• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

৫০ বছর ধরে প্যাডেল রিকশা চালান কুড়িগ্রামমের ফজলুল হক 

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

কুড়িগ্রাম সদরের ফজলুল হক (৭০) প্যাডেল চালিত রিকশার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন প্রায় ৫০ বছর ধরে। ১৯৭২ সালে কেনা একটি প্যাডেল চালিত রিকশা চালিয়ে সংসারের হাল সামলাচ্ছেন ৭০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ।

বয়সে বৃদ্ধ হলেও নিজেকে বয়সের কাছে হার না মানানো এই ব্যক্তির বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পৌরসভার এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডের টেক্সটাইল মিল মোড় এলাকায়। ২০ বছর বয়সে ১৯৭২ সালে ৫০০ টাকা দিয়ে একটি প্যাডেল চালিত রিকশা কিনে চালাতে শুরু করেন তিনি। সেই রিকশাটাই এখনও চালিয়ে সংসারের হাল সামলাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম শহরের পৌর বাজার এলাকায় যাত্রীর অপেক্ষায় থাকাকালীন আলাপচারিতায় তিনি জানান, দুই ছেলে এক মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে সংসার তার। দুই ছেলে বিয়ের পর আলাদা হয়েছে অনেক আগেই। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর বিবাহবিচ্ছেদ হলে বাবার বাড়িতেই চলে আসে মেয়ে। এরপর থেকে মেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে আলদাভাবে সংসার চালানোর দ্বায়িত্ব পরে তার উপর। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আসে তা দিয়েই কোনমতে সংসার চালান তিনি।

তিনি বলেন, সারাদিন ব্যাটারিচালিত রিকশা থাকে রাস্তায়, তাই আমার গাড়িতে সহজে কেউ উঠতে চায়না। তাই আমি বিকেলে রিকশা নিয়ে বের হয়ে রাত ৩ টা পর্যন্ত চালিয়ে বাড়ি যাই। যখন ১৯৭২ সালে প্রথম রিকশা চালাই তখম দিনে ১৫ থেকে ২০ টাকা আয় হতো। কয়েকবছর আগ যখন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ছিলোনা তখন দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হতো। কিন্তু এখন ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা আয় হয়। প্রায় সব জিনিসের দাম বাড়ছে, তার এত অল্প টাকায় সংসারের জন্য খরচ কিনতে সমস্যা হয়। এজন্য রাতজেগে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করি। রাতে রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটো কম থাকে। যতদিন বেঁচে আছি এভাবেই সংগ্রাম করে চলতে হবে। সরকারের দেয়া বয়ষ্ক ভাতা এবং প্রতিদিনের সামান্য আয় দিয়েই সংসার অনেক হিসেব করেই চালাতে হয় বলে জানান তিনি।

রিকশা চালানোর ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে অষ্টম শ্রেণীর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংসার চালানোর জন্য ২০ বছর বয়সে বাবাকে সাহায্য করার জন্য আমাকে এই পেশায় আসতে হয়। তখন ৫০০ টাকা দিয়ে এই রিকশাটি কিনি যা আজও চলছে। মাঝেমধ্যে মেরামত করতে হয়। এই প্যাডেল চালিত রিকশা চালিয়ে শারীরিক ব্যায়ামের কারণে তিনি এই বয়সেও অন্যান্যদের থেকে সুস্থ এবং কর্মক্ষম আছেন বলে দাবি করেন তিনি।

জীবনের প্রায় শেষপ্রান্তে এসেও এই কাজে বেশ সন্তুষ্ট তিনি। পুরাতন রিকশা ছেড়ে একটি নতুন প্যাডেল চালিত রিকশার মুখ দেখার স্বপ্ন দেখলেও টাকা জমিয়ে কেনার সামর্থ্য হয়নি তার। 

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –