম্যাগায়ার ও অভিনেতা কেভিন কনোলে এবং জাদুশিল্পী ডেভিড ব্লেইন ছিলেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও’র একদম ছোটবেলার বন্ধু। তাদের গ্রুপের একটি নামও ছিল ‘পুশি পোজ’। যা হয়ত অনেকের অজানা।এই অভিনেতা ডি ক্যাপ্রিও কখনো মাদক সেবন করেননি। সেই কারণে তার ‘দ্য ওলফ অব ওয়াল স্ট্রীট’ সিনেমায় মাদকাসক্তের অভিনয় ফুটিয়ে তোলাটা বিশাল এক চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু সিনেমা মুক্তির পরে দর্শক অবাক হয়ে গিয়েছিলেন তার অভিনয় দেখে। কিভাবে সম্ভব ছিল?তার জনপ্রিয় ছবি ‘টাইটানিক’ বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাবার পরে তার চুলের স্টাইলটা দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এমনকি সেই সময়ে আফগানিস্তান ছিল তালেবানদের শাসনে, তারা ২৮ জন নাপিতকে গ্রেফতার করেছিল। শুধুমাত্র জ্যাকের মতো করে চুল কাটিয়ে দেয়ার অপরাধে।

আজ থেকে দশ বছর আগে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও বেলিজে ১০৪ একরের একটা দ্বীপ কিনেছেন। এমনকি সেটিকে বিশ্বের প্রথম পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক দ্বীপ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা পরিবেশ দূষণ মূলক ব্যপারগুলো নিয়ে তিনি দারুণ চিন্তাশীল। পানির অপচয় রোধ করার ব্যাপারে বার্তা দিয়ে থাকেন সবসময়ই। এমনকি তিনি নিজেও এই সচেতনতা প্রচারের জন্য সপ্তাহে মাত্র একবার গোসল করেন।ডি ক্যাপ্রিওর ‘জ্যাঙ্গো আনচেঞ্জড’ সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে বেশ বিব্রত পরিস্থিতির শিকার হন। স্যামুয়েল এল জ্যাকসনের মতো বড় অভিনেতার সামনে কিভাবে গালিগালাজ সমৃদ্ধ সংলাপগুলো উচ্চারণ করবেন, এটা নিয়ে বেশ ভাবনায় ছিলেন তিনি। এই সিনেমারই একটা দৃশ্যে অভিনয়টাকে বাস্তবের মতো ফুটিয়ে তুলতে নিজের হাত কেটে রক্তাক্ত করেছিলেন এই বিখ্যাত অভিনেতা।ডি ক্যাপ্রিও বিশ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে আমেরিকান সাইকো সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে শিডিউল জটিলতায় কারণে শেষ পর্যন্ত সরে যেতে হয় তাকে। এরপর তার জায়গায় সিনেমাটিতে অভিনয় করেছিলেন ক্রিশ্চিয়ান বেল।

অতঃপর আবারো পরিচালক তারান্তিনো ‘ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস’ সিনেমায় তাকে নাজী কর্ণেল ল্যান্ডার চরিত্রে নেয়ার কথা ভেবেছিলেন। তবে ডি ক্যাপ্রিও সিনেমাটা করতে রাজী হননি।গেলো ২০০৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডি ক্যাপ্রিও রিপাবলিকান প্রার্থী জন কেরিকে সরাসরি সমর্থন দিয়েছিলেন। তিনি মোট এগারোটা রাজ্যে ঘুরেছিলেন এবং বক্তব্য রেখেছিলেন অন্তত বিশ জায়গায়। সবসময় তার বক্তৃতার মূলভাব একটাই ছিল, পরিবেশ রক্ষায় বুশ প্রশাসনের নির্লিপ্ততা, যা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে বারাক ওবামার প্রচারণায় ২৮০০ ডলার দান করেছিলেন।দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘ব্লাড ডায়মন্ড’ সিনেমার শুটিং চলাকালে তিনি সেখানকার একটা ছোট্ট কণ্যাশিশুকে দত্তক নিয়েছিলেন। একটি এতিমখানায় মেয়েটাকে দেখেছিলেন লিওনার্দো। জানা গেছে, এখনো প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা সেই মেয়েটির নামে পাঠান, মাঝেমধ্যে যোগাযোগও করেন তিনি।

লিওনারদকে নিয়ে অস্কার জয় প্রসঙ্গে কম কথা হয়নি, গোটা বিশ্ব জুড়ে। বারবার নমিনেশন পেয়েও কখনো বিজয়ীর মুকুট তার ঘরে আসতো না। সেই সময় এমন অতৃপ্তিতে তার ভক্তরা অনেক বছর ভুগেছে। অবশেষে, ইনারিতু’র ‘দ্য রেভেনেন্ট’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্যে সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার ঘরে তুলেছেন এই বিখ্যাত তারকা। এমনকি সেদিন আক্ষরিক অর্থেই অন্তর্জালের বিশাল দুনিয়া ‘ডি ক্যাপ্রিও’ময় হয়ে উঠেছিল।অস্কার বিজয়ের ঘোষণা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে শুরু হয় হুলস্থুল অবস্থা। প্রতি মিনিটে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টুইট হয়েছে। যা এখনো রেকর্ড হয়ে আছে বিশ্বজুড়ে।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –