• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

হারানোর ২৫ বছর পর ফিরলেন মাইদুল, মতিয়ারের পথ চেয়ে বাবা

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

মায়ের সঙ্গে ঢাকা গিয়ে হারিয়ে যান দুই ভাই। প্রায় ২৫ বছর পর ছোট ভাই মো. মাইদুল ইসলাম (৩০) ফিরে এসেছেন। তবে বড় ভাই মতিয়ার রহমান (৩২) এখনো নিখোঁজ। মাইদুল ইসলামকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা এলাকাবাসী।

মাইদুল ইসলাম কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের গোপালপুর এলাকার উত্তর সরকারটারি গ্রামের মো. আব্দুস সামাদের ছেলে।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের গোপাল পুর উত্তর সরকারটারি গ্রামে ফিরে যান মাইদুল। দীর্ঘ ২৫ বছর পর মাইদুল ইসলামের আসার খবর পেয়ে তাকে দেখতে যান উৎসুক এলাকাবাসী।

জানা গেছে, মো. আব্দুস সামাদ ও মোছা. বানেছা বেগম দম্পতির দুই ছেলে মাইদুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমান। তাদের বয়স যখন ৫-৭ বছর তখন পারিবারিক দ্বন্দ্বে মাইদুল ইসলামের বাবা মায়ের সম্পর্ক বিছিন্ন হয়। অন্যত্র বিয়ে করেন মো. বানেছা বেগম। পরে বানেছা বেগম মাইদুল ও মতিয়ার রহমানকে নিয়ে প্রথমে রংপুর ও পরে গাইবান্ধা শেষে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় বানেছা বেগম দ্বিতীয় স্বামীকে নিয়ে সংসার পাতলেও দুই ছেলের ঠাঁই হয় অন্যের বাড়িতে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে চুরির অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয় দুই ভাইকে। সেই থেকে দুই ভাই নিখোঁজ। অনেক খোঁজাখুঁজি পর ছেলেদের পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন মা।

তবে আশা ছাড়েননি বাবার পরিবারের লোকজন। অনেক খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আপন ঠিকানা’র সহযোগিতায় মাইদুল ইসলামকে খুঁজে পেয়েছে তার পরিবার। তবে বড় ভাই মো. মতিয়ার রহমানের সন্ধান মেলেনি এখনো। মাইদুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমানের বাবা মো. আব্দুস সামাদের বিশ্বাস নিশ্চয় কোনো একদিন তার বড় ছেলেকেও খুঁজে পাবেন তিনি।

মাইদুল ইসলামের চাচা মো. বদিউজ্জামাল বলেন, মাইদুল ও মতিয়ার আমার ভাতিজা। ওরা দুজনে ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে প্রায় ২৫ বছর আগে হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে আমরা তাদের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আল্লাহপাকের অশেষ মেহেরবান মাইদুলকে ফিরে পেলাম। আশা করি কোনো একদিন মতিয়ারকেও খুঁজে পাবো।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. নুর হোসেন বলেন, মাইদুল ও মতিয়ারের ৫-৬ বছর বয়সে ওদের মা দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। কিছু দিন পর শুনি ওরা দুই ভাই হারিয়ে গেছে। প্রায় ২৫ বছর পর ছোট ভাই মাইদুল ফিরে এলো, মতিয়ারকে পাওয়ার আশায় আছে তার পরিবার।

মাইদুল ইসলাম বলেন, মা আমাদের দুই ভাইকে অন্যের বাসায় রেখেছিলো। সেখানে চুরির অপবাদ দিয়ে বাড়ির মালিক আমাদের দুই ভাইকে মারপিট ও অত্যাচার করে বেঁধে রেখেছিলেন। পরে ওই বাড়ির মেয়ে আমাদের ছেড়ে দিয়ে বলে তোমরা দুজন চলে যাও। পরে আমি ভাইসহ ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে মাকে অনেক খুঁজেছি। মা কোথায় থাকতো ঠিক মনে পড়ছিল না। ভাই আমাকে ছেড়ে মাকে খুঁজতে গিয়ে তাকেও হারিয়ে ফেলি।

তিনি আরও বলেন, আমার বড় আশা ছিল বাবা-মাকে ফিরে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় ভাইকেও দেখতে পাবো। বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরবো। কিন্তু বাবা-মাকে পেলাম, ভাই কোথায় আছে জানি না। বাবা-মাকে ফিরে পেয়ে কী শান্তি পেয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।

মাইদুল ইসলামের বাবা মো. আব্দুস সামাদ বলেন, আমার দুই ছেলেকে হারিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ওর মায়ের কাছে লোক পাঠিয়েছিলাম। একবার বলতো ছেলে দুটো হারিয়ে গেছে। আবার বলতো মারা গেছে। আমি প্রতিদিন তাহাজ্জদের নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইছি। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। ছোট ছেলে মাইদুল, বউমা মাহমুদা ও নাতিদের খুঁজে পেয়েছি। মনে একটু ঠাঁই পেয়েছি। আল্লাহপাক যদি বড় ছেলে মতিয়ারকে ফিরে দেন আমার আর কোনো চাওয়া পাওয়া নাই।

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ বলেন, সন্তোষপুর ইউনিয়নে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার খবর জানতে পেরেছি। সেখানে আব্দুস সামাদ নামে এক বাবার দুই সন্তান হারিয়ে গেছে। দীর্ঘ ২৫ বছর পর এক ছেলে বাড়িতে ফিরে এসেছেন। মাইদুল ইসলাম যদি চান তাহলে সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় আনাসহ পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে।

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –