• মঙ্গলবার ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৩০ ১৪৩১

  • || ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

এসএসসিতে জিপিএ-৫, স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২৩  

 
নাম দিপা রাণী। বাবা থেকেও নেই। মায়ের সঙ্গে বসোবাস করেন ভূমিহীন ও অসহায়দের বাসস্থান আবাসনে। এবার তিনি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। তার স্বপ্ন তিনি বিসিএস ক্যাডার হবেন।

বলছি, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের নীল কুমর নদী ও ফুলসাগর সংলগ্ন নির্মিত ভূমিহীন ও অসহায়দের বাসস্থান ফুলসাগর আবাসন প্রকল্পে আশ্রয় নেয়া দিপা রাণীর কথা। তার মায়ের নাম সবরী বালা।

জানা গেছে, সবরী বালার বিয়ের পর দিপা রাণী যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন দিপা রাণীর বাবা পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ এলাকার রামকৃষ্ণ গা ঢাকা দেন। দিপা রাণীর জন্মের পর তার বাবা রামকৃষ্ণ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ পুরোদমে বন্ধ করে দেন। এতে দিপার মা সবরী বালা দিপাকে নিয়ে পড়েন চরমে বিপাকে।

কোলের শিশু দিপার ভোরণপোষণ নিয়ে সবরী বালা চলে আসেন ভূমিহীন ও অসহায়দের বাসস্থান আবাসনে। এখানে এসে সবরী বালা দিপার নানা মাখন চন্দ্র দাস ও নানি সাবিত্রী রাণীর সহযোগিতায় শুরু করে জীবন সংগ্রাম। এনজিও থেকে টাকা ঋণ নিয়ে আবাসনে হাঁস, মুরগি, কবুতর পালন শুরু করেন।

এরপর ধীরে ধীরে ছাগল পালন করে একটি উপার্জনের পথ খুঁজে পান সবরী বালা। পশু পাখি পালনের মাঝে বড় হতে থাকে কোলের শিশু দিপা রাণী। এরপর সবরী বালা স্বপ্ন দেখতে থাকেন দিপাকে উচ্চ শিক্ষিত করার। তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি আবাসনে হাঁস, মুরগি, কবুতর পালনের টাকায় দিপা রাণীর লেখাপড়ার খরচ চালান।

এরই মধ্যে ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে দিপা রাণী বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ অর্জন করলে মা সবরী বালার বুক ভরে যায় আনন্দে। মেয়ে দিপাও তার মাকে জানাস তিনি একজন প্রশাসনিক বিসিএস ক্যাডার হবেন। তার মায়ের কষ্টের অবসান ঘটাবেন। দেশের সেবা করবেন।

আবাসনের বাসিন্দা পরেশ চন্দ্র রায় বলেন, ভূমিহীন ও অসহায়দের বাসস্থান আবাসনে বসোবাসকারী দিপা রাণী আমাদের গর্ব। দিপা রাণী বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

দিপা রাণীর নানি সাবিত্রী বালা বলেন, আমি ফুলবাড়ী উপজেলা ভূমি অফিসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করি। এই অফিসের সহকারী কমিশনার স্যার হলেন মহিলা মানুষ। তিনি ম্যাজিস্ট্রেট। আমার নাতনি দিপা রাণী এই ম্যাজিস্ট্রেট হতে চায়। সবার সহযোগিতা পেলে আমার নাতনি ম্যাজিস্ট্রেট হতে পারলে আমার বুক ভরে যাবে।

অদম্য মেধাবী দিপা রাণী বলেন, আমি শিশু বেলায় আমার বাবাকে দেখেছি। এখন বড় হয়েছি। বাবাকে দেখছি না। বাবাকে দেখলে হয়তো চিনবো না। কারণ আমার বাবা ছোট থেকেই আমার খোঁজ নেয়নি।

তিনি আরো বলেন, মায়ের কষ্টের টাকা ও স্থানীয় শিক্ষকদের সহযোগিতায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় আমি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করতে পেরেছি। আমার জীবনের স্বপ্ন আমি লেখাপড়া শেষ করে একজন বিসিএস ক্যাডার (প্রশাসন) হতে চাই।

দিপা রাণী বলেন, ভালো কলেজে ভর্তি হতে হলে লেখাপড়ার খরচ বেশি লাগবে। ওখানে যদি আমাকে স্যাররা প্রাইভেট বা কোচিংয়ে সহযোগিতা অর্থাৎ কম খরচ না নেন? তাহলে আমার স্বপ্ন কীভাবে পুরণ হবে? এ অবস্থায় দিপা রাণী তার স্বপ্ন পূরণের জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও দেশ-বিদেশের দানশীল মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।

এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাই রকেট বলেন, অদম্য মেধাবী দিপা রাণী এসএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করার কৃতিত্বে আমি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করছি।

তিনি আরো বলেন, দিপা রাণী যেন কলেজে বৃত্তি আওতায় আসতে পারে সে বিষয়ে আমি সহযোগিতা করবো। পাশাপাশি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের আওতায় অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আসলে দিপা রাণীকে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।

এ ব্যাপারের ফুলবাড়ী ইউএনও ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মলিহা খানম বলেন, আমরা এসব অদম্য মেধাবীর সহযোগিতায় এগিয়ে আসবো। এ ক্ষেত্রে দিপা রাণীর পক্ষ থেকে একটি আবেদন ইউএনও অফিস বরাবর করা হলে আমরা তাকে সহযোগিতার বিষয়টি দেখবো।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –